স্পেনে চতুর্থ দফায় লকডাউন

প্রকাশিত: ৬:৩৩ অপরাহ্ণ, মে ৯, ২০২০ 485 views
শেয়ার করুন

করোনা সংকটের কারণে স্পেনে আরোপিত কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হলেও সামাজিক দূরত্বের বিধানসহ কিছু বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ২৪ মে পর্যন্ত চতুর্থ দফায় আবার বাড়ানো হয়েছে। বুধবার (৬ মে) কংগ্রেসে এ–সংক্রান্ত বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোটের প্রস্তাবে মোট ৩৫০ ভোটের মধ্যে ১৭৮ ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া স্পেনে করোনা মহামারির প্রথম পর্যায়ের সমাপ্ত ঘোষণা করেছেন তিনি।

বুধবার (৬ মে) স্থানীয় সময় বিকেলে কংগ্রেসে এ–সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, ‘আমরা এখন বলতে পারি, মহামারিটির প্রথম পর্যায় আমরা পেরিয়ে গেছি। তবে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে এবং ভাইরাসের প্রতি আমাদের কঠোর নজর রাখতে হবে।’ সানচেজ বলেন, মানুষ এত দিন নিয়মবিধি মেনে চলায় তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও মানুষের আচরণের ওপর বর্তমান সংকটের গতিপ্রকৃতি নির্ভর করবে।

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, দেশটিতে আরও দুই সপ্তাহ এই স্টেট অব এলার্ট চলবে। দেশের জাতীয় সতর্কতার মেয়াদ ২৪ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ফলপ্রসূ হলে জুন মাসের শেষের দিকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরবে স্পেন।

এর আগে ১৩ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রথম দফা, ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা এবং ১৫ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত তৃতীয় দফায় বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। গত বুধবার কংগ্রেসে এ–সংক্রান্ত বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ ভোট প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৭৮ ভোট পেয়ে লকডাউনের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হয়। বিপক্ষে পড়ে ৭৫ ভোট এবং ৯৭ জন ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকেন।

স্পেনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ সন্তোষজনক হারে কমেছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করে। ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্য অনুসারে, স্পেনে জরুরি অবস্থা শুরুর পর থেকে, অর্থাৎ ১৪ মার্চের পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ ও ৪ মে সর্বনিম্ন ১৬৪ জন মৃত্যুবরণ করেছে।

চলমান জরুরি অবস্থার অনেক বিষয়ে শিথিলতা এনে সরকার ৪ ধাপের একটি পরিকল্পনা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে। ২৬ এপ্রিল থেকে শিশু–কিশোরদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেওয়ার পর ২ মে থেকে বয়স্কদেরও ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সরকারের ৪ ধাপের পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন এবং তা ফলপ্রসূ হলে জুন মাসের শেষের দিকে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাবে স্পেন, এমন আশার কথা গত ২৮ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্ত করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসে ‘হ্যাঁ’–এর পক্ষে সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হলে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে একটি প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল দেশটির সংবাদপত্র এল পাইস।

প্রতিবেদনটিতে স্পেনের লা লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক জেরার্দো পেরেজের মন্তব্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, কংগ্রেসে ‘না’ সমর্থন জয়ী হলে জরুরি অবস্থার কার্যক্রমগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং সরকার জনগণের ওপর ইতিমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো চাপাতে পারবে না। তবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপগুলো স্পেনের সাধারণ জনগণের মধ্যে সমাদৃত হয়েছে, এমন জনসমর্থন ভোটের জরিপের ফল দেখিয়েছে স্থানীয় টিভি লা সেক্সথা। তবে সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কংগ্রেসে সাংসদদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হলো পেদ্রো সানচেজের দল।

এদিকে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাস পুনরায় জন্ম নেওয়ার উচ্চ আশঙ্কা রয়েছে দেশটিতে। তবে তা হতে পারে অনেক ছোট পরিসরে। তাই সামনের মাসগুলোর জন্য জরুরি প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথাও বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে স্পেন। ইতিমধ্যে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আড়াই লাখের ওপর মানুষ। মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ২৬ হাজার ২০০ (৯ মে পর্যন্ত)। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭০০ মানুষ।