বড়লেখায় ইফতারে বসে খুনের পরিকল্পনাঃ গ্রেফতারকৃত ৫ জনের লোমহর্ষক বর্ণনা

প্রকাশিত: ১:১৯ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২০ 872 views
শেয়ার করুন

বড়লেখায় মৎস্য খামার মালিক সমছ উদ্দিন (৩৪) কে হত্যার জন্য ৪ জন মিলে ইফতারে বসে পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ সময় নারীঘটিত বিষয়ে সমছকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার সব পরিকল্পনা আঁটে খুনি চক্র। হত্যার ২ দিনের মধ্যে পুলিশ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত ৫ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।

উদ্ধার করেছে হত্যায় ব্যবহৃত ৩টি ধারালো দা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় নারীঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়ী সমছ উদ্দিনকে খুন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেফতার আসামীদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, রহমানীয়া চা বাগানের বাসিন্দা শচিন নায়েক জগাই (৩৫), মোহাম্মদনগর গ্রামের হাফিজুর রহমান (২৮), হেলাল উদ্দিন হেলাই (৩৫), মোক্তার আলী (৪৫) ও জসিম উদ্দিন (৪২)।

উপজেলার মোহাম্মদনগর (বাজারিটিলা) এলাকায় আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত ঘর থেকে সোমবার ভোর (১৮ মে) রাতে সমছ উদ্দিনের (৩৪) জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মধ্যগ্রামতলা গ্রামের আমির উদ্দিনের ছেলে। ছেলে হত্যার ঘটনায় আমির উদ্দিন থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সমছ উদ্দিন নিখোঁজের পর তার বাবা আমির উদ্দিন থানায় জিডি করেন। এ জিডির ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাউসার দস্তগীরের দিক নির্দেশনায় বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হকের নেতৃত্বে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে নিখোঁজের পরদিন রাতে একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে সমছ উদ্দিনের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে।

এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ রহমানীয়া চা বাগানের মৃত সত্য নায়েকের ছেলে শচিন নায়েক ও মোহাম্মদনগর গ্রামের আজির উদ্দিনের ছেলে হাফিজুর রহমানকে আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্যে পুলিশ মৃত জহুর আলীর ছেলে হেলাল উদ্দিন হেলাইকেও আটক করে। হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তিনি পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যে পুলিশ মোক্তার আলী ও জসীম উদ্দিনকে আটক এবং হত্যকান্ডে ব্যবহৃত ৩টি দা উদ্ধার করেছে।

বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ বলেন, নিখোঁজের পিতার জিডির ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাউসার দস্তগীর স্যারের দিক নির্দেশায় সমছ উদ্দিনের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পুলিশকে জানিয়েছে নারীঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করেই তারা সমছ উদ্দিনকে খুন করেছে। মঙ্গলবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
যেভাবে খুনের পরিকল্পনাঃ

বড়লেখা পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামীরা পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নারীঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে তারা সিদ্ধান্ত নেয় সমছ উদ্দিনকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার। এরই প্রেক্ষিতে গত বুধবারে তারাবীহর নামাজ শেষে মোক্তার আলীর দোকানের পেছনে বসে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করা হয়।

উক্ত মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে হেলাল, মোক্তার, জসিম, হাফেজ এবং শচীন। শনিবার জসীমের বাড়িতে ইফতারে সবাই অংশগ্রহণ করে এবং সেখানে পূর্বের পরিকল্পনাটি ঝালাই করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী শচীনের মাধ্যমে মদ আনানো হয়। প্রথম এক দফা শচীন এবং সমছ ফিশারীর পাশে টিলার উপরে মদ খায়। মদ খেয়ে সমছ বাড়িতে চলে যেতে চাইলে তাকে সবাই মিলে ফিশারীর মাছ চোর ধরে দিবে বলে এবং তাকে বুদ্ধি দেওয়া হয় যে তার মোটর সাইকেলটি সামনে রেখে আসার জন্য যাতে চোররা মনে করে ফিশারীর মালিক সমছ বাড়িতে চলে গেছে।

মাছ চোর ধরে দেওয়ার টোপ দেওয়ায় সমছ রাজি হয়ে যায় এবং তার ব্যাবহৃত মোটর সাইকেলটি একটি বাড়িতে রেখে ফিরে আসে। পরবর্তীতে আরেক দফা মদ খাওয়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত মদ খেয়ে সমছ জনৈক রজ্জাক আলীর পরিত্যক্ত ঘরের চৌকির উপরে শোয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

শনিবার দিবাগত রাত অনুমান ১.৩০ টায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হেলাল, জসীম, শচীন এবং হাফিজুরের সহযোগিতায় মোক্তার ধারালো খাসিয়া দা দিয়ে গলায় উপর্যুপরি আঘাত করে ঘুমন্ত সমছ উদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে।

উক্ত হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুই জন আসামী ঘটনার সাথে তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। অপর আসামীদেরকে রিমান্ডে আনার জন্য আদালত বরাবর আবেদন প্রেরণ করা হয়েছে।