প্রবাসী প্রসঙ্গ -৪: বিমানবন্দরের একটি পিসিআর আর হাজারো প্রবাসির কান্না
টান টান উত্তেজনার দু’টি সপ্তাহ। সংযুক্ত আমিরাতের শর্তানুযায়ী র্যাপিড / আরটি-পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলন অনশন! ছোট্ট একটি প্রকল্প নিয়ে তিন চার মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার ও সিদ্ধান্তহীনতার লাইভ শো ! শেষ পর্যন্ত অনেক চড়াই উৎড়াইয়ের পর আরটি-পিসিআর টেস্টের যন্ত্রপাতি বসেছে, এখন নিয়মিত ফ্লাইট শুরুর অপেক্ষা।
এই এপিসোডের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর দুর্বলতা, অক্ষমতা যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি এই অসহায় প্রবাসীদের স্বার্থ, দাবি নিয়ে দেন দরবার করার জন্য আমাদের কমিউনিটির সম্মিলিত ব্যর্থতাও প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। এনআরবি নাম নিয়ে গড়ে উঠা বিভিন্ন সংগঠনগুলোকে যেমন পাওয়া যায়নি, আমাদের কমিউনিটি নেতৃবৃন্দদেরকেও দেখা যায়নি তেমন জোড়ালো কোন ভূমিকা রাখতে। এমনকি প্রবাসী সাংবাদিক সংগঠনগুলোকেও তেমন সরব দেখা যায়নি। দায়সারা গোছের কিছু ঘরোয়া সংবাদ সম্মেলন দেখেছি, কিন্তু কার্যকর ভূমিকা রাখার মতো, সমস্যা নিয়ে আলোচনা, সমাধান করার মতো কোন কার্যক্রম দেখিনি। এটা ঠিক যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিদ্যমান আইনি বাধ্য বাধকতায় অনেক কিছু করাই সম্ভব নয়, তবে আমার বিশ্বাস আমরা একতাবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আমাদের যোগাযোগ, প্রভাব কাজে লাগিয়ে আমরা একটি ভালো ভূমিকা রাখতে পারতাম। এমনকি এই র্যাপিড পিসিআর টেস্ট ইকুইপমেন্টগুলোও ব্যবস্থা করে দিতে পারতাম। এগুলো এই দুবাইতেই পাওয়া যায়, চেষ্টা থাকলে অবশ্যই করা যেতো।
-
আটকে পড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের দাবি, আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান সংবাদ মাধ্যমে এসেছে তবে তা প্রধানত ঢাকার স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমেই, আমাদের প্রবাসী সাংবাদিকদের মাধ্যমে নয়। আমাদের কমিউনিটির বিভাজন থেকে এই প্রবাসী সাংবাদিকরাও মুক্ত নন। কমিউনিটির মতো ওনারাও কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত তাই কোন ইস্যুতেই একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে পারেন না। তাছাড়া কমিউনিটির অনেক সংগঠনের মতো বিভিন্ন নামে আত্মপ্রকাশ করা সংবাদ / মিডিয়া মাধ্যমগুলোর অনেকেরই সঠিক আইনি অনুমোদন নেই। পেশাগতভাবেও অনেকে সাংবাদিক নন, তাই হয়তো প্রয়োজনের সময় ঠিক কাজটি করা যায় না।
ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। প্রবাসীদের এমন একটি ক্রাইসিস সময়ে সবাই মিলে আলাপ আলোচনা করে করণীয় ঠিক করতে পারিনি এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। এই ব্যর্থতা আমাদের সবার।
আরটি-পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা হয়তো হয়েছে, তবে ফ্লাইট শুরু হয়নি। কবে হবে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না হলেও আরো চার পাঁচদিন লেগে যেতে পারে। চট্টগ্রাম ও সিলেটে এই টেষ্টের ব্যবস্থা হবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। ফ্লাইটে অগ্রাধিকার পাওয়ার প্রশ্নে ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার প্রবাসীর উৎকণ্ঠা বাড়ছে, দ্রুত কোন গ্রহনযোগ্য সিদ্ধান্ত না আসলে এনিয়েও আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে। ব্যাপারটি জটিল হলেও একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে, তবে এনিয়েও যে একটি জট লাগবেনা তা হলফ করে বলা যায় না।
এই আরটি-পিসিআর এপিসোড চলাকালীনই প্রবাসীদের ওয়েজ আর্নার ডেভলাপমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগ বিধি ও সুদের হারে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ পর্যন্ত সুদের হার অপরিবর্তিত রেখে বিভিন্ন ধাপে সুদের হার কমানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রী সুদের হার কমানো নিয়ে খুব সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বেশ পরিষ্কার ভাবেই বলেছেন যে এই বন্ডের উদ্দেশ্য ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণের জন্য। মধ্যবিত্ত অথবা উচ্চবিত্তদের জন্য নয়। উচ্চ সুদের লাভের আশায় উচ্চবিত্তরাও এখানে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ করে, তাতে সরকারের ঋণ বেড়ে গিয়ে অর্থনীতিতে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ সৃষ্টি করেছে। এই চাপ ও ঋণ কমাতেই বন্ডে বিনিয়োগ এক কোটি টাকায় সীমিত রেখে সুদও কমানো হলো। এই পদক্ষেপে প্রবাসীদের ভিতর একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়। আমরা অর্থমন্ত্রীর সাথে একমত পোষণ করছি, তবে আবারো দাবি করছি যে, সাশ্রয়কৃত টাকার কিছুটা দিয়ে প্রান্তিক প্রবাসীদের জন্য দেশে হলেও একটি স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক। শুরুতে হাসপাতাল স্থাপন সম্ভব না হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু জেলা শহর ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্লিনিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হোক। আমি নিশ্চিত সরকার উদ্যোগী হয়ে শুরু করলে প্রবাসীরাও এর বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে। অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের পতাকা বহনে প্রবাসীরা বরাবরই নেতৃত্ব দিয়েছে, এই যাত্রায় পিছিয়ে থাকার প্রশ্নই আসেনা।
লেখক: সমাজকর্মী, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত


