আমরা ভালো শিক্ষার্থীর সাথে ভালো শিক্ষকও চাই: জেলা প্রশাসক

◾ নলেজ টেস্টের আদলে জেলাব্যাপী পরীক্ষা নেওয়া হবে ◾ শিক্ষায় সুনামগঞ্জকে এগিয়ে নিতে সকলের  সহযোগিতার আহ্বান ◾ শুধু শিক্ষকরা নন, কিছুটা দায়িত্ব অভিভাবকদেরও নিতে হবে

প্রকাশিত: ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২৫ 296 views
শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেছেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা অনুকরণীয় যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা সত্যিই চমৎকার! আমরা জেলা ব্যাপী এই পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করছি। এই পদ্ধতিকে সামনে রেখে অচিরেই শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে জেলার সকল প্রাথমিক শিক্ষকদের সাথে কথা বলবো। পরে সিদ্ধান্ত নেবো কীভাবে জেলায় প্রাথমিকের শিক্ষার মান আরো ভালো করা যায়। সেই সাথে শিক্ষকদেরও আমরা আরো প্রশিক্ষিত, মানসম্মত করে গড়ে তুলবো। আমরা জেলা ভালো শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ভালো শিক্ষকও চাই। একজন ভালো শিক্ষকই ভালো শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে পারেন।

বুধবার (২৩ জুলাই) বিকাল ৩টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার ঝিলমিল অডিটোরিয়ামে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত প্রাথমিক শিক্ষা সম্মিলন ২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষায় অনেক পিচিয়ে। এই জেলাকে এগিয়ে নিতে হলে সকল উপজেলাকে একসাথে কাজ করতে হবে। একজন শিক্ষার্থীকে ভালো করতে হলে শুধুমাত্র শিক্ষক আর স্কুলের উপর ভরসা না করে সামাজিকভাবে, গ্রাম ভিত্তিকভাবে কাজ করতে হবে। গ্রাম যদি সহযোগিতা না করে তাহলে কখনোই একজন শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে উঠেন না। তাই স্কুল, শিক্ষক ও অভিভাবকের পাশাপাশি একজন ভালো শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে গ্রামকেও ভূমিকা পালন করতে হবে। একজন ছেলে-মেয়েকে সফল করে তুলতে আমাদের সমাজের সবাইকে দায়ীত্ব পালন করতে হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা যেহেতু শিশুদেরকে আপনাদের কাছে পাঠাই সেহেতু ভালো মন্দের প্রথম দায়ভার কিন্তু আপনাদেরই। এটাও অস্বীকার করা যাবে না। একজন শিক্ষক সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। আমি (একজন জেলা প্রশাসক) যদিও কোথাও যায় সেখানে আমাকে সবাই চিনবে না, সম্মান দেখাবে না কিন্তু একজন শিক্ষক সব জায়গায় সম্মানিত। কিন্তু সে সম্মান অর্জন করার সক্ষমতা আপনার থাকতে হবে।
শিক্ষা সম্মিলন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুকান্ত সাহা। রথপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশীষ কুমার চক্রবর্তী ও ইশাখপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহ্পারা প্রীতমের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপস শীল, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহনলাল দাশ, কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবীব, পাথারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা চৌধুরী রোজী, শিক্ষার্থী অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম, তেঘরি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আদিব হোসেন ও রথপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ও ইভা আক্তার। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ওয়াজিহা আক্তার তানহা ও গীতা পাঠ করেন অনুশ্রী সূত্রধর।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ৷ ইউএনও সুকান্ত সাহা কর্তৃক নেওয়া ‘বেসিক নলেজ টেস্ট’-এ প্রথম ৫টি স্কুল, বিষয় ভিত্তিক ৬০ জন শিক্ষক ও ৩শ’ ৩৩ জন শিক্ষার্থীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরষ্কার স্বরূপ সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদপত্র, শিক্ষা উপকরণ ও ৪টি করে ফলদ গাছ দেওয়া হয়। গাছের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল ও বেল গাছ ছিলো। এছাড়াও এ পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত ৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২ জুন, সোমবার উপজেলার ৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অংশ গ্রহণে বেসিক নলেজ টেস্ট নেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন। টেস্টে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির সর্বমোট ৪ হাজার ৪শ’ ৮৪ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেন। যা মোট শিক্ষার্থীর ৮৭ শতাংশ। এ পরীক্ষা ও শিক্ষা সম্মিলনে উপজেলাব্যাপী একটি শিক্ষামেলার মতো উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হয়।