প্রায় দুইবছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন বড়লেখা উপজেলার বোবারথল গ্রামের আলিম বেগম (৫০)। তাঁর কোনো ছেলে সন্তান নেই। চার মেয়ের মধ্যে দুজনকে বিয়ে দিয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর পাড়া-প্রতিবেশীদের সহায়তায় দুই মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে চলছিল তাঁর সংসার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সংকটে পড়েছেন আলিম বেগম। কারণ আগের মতো পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে তিনি আর সহায়তা পাচ্ছেন না। তাই দুই মেয়েকে নিয়ে চরম কষ্টে আলিম বেগমকে দিন কাটাতে হচ্ছে।
আলিম বেগমের দুরবস্থার কথা জানতে পেরে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁর বাড়িতে চাল, ডাল, আলু, ছোলা, পেঁয়াজ, তেল, লবণ, মরিচ, হলুদ ও সাবান নিয়ে হাজির হন। খাদ্যসামগ্রী পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
আলিম বেগমের মতো এরকম ১৬০ পরিবারকে খুঁজে তাদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে ‘প্রজেক্ট হাসিমুখ’ নামে মৌলভীবাজারের বড়লেখা পিসি হাইস্কুলের ২০১৩ ব্যাচের প্রায় ৩০ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। গত মঙ্গলবার ও বুধবার (২৪ জুন) দিনভর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১৬০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বড়লেখা পিসি হাইস্কুলের ২০১৩ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে একটি গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপে তারা গত ১১ জুন করোনাভাইরাসের কারণে সংকটে পড়া মানুষের জন্য কি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর তারা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। যার নাম দেন ‘প্রজেক্ট হাসিমুখ’। গত ১১ জুন থেকে ২০ জুন তারা প্রায় দেড়লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। এরপর তারা দুইদিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অসহায় পরিবারকে খুঁজে তাদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। প্রত্যেক পরিবারকে ১২ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি ছোলা, ২ কেজি পেঁয়াজ, ১লিটার তেল, ১ কেজি লবন, মরিচ, হলুদ ও সাবান দেওয়া হয়েছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী নয়ন ইসলাম ও আসিফ মোক্তাদির বলেন, ‘ফেসবুক গ্রুপে আমরা হঠাৎ করে আলোচনা করে করোনাভাইরাসের কারণে সংকটে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিন্ধান্ত নিই। এরপর দেশ-বিদেশে থাকা সব বন্ধুরা মিলে মাত্র নয়দিনে দেড়লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি। অনেকে আত্মীয়-স্বজন টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। সবাই যে এত দ্রুত সাড়া দেবেন তা কল্পনা করিনি। দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালো লাগছে। সবার উচিত এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাহলে মানুষকে আর না খেয়ে থাকবে না।’


