ভোলাগঞ্জ পাথর লুটের প্রতিবাদে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২৫ 112 views
শেয়ার করুন


সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর রক্ষার দাবিতে গ্লোবাল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষে পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জয়েন্ট সেক্রেটারি আবুল হোসেন, তিনি বলেন গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের পর থেকে কয়েকশত কোটি টাকার পাথর ও বালু লুটপাট করা হয়েছে সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন এবং জাফলং পর্যটন এলাকা থেকে। আগে যেখানে সাদা পাথর ছাড়া কিছু দেখা যেত না সেখানে এখন শুধু বালুময় মরুভূমি। কয়েকদিন যাবত বালু নিয়ে যাচ্ছে সাদা পাথর থেকে। সাবল, কোদালের পাশাপাশি সেইভ(লিস্টার) মেশিন দিয়ে ছোট ছোট গর্ত করে লুটপাট করা হচ্ছে সাদা পাথর। পর্যটন স্পষ্ট এর পূর্ব পাশে ছোট ছোট কয়েকশত গর্ত করে লুটপাট করা হচ্ছে সাদা পাথর।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন
গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব, সহ সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, সহ সভাপতি অলি উদ্দিন শামিম, ট্রেজারার রফিক হায়দার, জয়েন্ট সেক্রেটারি আব্দুল অদুদ দিপক, জয়েন্ট সেক্রেটারি আবুল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুল ইসলাম চৌধুরী, সহ প্রচার সম্পাদক আব্বাসউজ্জ জামান, সদস্য রেদওয়ান খান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়,
সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন স্পষ্ট সারা বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের অনেক দেশে ও এর পরিচিতি রয়েছে। ঝর্নার সচ্ছ জল ও রাশি রাশি সাদা পাথর দেখতে অনেক অপুর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য। এই পর্যটন স্পষ্ট এর কথা বললে সারা বাংলাদেশ চিনে থাকে। লন্ডন সহ সারা বিশ্বের পর্যটক নিয়মিত ভ্রমণ করেন এই সাদা পাথর এলাকায়। লন্ডনের ছেলে মেয়েদের কাছে সাদা পাথর খুবই পরিচিত, দেশে গেলে সবাই সাদা পাথরের মনোরম পরিবেশে আনন্দ ফুর্তি করেন। প্রকৃতির এমন মুগ্ধকর ছবি এখনও খোদাই হয়ে আছে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটকের মনে।

সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরের রয়েছে বেশ নামডাক। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও আছে খ্যাতি। সেই খ্যাতি ও নামডাক মুছে যাওয়ার পথে। নদীর তলদেশে বড় বড় গর্ত, ঘোলা পানি আর পাথরশূন্য ধু-ধু বালুচরই এখনকার বাস্তবতা।

গত বছর ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে জাফলংয়ের মতো ভোলাগঞ্জের পাথর কোয়ারির ‘চাবি’ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর হাতে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পরও পাথর লুটের ধারা বন্ধ হয়নি। উল্টো বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল পাথর কোয়ারি চালুর পক্ষে অবস্থান নেয়। সরকার ইজারা বাতিল করে একের পর এক অভিযান চালালেও সব দলের নেতাকর্মী সে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামে। এমনকি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জাফলংয়ে গেলে তাদের গাড়িবহরে বাধা দেওয়া হয়।

ইজারা স্থগিত থাকার পরও রাতদিন বোমা মেশিন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে পাথর তোলা চলতে থাকে। থানায় মামলা, গ্রেপ্তার, বোমা মেশিন জব্দ করেও কাউকে দমন করা যায়নি। রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন ও স্থানীয় প্রভাবশালীর চাপে এক সময় স্থানীয় প্রশাসনও পাথর তোলার পক্ষে অবস্থান নেয়। সর্বদলীয় এই ঐক্যের ফলে পর্যটনকেন্দ্র ভোলাগঞ্জ আজ ক্ষতবিক্ষত! গেল এক বছর এভাবে পাথর লুট চলতে থাকলেও সম্প্রতি ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর নিয়ে সরব সামাজিক মাধ্যম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই পাথর তোলা বন্ধ করা দরকার। তাহলেই ভোলাগঞ্জ পর্যটনকেন্দ্র আগের অবস্থায় ফিরতে পারে। তারা বলছেন, পাথরখেকোদের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন বন্ধ ও সামাজিক চাপ ছাড়া সরকারের একার পক্ষে সাদা পাথর রক্ষা সম্ভব নয়। পাথর লুটে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোরালো দাবী জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানানো হচ্ছে সাদা পাথর রক্ষা এবং আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রকে আগের অবস্থায় ফেরানো জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। পাথর উত্তোলন বন্ধ করে লুটেরা দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পর্যটনকেন্দ্র রক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন চক্র পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত। না হলে রাতের আঁধারে এত পাথর কীভাবে উত্তোলন হয়।