ঈদ মানে খুশি

রেজাউল করীম রেজাউল করীম

ইসলামি সংগীত শিল্পী

প্রকাশিত: ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২১ 492 views
শেয়ার করুন

 

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ বা উদযাপন। আর মোবারক শব্দের অর্থ কল্যাণময়। সুতরাং ঈদ মোবারক অর্থ হলো ঈদ বা আনন্দ উদযাপন কল্যাণময় হোক। তাই সবাইকে ঈদ মোবারক। ঈদ মানে আত্মার পরিশুদ্ধি, ধনী-গরিব,উঁচু-নিচু সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ্য ও সংহতি প্রকাশের এক উদার উৎসব । এদিনে সৃষ্টিকর্তা তার বান্দাদের অনুগ্রহ দ্বারা বারবার ধন্য করেন। রমজানের রোজা শুরুর দিন থেকেই সিয়াম সাধনার এ মাসে মানুষ তার লোভ লালসা পরিত্যাগ করে দীর্ঘ একমাসব্যাপী রোজা রেখে নিজের আত্মা পরিশুদ্ধ করেন । আর এ পরিশুদ্ধি শেষে রমজানের শেষ দিনে আকাশের এক কোণে বাঁকা চাঁদের হাসি ঈদের জানান দিয়ে দেয় সবাইকে । সাথে সাথে বেজে ওঠে বাজি, পটকা; সবাই সমস্বরে গেয়ে ওঠে, ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ ।

সবার চোখে মুখে খুশি ও আনন্দের এক অদ্ভুত তৃপ্তি ভরা হাসি ছড়িয়ে পড়ে। যে আনন্দ নির্মল, যে আনন্দ টাকা দিয়ে কেনা যায় না, অন্যের খুশি বা আনন্দে নিজের মনের গহীন কোণে শুভ্র শান্তির শীতল স্পর্শ অনুভূত হওয়া; এটাইতো ঈদ । এই ঈদকে ঘিরে অনেক আগে থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন জল্পনা ,কল্পনা ও প্রস্তুতিপর্ব। রোজার প্রথম দিন থেকেই শপিং সেন্টারগুলোতে ভিড় করে সব বয়সের মানুষ ।দরকষাকষির পর্ব সেড়ে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়স্বজনের জন্য অথবা যাকাতের জন্য কিনে নেয় অনেক ধরনের জামাকাপড় অথবা রকমারি উপহার ।

হয়তো কোনো এক গ্রামের ময়না নামের ছোট্ট শিশুটি অপেক্ষা করে থাকে তার বাবার কাছ থেকে সেরা জামাটি পাবার জন্য। আবার ময়নার মা অপেক্ষায় থাকে তার বছরের সেরা শাড়িটি পাবার জন্য। আবার মা-বাবা তার ছেলেমেয়েকে হালুয়া, ফিন্নি, কোরমা রেজালা খাওয়ানোর অপেক্ষায় থাকে। এই টুকরো টুকরো সফেদ অনুভূতির রঙিন প্রস্ফুরণই ঈদ। কেউ কেউ ভিড় এড়ানোর জন্য অনেক আগেই কেনাকাটার পর্ব সেরে ফেলে।আবার কেউ অপেক্ষায় থাকে চাঁদরাতের, যখন চাহিদার তুলনায় জোগান থাকে বেশি এবং অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে মানুষ তার শপিংটুকু সেরে ফেলতে পারে । এই ঈদকে কেন্দ্র করে যে বাণিজ্য তা পুরো বছরের বাণিজ্যিক মুনাফার থেকে অনেক বেশি । আর তাই ক্রেতার আকাঙ্ক্ষিত পোশাক এবং বিক্রেতার আকাঙ্ক্ষিত মুনাফা এ ধরনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক খুশিরও কেন্দ্রবিন্দু ঈদ ।

ঈদ মানে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতাকে ঝেড়ে ফেলে, যান্ত্রিকতার শিকল ছিঁড়ে কিছুদিনের জন্য হলেও শেকড়ের টানে ফিরে যাওয়া। সামাজিক মেলবন্ধনের অবারিত উৎসবে মেতে থাকার সময় এই ঈদ । ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই হয়তো আমার মতোই বেঁচে থাকার তাগিদেই বা সময়ের প্রয়োজনেই কচুরিপানার মতো অন্য ভুবনে ভেসে বেড়ানো মানুষগুলো প্রস্তুতি নেয় শেকড়ে ফিরে যাওয়ার । ঈদের দুই একদিন আগেই প্রায় সবাই পৌঁছে যায় তার প্রিয় ভুবন, তার নিজ বাড়িতে । যেখানে মা-বাবা তার প্রিয় সন্তানকে দেখার অপেক্ষায় থাকেন । ঈদের আগের দিন রাত থেকেই পরের দিনের অতিথি আপ্যায়নের সকল ব্যাবস্থা করে রাখার চলে প্রস্তুতি।

সারারাত ধরে পোলাও মাংস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকে বড়রা। তরুণীরা তাদের কাজিনদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় বাহারি রঙের মেহেদি অথবা রুপসজ্জা নিয়ে অথবা কেউ কেউ তার মায়ের সাথে রান্নায় হাত লাগায়। আর তরুণেরা বাধঁবাঙা উচ্ছাসে মেতে ওঠে ঈদের দিনের সকালের বাজার ও আড্ডায় । স্কুল-কলেজের সকল বন্ধুদের সাথে দেখা করে তাদের সাথে চেনা-পরিচিত জায়গাগুলোতেই ঘুরতে যেয়ে নষ্টালজিক হতে চায় তারা। সেটা হতেই পারে তার গ্রামের স্কুলের মাঠ, নদীর তীর ,বিলের পাড়,বটের তলা বা ফরিদ চাচার আমবাগান । যেখানে গেলেই তার স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে হাজারো স্মৃতি। ডানপিটেপনার শাস্তিস্বরূপ পিঠে লাঠি ভাঙার অনেক ছোট ছোট গল্প। ইটপাথরের শহর ছেড়ে প্রাকৃতিক শ্যামলীমায় প্রাণভরে নি:শ্বাস নেবার উৎসবও এই ঈদ ।

ঈদের দিন সকালে উঠে গোসল করে নতুন কাপড় পরে সবাই চলে যায় নামাজ পড়তে । সবাই একসাথে সারিবদ্ধ হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে সবাই সবার জন্য দোয়া করে ঈদগাহের মাঠে। এরপর ধনী-গরিব, শত্রু- মিত্র নির্বিশেষে সবাই সবার সাথে কোলাকুলি করে । হয়তো সবিরউদ্দিনের সাথে কবিরউদ্দিনের শত বিবাদের নিষ্পত্তি হতে পারে ঈদের দিনের কোলাকুলিতেই । অদ্ভূত মহিমায় পরিপূর্ণ এ দিনে সাবেরার মাও গলা মেলায় মৃণালিনীর মায়ের সাথে । আর পাশের বাড়ির মৃণালিনী অপেক্ষায় থাকে কখন সাবেরায় বাসায় গিয়ে মজার মজার খাবার খাবে। তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর ঈদের নতুন পোশাক, নতুন জুতা দেখবে । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ ধর্মীয় উৎসব আমাদের মধ্যে থেকে সব বিদ্বেষ দূর করে মাতিয়ে দেয় ভালোবাসার উৎসবে । সকালবেলা নামাজ পড়ে আসার পরই পিঁপড়ার মতো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় কচিকাঁচা বিচ্ছুসেনার দল সেলামির অপেক্ষায়। এ জন্য আগে থেকেই নোট ভাঙিয়ে ছোট ছোট নোটে মানিব্যাগ বোঝাই করে নিয়ে বেড়ায় বড়রা ।

আর ছোটরা তখন সালাম করে হাসিল করে নেয় সেলামি। বুড়ো দাদা-দাদি থেকে শুরু করে সদ্য চাকরিপ্রাপ্ত ভাইবোন কেউই রক্ষা পায় না এ বিচ্ছুদের হাত থেকে। তবে বিচ্ছুদের এই আহ্লাদ নিঃসন্দেহে সবার সাথে সবার সম্পর্ককে আরো পাকাপোক্ত করে দেয় । এবার আসি খাওয়াদাওয়ার পর্বে। আমার এখনো মনে পড়ে নাসিরদের ঘর থেকে ভেসে আসা চিকেন রেজালার গন্ধ, কাস্টার্ডের স্বাদ অথবা কমল আঙ্কেলের বাসায় তৈরি করা লাচ্ছি সেমাই এবং গাজরের হালুয়ার কথা। কোনটা ছেড়ে কোনটা খাব সে দ্বিধায় পড়ে ছোট্ট একটা পাকস্থলীতে সবকিছু একটু একটু করে হলেও মজার খাবারগুলো আয়েশ করে খাওয়ার দূরন্ত চেষ্টাগুলোর স্মৃতি এখনো অমলীন। টিনা আর পিয়াসের সাথে সারাদিন এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি শেষে ওদের বাসায় গিয়েও আরো দুই তরফা খেয়ে নেওয়ার ভুলটা হতো না আমাদের কারোরই । এ ছাড়া ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে স্কুলের শিক্ষকদের সাথে দেখা করে একটা নির্মল পরিতৃপ্তি আমরা সবাই পেতাম । সময়ের সাথে সাথে আজ অনেক কিছুই পরিবর্তিত । কিন্তু এ দিন কোনো সময়েই যেন আলাদা নয়। চৌধুরী বাড়িতে কাজ করতে আসা ময়নার মা আজও পায় নতুন কাপড়, পোলাওকোরমা,রেজালা খাওয়ার সুযোগ । আর চৌধুরী সাহেবও ভুলে যায় ধনী-গরিবের বিভেদ । বিদেশে বাস করা প্রবাসী মুসলমানরাও নামাজ পড়ে কোলাকুলি করে পালন করছে ঈদ। তারাও তাদের