শান্তিগঞ্জে পোল্ট্রি ফার্মের দুর্গন্ধে দুর্ভোগে প্রতিবেশী
ইয়াকুব শাহরিয়ার, ইয়াকুব শাহরিয়ার,
নিজস্ব প্রতিবেদক
শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের গাগলী গ্রামের ভিতরে ব্রয়লার মুরগির ফার্মের দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন প্রতিবেশীরা। গ্রামের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায়, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্রয়লার মুরগির খামারের এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী প্রতিবেশী ওয়াসিম উদ্দিন।
অভিযোগপত্রে ওয়াসিম উদ্দিন বলেছেন, গাগলী গ্রামের ভিতরে, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্রয়লার মোরগের খামার করেন একই গ্রামের নবাব মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান। খামার করার পর থেকেই সে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা বাড়ির আশপাশে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে। বার বার বলার পরও সে কথার কর্ণপাত করে না। তার যদি খামার করারই হয় আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু সে তার মোগরের ময়লা বাড়ির আশপাশে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করে। বার বার গ্রামের মানুষ নিয়ে তাকে নিষেধ করেছি। কিন্তু সে কোনোক্রমেই কথা শুনেনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,
ভূক্তভোগী মো. ওয়াসিম উদ্দিনের বসত বাড়ির পার্শ্ববর্তী ০৬ বছর ধরে একই গ্রামের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মৃত নবাব মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান একটি বড় পোল্ট্রি ফার্ম সেড নির্মাণ করে পোল্ট্রি মোরগের বাঁচ্চা লালন পালন করে আসছেন। অথচ তিনি নিজে তার পোল্ট্রি ফার্ম এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস না করে অন্যত্র বসবাস করেন। নিয়মমোতাবেক জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ৫শ’ গজ দূরত্বে মুরগি ও ডিম উৎপাদন করার জন্য ফার্ম করার নিয়ম থাকলেও তিনি তা না মেনে প্রতিবেশীর বসত ঘরের সীমানা ঘেষে তা নির্মাণ করেছেন। এতে ভূক্তভোগী ও আশপাশের বসত বাড়ির শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ লোকজন পোল্ট্রি ফার্মের দুর্গন্ধের কারণে বসত বাড়ীতে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান তার পোল্ট্রি ফার্মের মোরগের বাঁচ্চা লালন পালনে ফার্ম এর পরিবেশ দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে নিচ্ছেন না কোন পদক্ষেপ। ফার্মের আশপাশে মোরগের বিষ্ঠা ও ময়লা আববর্জনা উন্মুক্ত জায়গায় রাখার ফলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়া ছাড়াও আশপাশে বসত বাড়ীতে বায়ুর সাথে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ ও জনমানুষের ক্ষতি হচ্ছে এবং শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ লোকজনও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অভিযুক্তের চাচা মুক্তার হোসেন, প্রতিবেশী সিরাজুল মিয়া, ফখরুজ্জামান, গুলজার আহমদ বলেন, এ পোর্ট্রি ফার্মের মোরগের বিষ্ঠার দুর্গন্ধে আমাদের বসত বাড়ীতে বসবাস করা প্রায় মুশকিল হয়ে পড়েছে। ফার্মের দুর্গন্ধে ও রোগ জীবানু ছড়িয়ে পড়ার কারণে আমাদের সহ আশপাশে বসবাসরত লোকজন ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দিন দিন রোগ বালাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনের বেশীর ভাগ সময়ে বসত ঘরে অবস্থান করতে পারি না। শুধু খাবার সময়ে বসত বাড়ীতে আসি। বর্ষা মাসে মেঘ বৃষ্টি হলে আরো বেশী দুর্গন্ধ ছড়ায়। এতে আমরা খুবই দুর্ভোগের মধ্যে আছি।
ভূক্তভোগী মোঃ ওয়াসিম উদ্দিন জানান, আমার বসত ভিটার লাগুয়া পোল্ট্রি ফার্ম স্থানের কারণে আমি পোল্ট্রি ফার্মের দুর্গন্ধে পরিবার নিয়া বসত বাড়ীতে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। এতে আমি সহ আমার পরিবারের লোকজন ও শিশুরা প্রায় অসুস্থ হয়ে রোগে আক্রান্ত হচ্ছি এবং আমার পরিবারে শ্বাসকষ্ট রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি মিজানুরকে তার ফার্মের ময়লা ও আর্বজন নিরাপদ জায়গায় ফেলতে ও ফার্মের দুর্গন্ধ না ছাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করি। সে কোন কথাই শুনে নাই। বরং আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী করার হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
পোলট্রি ফার্মের মালিক গাগলী গ্রামের নবাব মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পোল্ট্রি ফার্ম স্থাপন করা অবৈধ এটা আমি জানি। আমি চাই আমার পাড়া প্রতিবেশীকে নিয়ে চলতে। চাই না কারো কষ্ট হউক। আমি ধানের তোষ ফার্মের পাশে ফেললেও ফার্মের ময়লা, মোরগের বিষ্ঠা ও আবর্জনা দুরবর্তী জায়গায় নিরাপদ দুরত্বে ফালাই। এখন থেকে আশপাশে আর ফেলবো না।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। জনগণের বসবাসে বিঘ্ন ঘটবে এমন কোনো কাজ করা যাবে না। দুর্গন্ধ ছড়ায় কিংবা পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে এমন পোল্ট্রি ফার্ম জনবসতি থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে। পরবর্তীতে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


