শান্তিগঞ্জে ফের বন্যা, প্লাবিত হচ্ছে রাস্তাঘাট-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ১:০০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০২৪ 198 views
শেয়ার করুন
সপ্তাহখানেক আগে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে নিজের কাচা ঘরে ফিরেছিলেন রেস্টুরেন্ট কর্মী আবু মিয়া। অসুস্থ স্ত্রী, এক শিশু সন্তান, ভাইসহ ৬ জনের সংসার তার। গত মাসের ৩০ তারিখ থেকে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ফের পানি বৃদ্ধিতে সৃষ্ট বন্যায় আবারও ঘর ছাড়া হওয়ার শঙ্কা কাজ করছে তাঁর মনে। অনেক কষ্ট করে প্রথম দফায় প্লাবিত ঘরদোর ঠিকঠাক করেছিলেন আবু। দিনের বেলায় রেস্টুরেন্টে কাজ করে রাতে ঘরে ফিরে আবারও ঘর মেরামতের কাজ করেছিলেন তিনি। কাচা মাটিতে হাঁটা চলা করতে বস্তা বিছিয়ে ঘরটিকে চলাচলের উপযোগী করে তুলেছিলেন। পুণরায় পানি বৃদ্ধিতে আবারও তাঁর ঘরের চৌকাঠে হানা দিয়েছে বানের পানি। তাই, দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁর। দুই দফা বন্যায় দুর্দশা আর দুর্গতির এ গল্পটি শুধুমাত্র শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের স্কুলবাড়ি বাসিন্দা আবু মিয়ারই নয়। বর্তমানে উপজেলার প্রায় সবক’টি ইউনিয়নের এমন হাজারো আবু মিয়াদের একই দুশ্চিন্তার কারণ দ্বিতীয় দফা বন্যা। দুর্গতি যেনো শেষই হতে চাচ্ছে না এ অঞ্চলের মানুষের। অন্যদিকে, পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আবারও প্লাবিত হতে শুরু করেছে উপজেলার সরকারি, বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, স্কুল ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট। এজন্য রীতিমত  দুরাশা দেখা দিয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের চলমান মূল্যায়ণ কার্যক্রম নিয়েও। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে উপজেলার বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মূল্যায়ণ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। কষ্টেসৃষ্টে চালানো হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যায় স্কুল প্লাবিত হওয়ার ছবি, স্কুলে যেতে কি পরিমাণ যুদ্ধ জয় করতে হয় সেসব ছবি পোস্ট করে দুর্গতির চিত্র তুলে ধরছেন অনেক শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়ন ছাড়া বাকী ৭টি ইউনিয়নই দ্বিতীয় দফার বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে প্রকৃতির উপর বিতৃষ্ণা উগড়ে দিচ্ছেন। গত তিন দিন ধরে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে উপজেলার সব জায়গায়। কখনো কখনো ভারী বর্ষণ আবার কখন মাঝারি মানের। তবে পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে অব্যাহতভাবে বাড়ছে পানি। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও বৃষ্টি হচ্ছিলো এ উপজেলায় এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিলো। তবে মঙ্গলবার দিন এবং দিবাগত রাতের তুলনায় বুধবার সারা দিন পানি বৃদ্ধির গতি কম ছিলো। অব্যাহত এ পানি বৃদ্ধিতে ভেসে উঠা রাস্তাঘাট আবারও তলিয়ে গিয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘর ছাড়া না হলেও গবাদি পশুদের আবারও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন গৃহস্থরা। বিশেষ করে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কিংবা মদনপুর-দিরাই রাস্তার পাশে গবাদি পশুর অস্থায়ী গোয়াল তৈরি করছেন তাঁরা।
আসদ আলী ও সিরাজ মিয়া নামক বন্যায় আক্রান্ত দুই ব্যক্তি বলেন, আর ভালো লাগছে না। একবার বাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিছুদিন হলো বাড়ি ফিরেছি। আরেকবার বন্যা। বাড়ির চৌকাঠে পানি। কি করবো৷ বৃষ্টি হলেই ভিতরে মোচর দিয়ে উঠে। যদি বড় বন্যা হয় শিশু সন্তান নিয়ে আবারো আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটতে হবে। মনে ভয় থাকে সব সময়। কষ্টের কথা ভাগাভাগি করেন পাগলা বাজারের ইমাদ রেস্টুরেন্ট কর্মী আবু মিয়া। তিনি বলেন, স্ত্রী অসুস্থ। বৃদ্ধ শ্বাশুরি। ছোট্ট একটা মেয়ে আছে ঘরে। বার বার বাড়ি থেকে বের হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিতেও লজ্জা করে। কী করবো বুঝতে পারছি না। আগের চেয়ে কি বড় পানি করবে? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই এ প্রতিবেদকের কাছে।
আস্তমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপুল চক্রবর্তী বলেন, আমরা প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে আসছি। আমাদের সকল শিক্ষকরাও আসছেন। গতকাল ও আজ সমস্ত দিনে বিদ্যালয়ের মাঠ ডুবে গেছে। মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী এসেছিলো। আমরা তাদেরকে ক্লাস করিয়েছি। কোনো নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা প্রতিদিন স্কুলে আসবো।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম খান বলেন, পানিতে অনেক স্কুলের মাঠ ডুবে গেছে। শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। শিক্ষার্থীরা এলে পাঠদান করবেন। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ সার্বিক খোঁজখবর নিবেন। আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রতিটি স্কুল খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া আছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, কিছু কিছু মাধ্যমিক স্কুলের মূল্যায়ণ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে এটি নেওয়া হবে। আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে সব প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। যেসব প্রতিষ্ঠান বা তার আশপাশের এলাকা তেমনভাবে প্লাবিত হয়নি সেসব প্রতিষ্ঠান খোলা আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে কথা বলে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আর আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা আছে৷ বন্যার মুহুর্তে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আমরা মানুষের পাশে আছি।