ভেঙ্গে পড়েছে বিয়ানীবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা ।। জনদুর্ভোগ চরমে
শাহীন আলম হৃদয় শাহীন আলম হৃদয়
বিশেষ সংবাদদাতা
সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলাবাসীর প্রধান সমস্যা এখন নিত্য দিনের চলাচলের মাধ্যম অনুপযোগী যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজেলার বুকে বয়ে চলা আঞ্চলিক মহাসড়ক, বাইপাস সড়ক, শহরের লিংক রোড ও গ্রামীণ সড়ক গুলোর প্রায় ৮০ ভাগই এখন ছোট বড় খানাখন্দ ও অতিরিক্ত ভাঙ্গাচোরায় যান চলাচলের অনুপযোগী। নিরুপায় হয়ে ঐ সকল সড়ক গুলো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই জনপদের লক্ষ লক্ষ জনসাধারন। অথচ এই চরম জনদুর্ভোগ লাগবে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণে এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কার্যত রয়েছেন উদাসীন। ফলে জনমনে দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের প্রতি চরম ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যা আগামী জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে উলে¬খযোগ্য নেতিভাচক প্রভাব ফেলবে বলে সচেতন মহলের অভিমত।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর আওতাধীন সিলেট-চারখাই-বিয়ানীবাজার-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কটির বিয়ানীবাজার উপজেলাধীন (আলীনগর-চারখাই-বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম বাজার) অংশ দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার বিহীন রয়েছে। গত বছর বন্যার জলে প¬াবিত হয়ে ঐ সড়কের ভাঙ্গাচোরা স্থানের পরিধি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেলেও বন্যা পরবর্তী এক বছর অতিক্রান্ত পরও আজও মেরামত হয়নি সড়কটি। ফলে ভাঙ্গাচোরা ঐ সকল স্থানের পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি এখন যাত্রী সাধারন ও যানবাহন চালকদের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কিন্তু উপায়ান্তর না থাকায় যান চলাচলের অনুপযোগী এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় নানা দূর্ঘটন, হাত, পা ভেঙ্গে পঙ্গু হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। এছাড়া যানবাহন গুলোর ছোট বড় যন্ত্রাংশ বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে চালকরা আদায় করছেন অতিরিক্ত ভাড়া। আঞ্চলিক এই মহাসড়কটি দিয়ে বিভাগীয় শহর সিলেটে যাতায়াত করেন বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক জনসাধারন। এছাড়া বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি রপ্তানির পণ্য বোঝাই যানবাহন গুলোও এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির দীর্ঘদিন থেকে বেহাল দশায় জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় শহরের সাথে বিয়ানীবাজার, বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলাবাসীর যাতায়াতের বিকল্প বাইপাস সড়ক হিসেবে পরিচিত বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর-গোলাপগঞ্জ সড়কের বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর অংশটির এখন আরো বেহাল দশা। সড়কটির মাথিউরা থেকে তিলপাড়া অংশে বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বর্তমান এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল অনেকটা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, আরো করুন অবস্থা বিয়ানীবাজার উপজেলায় এলজিইডি’র আওতাধীন গ্রামীণ রাস্তা গুলোর। বিয়ানীবাজার এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় কাঁচাপাকা মিলে সর্বমোট ৬২৭ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ২১০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না হওয়ায় পাকা রাস্তা গুলোর অধিকাংশই এখন পিচ উঠে খানাখন্দ এবং ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ কাচা রাস্তা গুলোর অবস্থাও নাজুক। স্থানীয় জনসাধারন ঐ সকল রাস্তা গুলোর সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন থেকে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবী জানালেও মিথ্যে প্রতিশ্র“তি ছাড়া কিছুই পায়নি ভুক্তভোগী জনসাধারন। ফলে বিকল্প উপায়ান্তর না থাকায় নিরূপায় হয়ে এই সকল রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন জনসাধারন।
উপজেলার গ্রামীণ রাস্তার বিষয়ে বিয়ানীবাজার এলজিইডি প্রকৌশলী সাইফুল আজম বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে রাস্তা গুলোর সংস্কার কাজ না হওয়ায় অনেক রাস্তায় খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার উন্নয়নকাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। ক্রমান্বয়ে সবগুলো রাস্তাই সংস্কার করা হবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সড়কের এই অংশের কার্পেটিং উঠে কিছু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির মেরামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


