সিলেটের বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরে ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগে আক্রান্ত গবাদি পশু: নেই চিকিৎসা

ইমন শাহ ইমন শাহ

ভ্রাম্যমান সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১২:০৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২০ 512 views
শেয়ার করুন

 

সিলেটের বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলায় গবাদি পশুর গায়ে ভাইরাসজনিত চর্মরোগ ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই রোগের ভ্যাকসিন আবিস্কার না হওয়ায় ইতোমধ্যে দুই উপজেলায় সংক্রমিত হয়ে বেশ কয়েকটা গবাদি পশু মারা গিয়েছে বলে জানা গেছে। নতুন এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় খামারি ও গবাদি পশু পালনকারীরা চিন্তিত রয়েছেন। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে আরো বিপাকে পড়েছেন তারা।

বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার খামারী ও পশু পালনকারীরা জানিয়েছেন- অচেনা-অজানা এই রোগে হঠাৎ করে গরু জ্বরে আক্রান্ত হয়। সেই সঙ্গে গরুর গা ফুলে আস্তে-আস্তে বড়-বড় গুটি ফুটে ওঠে। একপর্যায়ে এসব গুটিতে দগদগে ঘা হয়ে গরুর চামড়ায় পঁচন ধরে। আক্রান্ত এসব গরুকে বিভিন্ন ওষধ খাওয়ানোর পাশাপাশি নানা প্রতিষেধক ব্যবহার করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতস্থান থেকে মাংস খসে পড়ে।

‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগের লক্ষণের বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন- এ রোগ মশা-মাছি, আটালি, আক্রান্ত পশুর লালা, নাক-চোখের ডিসচার্জ, ষাঁড়ের বীর্য, আক্রান্ত গরু-মহিষের দুধ এবং ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মধ্যমে ছড়ায় বলে জানা গেছে। অনুকূল পরিবেশে এ ভাইরাস ছয় মাস পর্যন্ত জীবিত থাকে। ভাইরাসজনিত এ চর্মরোগে শুধুমাত্র গরু-মহিষ আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত গবাদিপশু দুর্বল হয়ে ওজন কমে যায়, দুধ উৎপাদন হ্রাস পায় এবং চামড়ার গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। আক্রান্ত গবাদিপশুর শরীরে ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয় এবং গরু খাওয়া ছেড়ে দেয়। এই ছোঁয়াছে রোগটি যাতে ছড়ায় এক্ষেত্রে গরু-বাছুরগুলোকে একত্রে না রেখে আলাদা-আলাদা রাখতে হবে।

বালাগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে-২০১৮-১৯সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ উপজেলায় ২৭ হাজার ৭শ ৩১টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে গাভী ১১ হাজার ৬শ ৭৪টি ও মহিষ সাড়ে ৯শ। উপজেলায় গাভীর খামার ১৮টি, মহিষের ১০টি ও গরু মোটাতাজাকরণ খামার ছোট বড় মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ২৫টি। এই উপজেলায় কতটি গবাদি পশু আক্রান্ত হয়েছে বা কতটি গবাদি পশুকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে প্রাণী সম্পদ অফিসে এর সঠিক কোনো তথ্য নেই। বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজন জানিয়েছেন গ্রাম পর্যায়ে তারা সচেতনতাম‚লক নানা কায্যক্রম চালাচ্ছেন। কিন্তু দুই উপজেলায় সেরকম কোনো কায্যক্রম পরিচালনা করা করতে দেখা যায়নি বলে খামারী ও গবাদি পশু পালনককারীরা অভিযোগ করেছেন।

বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আজম উদ্দিন বলেন, কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে তার ৩টি গরু মারা যায়। গরুগুলোর বাজার ম‚ল্য প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। এবিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: তোফায়েল আহমদ বলেন, রাজাপুর গ্রামে মারা যাওয়া গরুগুলো লাম্পি স্কিন ডিজিজে ছিল না অন্য কোনো কারণেও মারা যেতে পারে। যেহেতু লাম্পি স্কিন ডিজিজের কোনো প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি তাই আমরা ওই পুরো গ্রামের গরুগুলোকে অ্যানত্রাক্সের ভ্যাকসিন দিয়েছি। আর লাম্পি স্কিন ডিজিজ হলে টেনশনের কিছু নেই, এই রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ গবাদি পশু সেরে উঠছে।
ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের বড় ইসবপুর গ্রামের মতবুলব চৌধুরী বলেন, তার তিনটি গরু এই রোগে আক্রান্ত। প্রথমে গরুর চামড়ার উপরি অংশে টিউমার জাতীয় উপসর্গ ও বসন্তের মতো গুটিগুটি দেখতে পাই। এরপর দুই একদিনের মধ্যেই গরুর শরীরজুড়ে গুটিগুটি হয়ে ঘায়ে পরিণত হয়েছে। অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েছেন কিন্তু রোগ সারছে না।

ওসমানীনগর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় প্রায় ৬৫হাজার গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি গাভীর খামার ও গরু মোটা তাজাকরণের ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫৬০টি খামার রয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে লাম্পি স্কিন ডিজিজে গবাদি পশু আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণী সম্পদ কেন্দ্রে প্রতিদিন ১০-১৫টি আক্রান্ত গরুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আক্রান্ত গরুগুলো সুস্থ হচ্ছে পাশাপাশি সচেতনতাম‚লক কার্য্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।