আস্তমা গ্রামবাসীর স্বপ্নের বিদ্যালয় স্থাপনের প্রচেষ্টা
ইয়াকুব শাহরিয়ার, ইয়াকুব শাহরিয়ার,
নিজস্ব প্রতিবেদক
শান্তিগঞ্জ উপজেলার আস্তমা, কামরুপদলং, আসামপুর, সদরপুর, পাগলা মাদ্রাসাপাড়া, পার্বতীপুর, তালুকগাঁও, কামরুপদলং কান্দিগাঁও, সুলতানপুর ও জাঙ্গীরনগর এলাকাসহ জয়কলস ইউনিয়নের নাইন্দারপাড়ের বিশাল এলাকায় নেই কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ অনুমোদন থাকলেও আছে নানা ধরণের বাধ্য বাধকতা ও আসনের সীমাবদ্ধতা। এতে ভীষণ রকমের শিক্ষা সংকট ও ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর শঙ্কা বৃদ্ধির হুমকিতে পড়েছেন এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা। ২০২২ সালের আগে পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজে আসনের সীমাবদ্ধতা না থাকায় তেমন কোনো জটিল পরিস্থিতে পড়তে হয়নি উল্লিখিত গ্রামগুলোর শিক্ষার্থী-অবিভাবকদের। ২০২৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণাঙ্গ সরকারি কার্যক্রম শুরু হলে ও স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে আসন সংখ্যা সীমাবদ্ধতার কথা বলা হলে স্কুল পেতে ভীষণ সমস্যায় পড়েন এ অঞ্চলের বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিততে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আবারও জেগে উঠে আস্তমা গ্রামবাসীর মনে।
জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে আস্তমা গ্রামের প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে পঞ্চাশ হাল মৌঁজার ছনপুঁতায় একটি মাধ্যমিক বালিকা স্কুল প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন আস্তমা গ্রামের বাসিন্দা, কানাডা প্রবাসী সমাজ সেবক ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও তাঁর সহধর্মিণী ডা. সুলতানা ওয়াহিদ চৌধুরী। সে সময় ‘স্কুলের জন্য নির্ধারিত স্থান’ শিরোনামে একটি সাইনবোর্ডও টাঙিয়েছিলেন তাঁরা। সম্ভবত ২০২২ সালের প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় সাইনবোর্ডটি ভেঙে পড়েছিলো। নানান জটিলতায় এতদিন ডা. সাঈদ, তাঁর স্ত্রী ডা. সুলতানা ও আস্তমা গ্রামবাসীর মনের ভিতরের সেই লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন না হলেও নানামুখী ভর্তি জটিলতার মুখোমুখী হওয়ায় সেই পুরনো স্বপ্ন আবারও জেগে উঠেছে ডাক্তার দম্পতির মনে, আস্তমা গ্রামবাসীর মনে। তাই স্বপ্নের বাস্তবায়ন প্রচেষ্টার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় এই পরিদর্শন করেন তিনি। পরিদর্শনের সময় শান্তিগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. ফজলে রাব্বানী চৌধুরীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদের ভাতিজা নজরুল ইসলাম, তাঁর (ডা. সাঈদ) অপর ভাতিজা আঙ্গুর মিয়া, গ্রামের বাসিন্দা ও ইউরোপ প্রবাসী তোফায়েল আহমদ, ইসলামী ব্যাংক পাগলা বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. তাজুল ইসলাম, সমাজকর্মী হুমায়ুন কবির ও ইউপি সদস্য লিটন মিয়াসহ আরো অনেকে।
ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদের ভাতিজা নজরুল ইসলাম বলেন, আমার চাচা ও চাচী আমাকে নিশ্চিত করেছেন এখানে এক একর জায়গা দিবেন। এটা তাঁদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। নানান সমস্যার কারণে স্কুল নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। এখন আবারও আমরা স্কুল প্রতিষ্ঠায় তৎপরতা বাড়িয়েছি। আমার ডাক্তার চাচা-চাচী এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে ও জায়গা দানে সম্পূর্ণ একমত।
নজরুল ইসলামের এই বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন ডা. সাঈদের অপর ভাতিজা হাসান মাসুদ তারেক ও আঙ্গুর মিয়া। তারেক বলেন, চাচার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিলো তাঁর বাবা-মায়ের নামে এখানে একটি বালিকা স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন। এখন আমরা আলোচনা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।
গ্রামের বাসিন্দা ও ইউরোপ প্রবাসী তোফায়েল আহমদ, ইসলামী ব্যাংক পাগলা বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. তাজুল ইসলাম, সমাজকর্মী হুমায়ুন কবির ও ইউপি সদস্য লিটন মিয়া। তারা বলেন, আমাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন হচ্ছে বঞ্চিত এই এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হবে। আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণের সারথি হয়েছেন শ্রদ্ধেয় ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও তাঁর স্ত্রী ডা. সুলতানা ওয়াহিদ চৌধুরী। তাঁরা তাঁদের ভাতিজাদের মাধ্যমে জায়গা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আমরা চাই ডাক্তার সাহেবের হাত ধরে আমাদের গ্রামবাসীর স্বপ্নের পূরণ হোক।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, যে লোক জায়গা দান করবেন তার পক্ষ থেকে কিছু লোক আমাকে একটি জায়গা দেখিয়েছেন৷ তারা যদি সরকারকে সেই জায়গা দেন তাহলে আমরা সেখানে একটি স্কুল করার চিন্তা করবো।