বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন দুবাইয়ের বুর্জ খালিফায় প্রদর্শিত হল বাংলাদেশের মোশাররফ সহ ৮ কোভিড ফ্রন্টলাইন হিরোর ছবি

প্রকাশিত: ১০:২৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২১ 664 views
শেয়ার করুন

 বাংলাদেশের একজন রেমিট্যান্স সৈনিক কুমিল্লার মোশাররফ হোসেন শহীদ (৩৮) কোভিড যুদ্ধে আমিরাত সরকারের ফ্রন্টলাইন হিরো’র স্বীকৃতি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটা স্থানীয় সময় রাত ১২-০০টার ঘর ছুঁতেই কোভিড অতিমারির বিরূদ্ধে যুদ্ধরত লক্ষাধিক ফ্রন্টলাইনার হতে নির্বাচিত ৮ জন ফ্রন্টলাইন হিরোর ছবি ভেসে উঠল বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খালিফার গায়ে। এই আইকনিক গ্লোবাল ল্যান্ডমার্কের গায়ে ভেসে ওঠা ফ্রন্টলাইন হিরোদের মধ্যে চার নম্বরে ছিলেন বাংলাদেশের মোশাররফ। আর এই অর্জনে আমিরাতে কর্মরত ৮ লক্ষ বাংলাদেশীর হৃদয় হল আনন্দে উদ্বেল।  শুক্রবার রাতে তাঁর দুবাই সোনাপুরের মিউনিসিপালিটি অ্যাকোমোডেশান থেকে এ ব্যাপারে মোশাররফ তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে যেয়ে বলেন,”অবশ্যই ভাল লাগছে বিদেশের মাটিতে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে।” পাশাপাশি স্বভাবসুলভ বিনয় দিয়ে তিনি বলেন,”আমি তো একা না আমার সাথে আরো অনেকে ছিলেন,আরো অনেক বাংলাদেশীও। তাদের মধ্য থেকে তারা আমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন।”

২০০৬ সাল থেকে মোশাররফ দুবাই মিউনিসিপ্যালিটির এমার্জেন্সি পেস্ট কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট এ কাজ করছেন এই বাংলাদেশি। যখন করোনা এসে হানা দিল অ্যারাবিয়ান গালফ উপকূলের এই দেশটিতে তখন তাকে আত্মসুরক্ষা এবং জীবানুমুক্তির কাজে ব্যবহৃত কেমিক্যালের মিশ্রণ ও ব্যবহারের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।করোনা বীর মোশাররফ বললেন “মাস্ক, গ্লাভস, ফেইস শিল্ড,প্রটেক্টিভ সুট এ সজ্জিত হয়ে কারফিউ চলাকালে কখনো হেভি ভেহিকলে, কখনো বাইকে কখনো ড্রোন এর মাধ্যমে জীবাণু মুক্তির কাজ করতে হতো আমাদেরকে। কাজগুলো সহজ ছিল না। কিন্তু আমি দিনের পর দিন রাতের পর রাত কাজ করে যেতাম,বুঝতে পারতাম এটা কত জরুরী। অন্যদিকে আমার পরিবার-পরিজন উৎকণ্ঠায় থাকত আমি আবার করোনায় আক্রান্ত হয় কিনা। ৭ ভাই দুই বোনের বড় পরিবার আমাদের।সবাই আমার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমি জানি আমার দায়িত্ব কত গুরুত্বপূর্ণ।আমাদেরকে করোনা মোকাবেলা করতে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে হবে। আমি স্বপ্নে দেখি আমার শিশু কন্যাকে একদিন বুকে জড়িয়ে ধরবো, সে দিনটির স্বপ্নে আমার কাটে।”


ব্যক্তিগত ত্যাগের বিনিময়ে নাগরিক সুরক্ষায় কাজ করার জন্য শহীদের ত্যাগী ভূমিকা আমিরাত প্রবাসে লাল সবুজের বাংলাদেশকে মহীয়ান করলো আরেকবার।
কোভিড-১৯ এর বিরূদ্ধে আমিরাতে সর্বাত্মক যুদ্ধের পুরোভাগে ছিলেন ইউএইর ইমার্জেন্সি এন্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্টের পরিচালক এবং আবুধাবি পাবলিক হেলথ এর মহাপরিচালক ডঃ মাতার আল নুয়েইমি।এ যাবতকালের সবচে’ চ্যালেঞ্জিং যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি জাতিকে এ সংকট মোকাবেলায় সাহায্য করছেন।

ফ্রন্টলাইন হিরোদের মধ্যে আরো যাঁদের বুর্জ খালিফা’র ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করা হয় তাঁদের মধ্যে ছিলেনঃ
★হামদা আল হাম্মাদি।দুবাইর এয়ার উইং অ্যাম্বুলেন্স ইউনিটের প্রথম আমিরাতি মহিলা এডভান্সড প্যারামেডিক তিনি।নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে তুচ্ছ করে হামদা দেশের জন্য নিরলস আত্মত্যাগ করে এ স্বীকৃতি পেয়েছেন।

★ইসরা আল আগা আজমান মেডিকেল কলেজ ও শারজাহ হেলথ সেন্টারের একজন ভোলান্টিয়ার।অতিমারির সবচে’ কঠিন দিনগুলোয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর্তপীড়িতের সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় হাজারো স্বেচ্ছাসেবীর মধ্য থেকে তাঁকে ফ্রন্টলাইন হিরোর স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

★আমর বাদর আল বুসায়েদি এমিরেটস রেড ক্রিসেন্ট টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইউনিটের প্রধান।তিনি মনে করেছেন দেশ ও মানবতার জন্য আত্মত্যাগের এটাই উপযুক্ত সময়।তাই নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরেও নিরলস কাজ করে ন্যাশনাল হিরোর স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।

★ডাঃ ডেভিড সাইমন জীবনের ঝুঁকিতে থাকা মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের বাঁচাতে দিনরাত কাজ করছেন।কোভিড অতিমারির কঠিন দিনগুলোয় তাঁদের” না ছিল দিন না ছিল রাত” আর তাতে একসময় নিজেও কোভিড পজিটিভ হয়ে পড়েন।চলে যান আইসোলেশানে,কিন্তু সেখান থেকেই পরিচালনা করতে থাকেন টিমকে।আর এই ত্যাগ তাঁকে এনে দেয় ফ্রন্টলাইন হিরোর স্বীকৃতি।

★জয়নাব আহমদ ফাহিমের বাবা স্বপ্ন দেখতেন তাঁর কন্যাদের একজন নার্স হবেন।বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে জয়নাব নার্সের পেশায় আছেন তিন দশক ধরে।কোভিড অতিমারির এই সময়ে একজন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল হয়ে নিজের বয়স ও পরিবার পরিজনদের কথা ভুলে পেশার জন্য সর্বাত্মক ত্যাগ স্বীকার করায় আজ একজন হিরো তিনি।

★কর্নেল মোহাম্মদ আল খুরি আবুধাবি ক্যাপিটাল পুলিশের উপপ্রধান। আবুধাবিতে কোভিড অতিমারির দ্রুত সংক্রমণের সময় নিবিড়ভাবে কাজ করতে যেয়ে তিনি নিজে কোভিড আক্রান্ত হলেও তাতে দমে না যেয়ে সাহস ও আত্মত্যাগের সাথে টিম মোবিলাইজ করে বহু জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখায় তাঁকে দেয়া হয় ফ্রন্টলাইন হিরোর স্বীকৃতি।

★কর্নেল থুরাইয়া আলী আল হাশমি আবুধাবি পুলিশের মেডিকেল সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের প্রধান।দিনের পর দিন অতিরিক্ত কাজের চাপে ভেঙ্গে না পড়ে কোভিড চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চুড়ান্ত ব্যক্তিগত ভূমিকা

রাখতে যেয়ে নিজেকেও করোনা মোকাবেলা করতে হয়েছে কিন্তু দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হননি যা তাঁকে কোভিড ফ্রন্টলাইন হিরোর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে।
কোভিড-১৯ যুদ্ধ মোকাবেলায় এসব বীরের চুড়ান্ত আত্মোৎসর্গ ইতিহাস হয়ে থাকবে আর এই ইতিহাসে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাবাহী মোশাররফরা তাঁদের ত্যাগী ভূমিকার জন্য সে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবেন।