মেয়র পদে চতুর্মুখি লড়াইয়ের আভাস ।। নৌকার পালে দখিণা হাওয়া

বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচন

প্রকাশিত: ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২২ 612 views
শেয়ার করুন

সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে এ পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচন। এ অবস্থায় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা, মিছিল-মিটিং, গণসংযোগের সমাপ্তি ঘটছে আজ। আন্তিম লগ্নের প্রতিটি মিনিট কাজে লাগাতে প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা আহার-নিন্দ্রা ছেড়ে ব্যস্ত ভোট ক্যাম্পেইনে। কোন প্রার্থী কোন এলাকায় কত ভোট পাচ্ছেন কিংবা কার ভোট বাড়ছে আর কার ভোট কমছে সে হিসাব কষচ্ছেন প্রার্থী, কর্মী-সর্মথক ও উপজেলার সচেতন মহল। তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ জমজমাট প্রচার-প্রচারনায় মুখরিত এ পৌরসভার নির্বাচনী উৎসবের আমেজ এখন পৌরসভার সীমা ছাড়িয়ে বিরাজ করছে দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত গোটা উপজেলাবাসীর মাজে। মেয়র পদে লড়ছেন ১০ জন প্রার্থী। ৩/৪ জন ছাড়া অন্য সকল প্রার্থীরাই প্রতিদ্বন্ধিতার মাঠে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ভোটের মাঠে মেয়র পদে এবার দেখা দিয়েছে কঠিন সমীকরণ। নিরংকুশ ভাবে কোন প্রার্থীই এগিয়ে নেই। তবে ভোটের মাঠের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে মেয়র পদে নৌকা, চামচ, মোবাইল ফোন ও জগ প্রতীকের মধ্যে চতুর্মুখি লড়াইয়ের আভাস। এই চার প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে শেষ ৪৮ ঘন্টার ভোটের ক্যারিশমায় যে প্রার্থী নিজের ভোটার ধরে রেখে আরো এগিয়ে যেতে পারবেন, তিনিই হাসবেন বিজয়ের হাসি। কঠিন এই সমীকরণে দলীয় প্রার্থী হওয়ার সুবাধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে থাকা অন্য প্রার্থীদের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোঃ আব্দুস শুকুর। শেষ সময়ে এসে একদিকে যেমন নিজ গ্রামে নৌকার প্রার্থীর ভোট বাড়ছে, তেমনি আওয়ামী পরিবারের নেতাকর্মীরাও নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ফলশ্র“তিতে এখন নৌকার পালে বইছে দখিণা হাওয়া। ভোটের মাঠে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকেন তবে ফের বিজয়ী হবে নৌকা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

 

বিয়নীবাজার পৌরসভায় এবার মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৩৬৯ জন। তন্মধ্যে, পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৬২৫ ও মহিলা ভোটার ১৩ হাজার ৭৪৪ জন। ৯টি ওয়ার্ডে ১০টি ভোট কেন্দ্রে ৮৩টি কক্ষে ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ ভোট গ্রহণ হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আব্দুস শুকুর, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সুনাম উদ্দিন ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনোনীত কাস্তে প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট আবুল কাশেম। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চামচ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুল হক, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হেলমেট প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ তফজ্জুল হোসেন, মোবাইল ফোন প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আব্দুস সবুর, কম্পিউটার প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আহবাব হোসেন সাজু, হ্যাঙ্গার প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সামাদ আজাদ ও নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অজি উদ্দিন।

 

ভোটের মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এবারের নির্বাচনে দল, প্রতীক কিংবা প্রার্থীর ব্যাক্তি ইমেজের চেয়ে আঞ্চলিকতা, গ্রাম ও গোত্র বিভাজনই বেশি প্রভাব ফেলছে। ফলে ভোটের মাঠে মেয়র পদে এবার কঠিন সমীকরণ পরীলক্ষিত হচ্ছে। কোন প্রার্থীই নিরংকুশ একক ভাবে এগিয়ে নেই। দুইটি গ্রাম ছাড়া পৌরসভার অন্য সকল গ্রামেরই এক বা একাধিক প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতায় রয়েছেন। প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকা ১০ জনের মধ্যে ৩/৪ জন ছাড়া অন্য সকল প্রার্থীরাই নিজ নিজ গ্রাম/অঞ্চল ভিত্তিক উলে­খযোগ্য ভোট টানতে সক্ষম হবেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বা প্রতীক অনেকাংশেই গ্রাহ্য হচ্ছে না! ফলে নিজেদের পুঞ্জি ভোটের ক্ষেত্রে এই সকল প্রার্থীরাই অনেকটা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন ভোটের মাঠে। এ অবস্থায় চুড়ান্ত লড়াইয়ে যে প্রার্থী নিজ গ্রামের পুঞ্জিগত ভোট অধিকাংশ হারে অর্জনের পাশাপাশি অন্যসব এলাকা থেকে অল্প অল্প করে সমষ্টিগত ভাবে আনুপাতিক হারে বেশি ভোট নিজ বাক্সে নিতে সক্ষম হবেন, তিনিই হাসবেন বিজয়ের হাসি। নির্বাচনের এই কঠিন সমীকরণে শেষ লগ্নে এসে ভোটের মাঠ পর্যবেক্ষণে চতুর্মুখি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদের পিছনে ফেলে চতর্মুখি চুড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আব্দুস শুকুর, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চামচ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুকুল হক, মোবাইল ফোন প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুস সবুর ও জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ তফজ্জুল হোসেন। এই চার প্রার্থী নিজ নিজ এলাকার অধিকাংশ ভোট অর্জনের পাশাপাশি অন্যান্য এলাকা থেকেও উলে­্যখযোগ্য হারে ভোট টানতে সক্ষম হচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। শেষ লগ্নে বড় ধরনের নতুন কোন মেরুকরণ না হলে চূড়ান্ত লড়াইয়ে থাকা এই চার প্রার্থীর বাক্সেই মোট কাস্টিং ভোটের দুই তৃতীয়াংশের অধিক ভোট পড়তে যাচ্ছে। এই প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা হবে এবং তাদের প্রাপ্ত মোট ভোটের ক্রমানুসারে ব্যবধান মাত্র ২/৩’শ বেশি হবে না বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। ভোট গ্রহণপূর্ব শেষ ৪৮ ঘন্টার কঠিন লড়াইয়ে ভাঙ্গাগড়ার খেলায় কলো টাকার ছড়াছড়ি, প্রপাগান্ডা ও নানা কলাকৌশলের প্রয়োগ ঘটতে পারে। এই সকল বিষয় যে প্রার্থী সফলতার সাথে কাটিয়ে উঠতে পারবেন, তিনিই অর্জন করবেন চূড়াান্ত সফলতা। কঠিন এই সমীকরণে দলীয় প্রার্থী হওয়ার সুবাধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে থাকা অন্য প্রার্থীদের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোঃ আব্দুস শুকুর। নৌকার পক্ষে মাঠে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি ভোটের দিন পর্যন্ত ঠিক থাকেন তবে ফের বিজয়ী হবে নৌকা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

এছাড়া কম্পিউটার প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আহবাব হোসেন সাজু ও হ্যাঙ্গার প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ আজাদ ও নিজেদের এলাকায় অধিকাংশ ভোট অর্জনের পাশাপাশি অন্যান্য এলাকা থেকেও বেশ কিছু ভোট টানতে পারেন। ফলে তাদের মধ্যে কেউ একজনও চমক দেখিয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ে চলে আসার সম্ভ্যবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

 

সর্বপরি এবার বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ জমজমাট লড়াই হবে তা নির্ধিদ্বায় বলা যায়। কে হচ্ছেন আগামীর নগর পিতা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ভোটের ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত।