শান্তিগঞ্জে আমন ধান কাটা শুরু, লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা
ইয়াকুব শাহরিয়ার, ইয়াকুব শাহরিয়ার,
নিজস্ব প্রতিবেদক
‘রাছুম মিয়া। পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের পশ্চিমে দত্ত বন্দের নিয়মিত কৃষক তিনি। এক ফসলি চাষের ছোট্ট এ হাওরে এ বছর আড়াই একর জমিতে আমান ধানের চাষ করেছিলেন তিনি। অর্ধেকে সুরভী-১ জাতের ধান এবং বাকী অর্ধেকে মুক্তা। হাওরে অসংখ্য জমিতে ধান চাষ হলেও সকলের আগে তার রোপনকৃত সুরভী-১ জাতের সকল ধান পেকে গিয়েছে। তাই গতকাল শুক্রবার শ্রমিক ধরে ধান কাটিয়েছেন তিনি। শ্রমিক সংখ্যা কম হওয়ায় আগামী তিনদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র তার জমিতেই ধান কাটতে হবে শ্রমিকদের। এর মধ্যেই বাকী অর্ধেক জমি পেকে যাওয়ার সম্ভবনা দেখছেন কৃষক রাছুম। রাছুম মিয়ার পাশের জমি একই গ্রামের রাশিদ আলীর। তিনি চাষ করেছেন বিনা-৭ জাতের ধান। প্রায় ষাট শতক জমিতে চাষ করা এ ধানও একেবারেই পেকে গেছে। দু’চারদিনের মধ্যে কাটতে হবে এ জমির ধানও। শান্তিগঞ্জ কৃষি অফিস মনে করছে আগামী পনেরো দিনের মধ্যে আমান ধান কাটার ধুম পড়বে।’
শান্তিগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শান্তিগঞ্জসহ সুনামগঞ্জ জেলা রোবো ফসল নির্ভর। তবে, জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক, পাথারিয়া ও পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নে আমন ধানের চাষ হয় বেশি। অন্যান্য ইউনিয়নে নামমাত্র, কোনো কোনো ইউনিয়নে একেবারেই আমনের চাষ হয় না। এবছরের আমন ধানের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২ হাজার ১শ ৩০ হেক্টোর। কিন্তু লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণে তা দাঁড়িয়েছে ২ হাজর ১শ ৫৬ হেক্টরে।
শুক্রবার বিকাল ৩টায় দত্ত বন্দে (পাগলা সরকারি মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজের পেচনের হাওর) গিয়ে দেখা যায় রাসেল আহমদ, আবদুল আউয়াল ও মাফিজ আলী নামক তিনজন শ্রমিক কৃষক রাছুম মিয়ার ৩০ শতকের একটি জমির ধান কেটে শেষ করেছেন। একজন ধানের আঁটি বেঁধে দিচ্ছেন আর বাকী দু’জন কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই ধান। পাশের দু’একজনের জমিও পেকে গিয়েছে। কৃষকরা হাসি মুখে জানান, সম্ভবত আমরাই শান্তিগঞ্জ উপজেলায় প্রথম ধান কাটছি। প্রথম ধান কাটতে পেরে নিজেদের খুব ভালো লাগছে।

কৃষক রাছুম মিয়া জানান, সুরভী-১ ও মুক্তা জাতের ধান চাষ করে উপকৃত হয়েছি। আশা করছি কিয়ার প্রতি (প্রতি ৩০ শতকে ১ কিয়ার) ১২ মন ধান পাবো। আমাদের এ হাওরে ধানের ফলস কম হয়। ১২ মন দরে হওয়াতেই আমি খুশি। তবে, ধান কাটার মেশিন (কম্বাইন হারভেস্টার) জমিতে আনতে পারিনি। চতুর্দিকে অন্যান্য মানুষের জমি। তাই এখানে আনা যাচ্ছে না। শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাতে হচ্ছে। প্রতিজন শ্রমিকের মজুরি ৫ শ টাকা। ধান ভাঙানোতে আরও খরচ পড়বে। কষ্টও হবে। কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন হলে খরচ ও কষ্ট দু’টোই কম হতো।
শান্তিগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা সোহায়েল আহমদ বলেন, আমাদের উপজেলার খুব কম জায়গাতে আমন চাষ হয়। পাথারিয়া, শিমুলবাক ও পশ্চিম পাগলার কিছু জায়গায় এ ধান চাষাবাদ হয়। হাওরাঞ্চলের কৃষকগণ মূলত বোরো নির্ভর। এ বছর আমনের টার্গেট ছিলো ২ হাজার ১শ ৩০ হেক্টর। আমরা অর্জন করেছি ২ হাজার ১শ ৫৬ হেক্টর। লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি। সময় সময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছিলাম আমরা।


