খোলা আকাশের নিচে দিনভর পড়েছিল কুয়েত প্রবাসীর মরদেহে

সাদেক রিপন সাদেক রিপন

কুয়েত প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২:৫০ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২০ 515 views
শেয়ার করুন

উঠানে দিনভর বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকিয়েছে কুয়েত প্রবাসীর মরদেহ ছিল না কোন আত্মীয় ও আপনজন। দিন শেষে খবর পেয়ে ছুটে আসে শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগনের সদস্যরা সম্পন্ন করেন মৃত দেহের দাফন কাফনের কাজ।

যেই পরিবারের কথা চিন্তা করে নিজের সুখ আর স্বাদ বিসর্জন দিয়ে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যায় বিদেশের মাটিতে। সুখ আর আনন্দের সময় টুকু প্রবাস নামের দেয়াল বিহীন জেলখানা কেটে যায়।কেউ র্দীঘ প্রবাস জীবনের ইতি টেনে সময়ে দেশে যায় পরিবারে সাথে বাকী সময়টুকু কাটানোর জন্য । তেমনি একজন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৫নং ওসমান পুর ইউনিয়নের সাহেবপুর কালা বক্স বাড়ি, কুয়েত প্রবাসি ছালেহ আহমদ। র্দীঘদিন প্রবাস জীবন শেষে দুই বছর আগে দেশে চলে যান তারপর পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন।সবাই হাসপাতালে ব্যস্ত ছেলের ঘরে নাতি হয়েছে এদিকে ঘরে তার কুয়েত প্রবাসী বাবা মরে পড়ে রয়েছে। প্রাণঘাতী করোনায় চট্টগ্রামে মারা যাওয়ার পর ৩ জুন বুধবার ভোরে বড় ভাই নুর আহম্মদ মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে আসেন দাফন কাফনের জন্য। মরদেহের সাথে পরিবারের কোন সদস্য নিজ স্ত্রী,সন্তান কেউ আসেনি দাফন কাজ সম্পন্ন করার জন্য।সালেহ আহম্মেদরে লাশ বাড়ীতে আনার পর দাফন করতে এগিয়ে আসেনি কেউ বা লাশের সাথে স্ত্রী, সন্তান না আসার কারণে করোনার ভয়ে শেষবারের জন্য চোখের দেখাও দেখেতে আসেনি বাড়ীর অন্য লোকজন সবাই চলে যায় অন্যত্র এমনকি আসেনি গ্রামবাসীও। দিনভর বাড়ীর উঠানে ঘরের কোণে মসজিদের খাটিয়ার উপর পড়ে রইল নিথর দেহ খানা।চাদরে ডাকা দেহ দিনভর বৃষ্টিতে ভিজেছে, আবার রোদে শুকিয়েছে। আর কত নিষ্ঠুরতা শুনবো। আর কত নির্মমতা দেখবো। দিনদিন ভারী হচ্ছে মন। করোনা আমাদের দেখিয়ে দিলো দুনিয়ার কেউ নয় আপন। করোনা তুমি আরো কিছুদিন থাকো। অমানুষ নয়, শুধু মানুষ গুলো রেখো।

সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকানো মর্মান্তিক খবর পেয়ে লাশ দাফন কার্য সম্পাদন করা জন্য মিরসরাই উপজেলায় সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতিতে গঠিত শেষ বিদায়ের বন্ধু নামের সংগঠনটি। করোনা মহামারী সময়েই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ। এই সংগঠনের কাজ হল কেউ মারা গেলে দাফন কার্য সম্পন্ন করা। জীবনের সবটুকু ব্যয় করে যাদের জন্য ব্যাংক ব্যালেন্স, বাড়ী, জমি জমা রেখে যাচ্ছে এই করোনা সময়ে দেখা যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবার প্রিয়জন, পাড়া প্রতিবেশী দূরে সরে যাচ্ছে। এই মানুষ গুলো নিজের জীবন দশায় এমন আচরণ দেখার সুযোগ না পেলে ও দেখছে সমাজ। সময় পরিস্থিতিতে অনুকূল হলে আপনজন কিভাবে পর হয়ে যায়। সেখানে আবার শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহন করেছে যাহা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।

শেষ বিদায় বন্ধু সংগঠনের উদ্যোগক্তা মিরসরাই প্রেস ক্লাবের সভাপতি নুরুল আলম বলেন ,যেই পরিবার যাদের জন্য এত বছর এত কিছু করলো নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিলো আজ সেই মানুষটার সঙ্গে শেষ সময়ে এমন আচরন কারোই কাম্য নয়। তিনি আরও জানান, মিরসরাইয়ে যদি কোন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার দাফন কাফন সামাজিক ভাবে অনইচ্ছা প্রকাশ করে তাহলে আমাদের খবর দিলে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করবো। আমরা ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে করবো।