আওয়ামী অনুভুতির মানুষরা ধীরে ধীরে বিলিন হয়ে যাচ্ছেন এখন শেখ হাসিনার পাশে আলোর মানুষ

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামরা আর আসবেন কি? বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে এত দুরে যেত হলো কেন?

প্রকাশিত: ৪:০৯ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২০ 479 views
শেয়ার করুন

(২) দ্বিতীয় অংশ গত সংখ্যার  পর —
.
১৯৮৮ সালের ১৭ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বৃট্রিশ পার্লামেন্টের তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেতা নিল কিনোকের সাথে সাক্ষাতের সময় ঠিক করে আমরা বৃট্রিশ পার্লামেন্টে উপস্থিত হই। সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান সাধারন সম্পাদক আহমদ হোসেন জোয়ারদার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাজেদা চৌধুরী সুলতান শরিফ এবং আমি আর বজলুই ছিলাম বলতে গেলে নেত্রীর প্রোটকলের দায়িত্বে। রেষ্টুরেন্টের পাশাপাশি নতুন দিন পত্রিকায় কাজ করতাম নিল কিনোকের সাথে সাক্ষাতের আগে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছিলেন পার্লামেন্টের ছবি এবং নিউজ জরুরী ভিত্তিতে পাঠাবে। নিল কিনোক একটি সাদা মাটির কবুতর শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছিলেন পরে সংখ্যা নতুনদিনে আমার তুলা ছবি এবং লেখা দিয়ে পত্রিকার হেড লাইন নিউজ ছিল,হেড লাইন ছিল “নিল কিনোক শেখ হাসিনাকে শান্তির বানী উপহার দিলেন- ছবিঃ শাহাব উদ্দিন চঞ্চল।”(সম্প্রতি আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী আমার কাছ থেকে অনুরোধ করে ঐ আসল ছবিটি নিয়ে শেখ হাসিনার একটি ডকোমেন্টারীতে লাগিয়েছেন কথা ছিল সৌজন্যে আমার নামটি ব্যবহার করবেন কিন্তু করেন নি।) নিল কিনোকের সাথে সাক্ষাৎ শেষে আমারা আতাউর রহমান খানের রাজদুত রেষ্টুরেন্ট ডিনারের যাওয়ার কথা থাকলেও সেদিন নেত্রীকে কনভিন্স করে এসেক্সের বাকিং এ আমার আত্মীয়ের রেষ্টুরেন্টে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছিলাম নেত্রী আমাকে বললেন খান সাহেব যদি কিছু মনে করেন? আমি বললাম উনাকে কনভিন্স করেছি পরের দিন সময় ঠিক করেছি তিনির রেষ্টুরেন্ট যাবার জন্য, তখন আমরা বার্কিং এ চলে যাই রেষ্টুরেন্টর মালিককে জানিয়ে দিয়েছিলাম মালিকের বিশ্বাস হয়নি প্রথমে কারন নোটিশ ছাড়া হঠাৎ করে আয়োজন করেছিলাম।সেখানে গিয়ে ডিনার করি এবং ঐদিন রেষ্টিরেন্টে বসে পরে এসেক্স আওয়ামীলীগ নামে একটি কমিটিও গঠন করি,সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমিন সহ যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ এবং কমিউনিটির কিছু নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
.
আশারফ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয় ১৯৮৬ সালে পূর্ব লন্ডনের ক্যানন ষ্টিটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বঙ্গবন্ধুর প্রেস সেক্রেটারী আমিনুল হক বাদশাহ ভাইয়ের ছোট ভাই শিল্পী মান্না হকের ইয়েলো ব্রিক রোড নামের ট্রেল্সেশন সার্ভিসের অফিসে, সাথে আমাদের প্রিয় শিল্পী শ্রদ্ধেয় আব্দুল জাব্বার ভাই ছিলেন আজ তাঁরা তিনজনই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের বিয়ানীবাজারের দেবারাই গ্রামের সাবেক কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলাম সিরাজ (ব্যন্ডন সিরাজ) আর অফিসে বসা ছিলেন সিলেটের জকিগঞ্জের আব্দুল খালিক ছানু ভাই।আশরাফ ভাই কে ছিলেন কোন ধরনের রাজনীতিবিদ ছিলেন এটা আমার নতুন করে বলার কিছুই নাই আওয়ামী রাজনীতির অনুভুতির প্রবর্তক শীতল মস্তিস্কের কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহনকারী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে -সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক মাসকাওয়াথ আহসান বলে ছিলেন একটি লেখায় আলোর মানুষ সৈয়দ আশরাফ থাকুন তাঁর শূচিতার জগতে; শতায়ূ হোন; আমার চোখে আপনি একজন ‘দার্শনিক রাজা’।

এক-এগারো সেনা সমর্থিত সরকার আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করলে; সৈয়দ আশরাফ উনার শূণ্যতা পূরণ করেছিলেন। রাজনীতিতে দুই প্রজন্মে এমন অকৃত্রিম বন্ধু পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়।এখন প্রধানমন্ত্রীর পাশে একজন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নাই।একান্ত বন্ধু বান্ধবের আড্ডাতে যত ধরনে কথাবার্তা চলে তার কোনটি বা বিভিন্ন রসাত্মক উক্তিতে শালীনতার ভিতরে থেকে আপত্তিকর ভাষাও ব্যবহার করেছি আমরা কিন্ত কেন জানি আশরাফ ভাই আমাকে আপনি বলে সব সময় সন্মোধন করতেন। মৃত্যুর ক’দিন আগেই ব্যাংককে তার সাথে ছিলাম বলে ছিলেন ভাইজান আবার বলছি আমি আপনাকে ৩০ বছরের বেশী দিন থেকে জানি আমি আপনার ভিতরের চঞ্চলকে দেখেছি এটাকে বাঁচিয়ে রাখবেন।আহারে আশারফ ভাই কানে বাজে তোমার সব কথা কিন্তু এখন কিছুই লিখতে পারছিনা,মোটেই কলম চলে না লিখতে গেলে ইমোশনাল হয়ে যাই। তবে অবশ্যই লিখবো বেঁচে থাকলে-

সেদিন লন্ডনের বার্কিংএ রেষ্টুরেন্টে ডিনার শেষে ৬০ কিং এভিনিউতে ফিরে গিয়ে আশরাফ ভাই আমাকে বলছিলেন ভাইজান এক ফাঁকে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর লন্ডন আসার কথা আলাপ করে নিবেন, তাঁদের সম্পর্ক ভাই-বোনের মত। নেত্রী এশার নামাজ পড়ার পর আমি কাদের সিদ্দিকী স্বদেশ প্রত্যবর্তন কমিটির একজন হিসাবে নেত্রীকে আমাদের এখানকার পরিকল্পনার কথা বলেছিলাম তিনি সাথে সাথে সাড়া দিয়ে বলেন আমার জন্য তোমরা যা করেছো কাদেরের বেলাও ঠিক তা করিও। ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্টে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যার একমাত্র সক্রিয় প্রতিবাদকারী কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম সেদিন পাসপোর্ট ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীর বিশেষ ছাড়পত্র নিয়ে লন্ডনে আসেন। ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে জনাব আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, সাবেক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি জনাব ফজলুর রহমানও বাংলাদেশ থেকে লন্ডন আসেন। আমরা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী স্বদেশ প্রত্যবর্তন কমিটি যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে হিত্রো বিমানবন্দরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে স্বাগত জানাই। যুক্তরাজ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর এই সফর বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বৈরাচারী শাসন এবং স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকে তরান্বিত করতে কতটুকু কাজ করেছিলো এবং আন্তর্জাতিক ভাবে কি পরিমান গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেছিলো আজকের নেতারা অনেকেই জানেন না বা জানার কথা নয়। আমি নেত্রীর কথামত প্রায় ১২ সপ্তাহ কাজ ছেড়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সাথে একত্রে ছিলাম। ভাই বোন দুজনকে খুব কাছে থেকে দেখেছি, হাজারও স্মৃতি আজ চোঁখের সামনে ভাসছে–দেশের এই কঠিন সময়ে।
.
আগেই লিখেছি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া এরশাদ রাজনীতিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করেছিলেন আর জিয়াউর রহমানতো বলেই ছিলেন I will make politics difficult for the politicians. এই Difficult রাজনীতিকে স্বৈরাচারী এরশাদ More difficult করেছিলেন এবং চরিত্রহীনদের রাজনীতিতে এনেছিলেন। এরশাদ দেশে মানবতা লঙ্গন মানবতা বিরোধী অপরাধ এবং কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে লন্ডনের কথা বলার জন্য Amnesty International এ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী’ সাথে সাক্ষাতের জন্য আমরা একটা তারিখ ঠিক করে Appointment করি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি-জেনারেলের কাছে অভিযোগের ফলে বাংলাদেশে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন গতি সঞ্চার করে এবং স্বৈরাচারের পতন হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষণা বিভাগের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি-জেনারেল ইয়ান মার্টিন (Ian Martin)এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার আরো এক গবেষক এলিজাবেথ নিসান (Elizabeth Nissan) ইয়ান মার্টিনের সাথে একই অফিসে কাজ করতেন তার সেক্রেটারী হিসাবে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। Amnesty International এর সেন্টাল লন্ডনের 1 Easton St,Islington, London WC1X 0DW এর অফিসে ইয়ান মার্টিনের সাথে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সভা হয়। সেদিন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান কার্য্যালয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান সাধারন সম্পাদক আহমদ হোসেন জোয়ারদার বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, সাবেক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি জনাব ফজলুর রহমান, সুলতান শরিফ এবং আমি শাহাব উদ্দিন চঞ্চল Appointment মোতাবেক যথাসময় উপস্থিত হই।
চলবে——-

পর্ব: ০১

————————–
লেখক : লন্ডন প্রবাসী রাজনীতিক সাংবাদিক। ইমেইল chanchal_math@yahoo.co.uk