
এই বিবর্ণ কালো এবং সাদা ছবিটি ১৯৯২ সালের কুয়েতের সমুদ্র সৈকতের। ২০২০ সালে ছবির দূরবর্তী অংশটি অবশ্যই আধুনিক কুয়েত দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়ে গিয়েছে।
তবে ছবিটির আকর্ষণ বিন্দু এটির দূরবর্তী অংশটি নয় বরং এটির কাছের দিকটি। দৈনিক আরব টাইমসের আর্কাইভ থেকে (মিঃ জারাল্লাহকে ধন্যবাদ) খুঁজে পাওয়া এই ছবিতে কুয়েতের সমুদ্র সৈকতে একদল বাংলাদেশী সৈন্যকে মাইন অনুসন্ধান করতে দেখা যাচ্ছে। এই সৈকতটি থেকে এর আগেও মাইন সাফ করা হলেও বাংলাদেশী মাইন সুইপার দ্বারা আরও একবার খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়। যেহেতু তখন এরকম ধরণের ঘটনাই ঘটছিল, বাংলাদেশী মাইন সুইপাররা পরে একই সমুদ্র সৈকতে আরো কয়েকটি লুকোনো বিস্ফোরক পেয়েছিলেন।
তারা তখনকার সবচেয়ে বেশি সরঞ্জামসম্পন্ন মাইন সুইপার ছিলেন না। তারা খুবই সাধারণ মাইন সনাক্তকারী যন্ত্র এবং ম্যানুয়াল অনুসন্ধানে থাকা তাদের দক্ষতার উপর নির্ভরশীল ছিলেন, যার কারণে অবশ্যই তারা অনেক বড় ঝুঁকিতেও ছিলেন। তারা ভালো ভাবে যে তাদের কাজ করতে পেরেছিলেন, এ নিয়ে কুয়েতিদের মনে কোন সন্দেহ নেই এবং তারা এই মাইন সুইপারদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।
একজন বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার এ সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। তিনি ইরাকী আগ্রাসনের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ কুয়েতী সরকারী দফতরে কর্মরত ছিলেন। অফিসটি ইরাকিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সময় তিনি সার্ভার রুমে প্রবেশের সাহসী প্রচেষ্টাটি করেছিলেন। তাঁর এই সাহসিক প্রচেষ্টার কারণেই অফিসের অনেক মূল্যবান ডাটাবেস সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিন পর অফিস দখল করে রাখা ইরাকি দ্বারা তাকে ডাক পাঠানো হয়। সম্ভাব্য বিপদ অনুভব করতে পেরে তিনি কুয়েত ছেড়ে ইরান, পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্য দিয়ে ভারী এক কঠিন সড়ক যাত্রা পারি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এই বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার স্বাধীনতার পরে কুয়েতে ফিরে আসেন। তিনি যখন কুয়েত বিমানবন্দরে অবতরণ করেন, একজন কুয়েতী তাঁর বাংলাদেশী পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথেই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। সেই কুয়েতি তাঁকে বলেছিলেন যে বাংলাদেশি মিলিটারি কুয়েতে খুব দুর্দান্ত কাজ করছে।
অতীতের সকল ঘটনার প্রমাণ হিসাবে সৈকতটি আজও রয়েছে। কত ঢেউ এসে ফিরে গিয়েছে এবং সামনেও আসবে, কত পর্যটক এই সৈকতটি দেখেছে এবং দেখবে, কত কুয়েতি প্রজন্ম এর উপর হেটে স্বাধীন রাষ্ট্রের বাতাস গায়ে মাখিয়েছে এবং আরো কত প্রজন্ম সামনে হাটবে। এই সাদাকালো ছবিটি প্রমান হয়ে থাকবে, এই দু রাষ্ট্রের অটুট বন্ধনের। আগামী প্রজন্মের কাছে হয়ে থাকবে এক শিক্ষা। এই ছবি যেন নীরবেই বলে চলেছে : ‘বিপদে বন্ধুর পরিচয়’।