সিলেটে মাদ্রাসার ছাত্র বলৎকারের বিচার করতে গিয়ে আসামি হলেন বিচারকরা

মাহবুব জয়নুল মাহবুব জয়নুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩ 433 views
শেয়ার করুন

সিলেটের ওসমানীনগরে এক মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসার সুপার কর্তৃক বলাৎকারের ঘটনায়।প্রায় ৮মাস পর বিভিন্ন পত্রিকার নিউজ ও বলৎকারের সামাজিক বিচার হওয়ার ভিডিও ভাইরাল। 

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন এর নজরে আসলে সংস্থার পক্ষ হতে বলাৎকারের বিষয়ে বলাৎকারকারী মাদ্রাসার শিক্ষক এবং এই বিষয়ে সালিশকারীগনদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি আবেদন করা হয়।

 

অতঃপর গত শনিবার অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষককে তার নিজ বাড়ি হতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন এর সহায়তায় গ্রেফতার করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত মাদ্রাসা সুপারের নাম আব্দুল কাদির, তিনি সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার লন্তির মাটি গ্রামের মৃত নূরুল হকের ছেলে। তিনি উপজেলার সাদিপুর ইউপির নুরপুর দারুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসা সুপারের দ্বায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত মাদ্রাসা সুপারকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

এদিকে, ঘটনার পর অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপারকে পালিয়ে যেতে সাহায্যসহ ধর্ষনের ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিতে নির্যাতিতাকে আইনের দারস্থ হতে বাধা দিয়ে  জোর পূর্বক সালিসি বৈঠকে বলৎকারের মত জগন্য অপরাধ’কে  ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়ে  আইন অমান্যকারী ১৩জনের বিরুদ্ধে গত শনিবার(২৫ফেব্রুয়ারী) ওসমানীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতার পিতা।

 

গ্রেফতার হওয়া আব্দুল কাদিরসহ মামলায় অনান্য আসামীরা হলেন, নূরপুর গ্রামের আহমদ উল্লার পুত্র আফতাব উল্লাহ, আমান উল্লাহর পুত্র আবিদ উল্লাহ, আফিজ উল্লাহর পুত্র ইয়াওর মিয়া, বশিরুজ্জামানের পুত্র তজম্মুল আলী, বশিরুজ্জামানের পুত্র কাপ্তান মিয়া, নূরপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম জসিম উদ্দিন, মুয়াজ্জিন মাহমুদুল হাসান, ফিরোজ উল্লাহর পুত্র আনছার মিয়া, কবির মিয়ার পুত্র কামরুল, তজম্মুল আলীর পুত্র রুবেল, আবিদ উল্লাহর পুত্র সামসুদ্দোহা সহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২জন।

 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২২ সালের ১১ জুন উপজেলার নুরপুর দারুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার সুপারের দ্বায়িত্বে থাকা কালিন হিফজ বিভাগের ১১ বছরের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক একাধিকবার বলাৎকার করে মাদ্রাসা সুপার আব্দুল কাদির। বিষয়টি নির্যাতিত শিশু তার বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজনকে অবহিত করলে ভুক্তভোগী শিশুর বাবা মাদ্রাসার কমিটিসহ গ্রামের মাতবরকে অবহিত করেন। ঐ সময় নির্যাতিত শিশুকে উপজেলার তাজপুরে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভূল তথ্য দিয়ে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে মাদ্রাসা কমিটিসহ গ্রামের কয়েকজন মাদ্রাসার অফিসে গিয়ে আব্দুল কাদিরকে সবার সামনে ৩০ বার কান ধরে উঠবস করিয়ে ভিডিও করে এবং তার কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা মুচলেকা আদায় করে সালিশী বৈঠক সমাপ্ত করেন। উপস্থিত কয়েকজন এই বিষয়ের প্রতিবাদ করলে, একজন শিক্ষকের মাধ্যমে সুপার আব্দুল কাদিরকে গাড়িতে তুলে পালিয়ে যেতে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। সালিশের মাধ্যমে রফাদফা হওয়া ২ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তখন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার এস আই সবিনয় বৈদ্য বলেন, নির্যাতিতার পিতার দায়ের করা মামলায় অভিযান চালিয়ে আব্দুল কাদিরকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।