◾ পায়ে হেঁটে স্কুলে আসেন ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী
◾ মানববন্ধনে সড়ক পাকা করণের দাবি
‘আমি পনেরো বছর ধরে এই সড়কে সিএনজি চালাই। অনেক ছোটবড় দুর্ঘটনা আমার চোখের সামনেই ঘটেছে৷ শুধু তাই নয়, অনেক রোগীরাও এই রাস্তায় যাতায়াত কালে আরও অসুস্থ হয়েছেন। এমনকি দুইজন গর্ভবতী মহিলার ডেলিভারিও আমার গাড়িতে হয়েছে, আমার চোখের সামনেই হয়েছে।’ মনে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন সিএনজি ফোরস্ট্রোক চালক, গণিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা সাব্বির আহমদ। শান্তিগঞ্জ উপজেলার গণিগঞ্জ বাজার থেকে বাহাদুরপুর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার কাচা সড়ক নিয়ে এই ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। ছয়টি গ্রামের দশ হাজারেরও বেশি মানুষ এই সড়কপথে চলাচল করেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুইশত বছর ধরে এই জনপদে মানুষের বসবাস। শুরুতে মানুষ হেমন্তকালে পায়ে হেঁটে ও বর্ষাকালে নৌকায় যাতায়ত করতেন। এখন রাস্তাঘাট হয়েছে। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট পাঁকা হলেও তেহকিয়া, শিমুলবাক, রঘুনাথপুর, গোবিন্দপুর, লালুখালী ও বাহাদুরপুর গ্রামের মানুষের প্রধান এই সড়ক এখনো কাচা-ই রয়ে গেছে। বাহাদুরপুর থেকে তেহকিয়া গ্রাম পর্যন্ত সম্পূর্ণ রাস্তাটিই কাচা। যানবাহন চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী। শিক্ষার্থী, রোগী, শিশু-বৃদ্ধ মানুষের চলাচলে খুবই অসু্বিধা হয়। রাস্তাটি কাচা তো কাচাই, তার উপর আবার মারাত্মকভাবে ভাঙ্গা ও গর্ত করা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় বৃষ্টি হলে। তখন না চলে সিএনজি, না নৌকা। এসময় কাঁদা মাড়িয়ে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় মাইলের পর মাইল। এমন পরিস্থিতে দুঃখে কাটাতে হয়ে শিমুলবাক ইউনিয়নের এই কয়টি গ্রামের মানুষকে। এমতাবস্থায়, এই সড়ক পথে মানুষের চলাচল একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এই সড়কে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরা নিয়মিত চলাচল করেন। তাদেরকেও পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়।
সম্প্রতি মাটি কাটার পর রাস্তাটি পাকা করার দাবি তুলেছেন এই অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দসহ সব মহলের মানুষ। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নে গণিগঞ্জ বাজারে একটি মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধনটি পরিচালনা করেন- সমাজকর্মী মুহিবুর রহমান মানিক। এতে বক্তব্য রাখেন- সমাজকর্মী ডা. নজরুল ইসলাম রাজু, সিএনজি চালক সাব্বির আহমদ, সমাজকর্মী শিব্বির আহমদ, জাকারিয়া আহমদ স্বাধীন, সিরাজুল আলম, শাহীনুর রহমান শাহীন, এলখাছ মিয়া ও ফখরুল ইসলাম জয়।
এসময় ফিরদৌস আহমদ ইরাম, মুক্তার আলী, মো. আকিল মিয়া, এনামুল হক, মামুন আহমদ, রাসেল মিয়া, নিজাম উদ্দিন ও নবী হোসেনসহ গণিনগর ষোলোগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এই সড়কে চলাচল করে গণিনগর ষোলোগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে আসেন দশম শ্রেণির ছাত্রী সুলতানা আক্তার পুষ্পা, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অশীল দাশ ও জুয়েদ তালুকদার। তারা বলেন, কাচা রাস্তা হওয়ায় স্কুলে আসতে সময় আমরা গাড়ি পাই না। পায়ে হেঁটে আসতে হয় বলে সকাল ৭টার আগে রওয়ানা দিতে হয়। প্রতিদিন প্রায় ২-৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। আমরা প্রায় ৩শ’র মতো শিক্ষার্থী এ অঞ্চল থেকে স্কুলে যাই। সকলের পক্ষ থেকে দাবি করছি যে, রাস্তাটিতে আরও মাটি কাটিয়ে অতি দ্রুত যেনো পাকা করে দেওয়া হয়।
মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, আমরা অনুরোধ করছি, যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটিতে মাটি কাটিয়ে আবুড়া করে যেনো পাকা করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে কোনো টালবাহানা না করার আহ্বানও জানাচ্ছি। যদি আমাদের দাবি না মানা হয় তাহলে আরো বড় আন্দোলনে যাবে ছয় গ্রামের মানুষ।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী আল নূর তারেক বলেন, একবার এই সড়কের টেন্ডার হয়েছিলো। কিন্তু অনুমোদন না হওয়ায় চলতি মাসের ১৭ তারিখ আবারও টেন্ডার ওপেন হবে। রাস্তার কাজটি শিমুলবাক পর্যন্ত দ্রুতই শুরু হয়ে যাবে।