বাহরাইনে এ পর্যন্ত ২১৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় বাহরাইনে আক্রান্তদের এশিয়ার দেশগুলোর বাংলাদেশীদের সংখ্যাটা সর্বোচ্চ। রাজধানী মানামায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাহরাইনে করোনাভাইরাসের গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আক্রান্তের পর থেকে প্রায় দুই মাসে দেশটিতে সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২ হাজার। কিন্তু ২১ এপ্রিল থেকে হঠাৎ করেই তা বেড়েছে। গত ১০ দিনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার। নতুন করে সংক্রমিত লোকজনের মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তাদের মধ্যে বাংলাদেশিই ২১০ জন।
বাহরাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওয়াল্ড মিটারের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩ হাজার ১৬৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১ হাজার ৫৫৩ জন এবং ৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ২ হাজারের বেশি অভিবাসী শ্রমিক।
জানা গেছে, বাংলাদেশের ২১৭ জন ছাড়া ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের প্রত্যেকের ১০০ এর বেশি নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্তের শিকার হয়েছেন।
অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বাহরাইনের কর্তৃপক্ষকে। এই পরিস্থিতিতে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনার জন্য বাহরাইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল শেখ রশিদ বিন আবদুল্লাহ আল খলিফা গতকাল সকালে তাঁর দপ্তরে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ রশিদ বিন আল জায়ানি উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম জানান, মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের মাঝে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা প্রতিরোধে চার দেশের দূতাবাসের সঙ্গে কীভাবে সমন্বয় করে কাজ করা যায় তা নিয়ে দুই মন্ত্রী আলোচনা করেছেন। বাহরাইনের দুই মন্ত্রী দেশি-বিদেশি নির্বিশেষে সবাইকে সমান চিকিৎসা সুুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁরা।
বাহরাইন পুলিশের ওয়েবসাইটে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চার দেশের রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকের খবর প্রচার করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাহরাইনে অভিবাসী শ্রমিকেরা বেশ গাদাগাদি করে থাকেন। এতে করে তাদের মধ্যে দ্রুত সংক্রমণের বিষয়টি এখন স্পষ্ট হয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাহরাইন সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মূলত নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাহরাইন সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থায় এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়, যাতে করে তাদের কম জায়গায় বেশি জনকে থাকতে না হয়। এ ছাড়া অভিবাসী শ্রমিকেরা যাতে স্বাস্থ্যবিধিগুলো যথাযথভাবে মেনে চলে এজন্য চার দেশের রাষ্ট্রদূতকে তাদের নাগরিকদের সচেতন করতে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গত বুধবার এক খবরে জিডিএন জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১১ হাজার অভিবাসী কর্মীকে কোয়ারান্টিনে রাখার পাশাপাশি তাদের বিনামূল্যে খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে কতৃপক্ষ।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাহরাইনে যে সব অভিবাসী শ্রমিক আবার নতুন করে বৈধতা পেয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশের নাগরিক। এ মুহুর্তে বাহরাইনে প্রায় দুই লাখের মত বাংলাদেশের কর্মী কাজ করছেন। নানা কারণে এদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের কর্মীরা মূলত নির্মাণ শ্রমিক, গাড়ি চালক ও পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া প্রায় হাজার পাঁচেক বাংলাদেশি ছোট-খাট ব্যবসাও পরিচালনা করেন।
