সফল মানুষ কেন ব্যক্তি জীবনে অসুখী

প্রকাশিত: ১২:৩৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১ 590 views
শেয়ার করুন
পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ রয়েছে। সুখী আর অসুখী মানুষ। সবকিছু থাকার পরেও বহু মানুষ নিজেকে অসুখী বলে মনে করেন। আপনার যদি কোনো বিষয়ে ঘাটতি থাকে তাহলে নিজেকে অসুখী মনে হতে পারে। অনেকেই নিজের মনের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারেন না। আর উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের সব সময়েই নানা দক্ষতা ও অর্জন করতে দেখা যায়। তারা এসব বিষয়ে সাধারণত ভালো হন। তার পরেও তারা সন্তুষ্ট হন না এবং আরও ভালো করার জন্য অসন্তুষ্টিতে ভোগেন। কারণ তারা নিজেদের যে পাল্লায় মাপেন তা ভুল।
 
বহু মানুষই সামাজিক তুলনা করেন তাদের অর্জন বিষয়ে, যা সত্যিই একটি ভয়ঙ্কর বিষয়।লোকে ভাবে, সাফল্যই সুখের আকর। কিন্তু সাফল্য কী? টাকাপয়সা, ক্ষমতা ও খ্যাতি কুড়োনোর মধ্যেই সাফল্য সীমাবদ্ধ? তাহলে এসব অর্জনের পরও একজন মানুষের হৃদয়ে ধূসর শূন্যতা সৃষ্টি হয় কীভাবে? এর কারণ বোধ হয় মানুষের তুলনা করার প্রবণতা। অন্যের বিত্তবৈভব আর খ্যাতির সঙ্গে তুলনা করে নিজেকে ছোট করে দেখার চোখটা তো মানুষেরই। সাফল্য মানে কি শুধুই এসব? এর বাইরেও এমন কিছু চিহ্ন রয়েছে, যা সফলতার ইঙ্গিতবাহী। কিছু মানুষ আছেন, তাঁরা যে জিনিসেই হাত দেন – তাতেই সফল হন। অনেকে বলেন, তাঁদের হাতে নাকি জাদু আছে। তাঁরা একের পর এক লক্ষ্য ঠিক করেন, আর সফল হন। ব্যর্থতা যেন তাঁদের ধরতেই পারে না। আর্থিক, সামাজিক, পারিবারিক, শারীরিক সুস্থতা, আত্মিক অবস্থা – সবদিক দিয়েই তাঁরা সফল ও সুখী। জীবন নিয়ে তাঁদের তেমন কোনও আফসোস থাকে না। আবার কিছু মানুষ আছে, যারা জীবনের একটি দিকে সফল এবং সুখী।
 
কেউ হয়তো শুধু আর্থিক ভাবে সফল, কেউ হয়তো পারিবারিক ভাবে সুখী, বা অন্য কোনও দিকে সফল বা সুখী। কিন্তু এরা বাকি সবকিছু নিয়েই আফসোস করে। হয়তো অনেক টাকা আছে, কিন্তু পরিবারে শান্তি নেই। আবার পারিবারিক ভাবে সুখী, কিন্তু প্রায়ই টাকার অভাবে ঝামেলায় পড়তে হয়।আসলে পৃথিবীতে খুব কম মানুষই আছেন যাঁরা জীবনে সব দিক দিয়েই সফল। লক্ষ্য কেন্দ্রিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে মানুষ নিজের ওপর জোর খাটায়। যা ভালো লাগছে সেটা করার বদলে, যে কাজটি করলে তার লক্ষ্য পূরণে সুবিধা হবে – সেটি করে। এই ধরনের মানুষ প্রচন্ড্র ঘুম আসলেও কাজ শেষ না করে ঘুমায় না। শিডিউলের বাইরে এক পা-ও ফেলে না। এর ফলে সে হয়তো ক্যারিয়ার এবং আর্থিক দিক দিয়ে সুখী হবে, কিন্তু পারিবারিক বা আত্মিক দিক থেকে অপূর্ণ ও অসুখী থাকবে।লক্ষ্য কেন্দ্রিক জীবনযাপন করা মানুষরা জীবনের বড় লক্ষ্য গুলো বেশি পূরণ করতে পারেন। এর কারণ তাঁরা তাঁদের বেশিরভাগ সময় ও শ্রম লক্ষ্যের পেছনে দেন। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন ও পরিশ্রম করেন। অন্যদিকে অভ্যাস কেন্দ্রিক জীবনযাপন করা মানুষরা বড় লক্ষ্য ঠিক করলেও সেটার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে চান না,পরিবার হল সমাজ তথা দেশ জাতি গঠনের প্রধান সূতিকাগার। অনুকূল ও প্রেমময় পারিবারিক পরিবেশ মেধার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 
সাফল্যকে তরান্বিত করে, মনকে প্রশান্তি ও আনন্দে পরিপূর্ণ করে তোলে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সর্ম্পক যত গভীর, মমতাপূর্ণ, পারস্পরিক আচার-আচরণে যত ইতিবাচক, সুশৃঙ্খলও সুপরিকল্পিত হবে জীবনে তত সুখ, পরিতৃপ্তি ও সার্থকতা আসবে। সুখী পরিবারের ভিত্তি হচ্ছে ভালোবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা, শৃঙ্খলা ও আত্মিক একাত্মতা। সব সময় মনে রাখতে হবে, পরিবারে নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপুরক। এই পরিপুরক একাত্মতাই সুখ সমৃদ্ধির ভিত্তি। তাই পরিবারের সদস্যদের পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস, দৃস্টিভঙ্গি, অভ্যাস ও আচরণে যত প্রো- একটিভ ও সুশৃঙ্খল হবে ততই পরিপুরক একাত্মতা সৃষ্টি হবে, জীবনে আসবে স্বর্গীয় প্রশান্তি।সফল পরিবার গঠনে নারী ও পুরুষ উভয়ের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে, আচরণে, সন্তান পালনে, সামাজিক ক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে, বন্ধুত্বসহ নানা ক্ষেত্রে করণীয়সমূহ।
 
ব্যক্তি জীবনে- সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ। জীবনে কী নেই তা নিয়ে না ভেবে কী আছে তা নিয়ে ভাবুন। স্রষ্টায় অবিচল বিশ্বাস ও আস্থা রাখুন। নিয়মিত অবশ্যিক ইবাদত/উপাসনা করুন। সব ব্যাপারে সময় ও নিয়মানুবর্তী হোন। পরিকল্পিতভাবে সব কাজ করুন। শুদ্ধ ও সুন্দর ভাষায় কথা বলুন। পরচর্চা ও গীবত করবেন না। মিথ্যা বর্জনে সচেষ্ট থাকুন। নিয়মিত আত্মপর্যালোচনা করুন।আচরণে-সব সময় প্রো-একটিভ থাকুন ও হাসিমুখে কথা বলুন। পরিবারের মধ্যে সালাম চর্চা করুন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন। কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করুন। নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। রাগ ও ক্রোধের বশে কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। বিতর্ক ও ঝগড়া কৌশলে পরিহার করুন। আবেগ প্রকাশে কুশলী হোন। কর্মচারী ও গৃহকর্মীর সঙ্গে মানবিক আচরণ করুন। কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও ঠকানোর চেষ্টা করবেন না। কারো প্রতি ক্ষোভ ও ঈর্ষা পোষণ করবেন না। স্বজ্ঞানে অন্যের ক্ষতি করবেন না। জীবনের সর্বক্ষেত্রে অপচয়কে পরিহার করুন। অহংকার ও লোক দেখানো আচরণ না করে আন্তরিক ও বিনয়ী হোন।
 
জীবনে সাফল্য থাকলে ব্যর্থতা থাকবেই। সফল মানুষেরা এটা জানেন। তাই নিজের সাফল্যে তাঁদের গরিমা খুব কম। এর বদলে কর্মীদের সঙ্গে ভালো আচরণ এবং তাঁদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করাই সফল মানুষদের ধ্যানজ্ঞান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো আশপাশের সবাইকে তাঁরা সম্মান ফিরিয়ে দেন সম্মান পাওয়ার বিনিময়ে। আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত নিজেদের সফলতার জন্য পরিবার সমাজ দেশের প্রতি আমরা যেন সহনশীল হলে চির সুখি।