নব্বই দশকের দুর্বার ক্রীড়া চক্র, আজকের ফুটবল এবং আমাদের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ২, ২০২৩ 326 views
শেয়ার করুন
আমরা যারা নব্বই দশকে বড় হয়েছি তাদের বিনোদন বলতে যা বুঝায় তা ছিলো খেলাধুলা এবং বিটিভি। খেলাধুলায় ফুটবলটা ছিলো তখন খুবই তুঙ্গে। ক্রিকেট বাঙলার গ্রামীণমুল্লুকে সেভাবে তখনো পৌঁছায়নি। আমরা মাঠে পড়ে থাকতাম ফুটবল নিয়ে। ক্রিকেট তখন একটুআধটু খেলতাম। তবে ২০০৫ সালের পর ফুটবল রেখে ক্রিকেটেই মনোযোগী ছিলাম বেশি। স্কুলে ইয়াঙ্গার চার্টার, আন্ডার ১৬, ১৭, স্কুললীগ, আন্তঃজেলা, উপজেলা সব লীগ বা টুর্নামেন্টে খেলেছি। এতো ভালো খেলতাম সেটা বলবো না। আমি ছিলাম গড়পড়তা খেলোয়ার। ২০১০ সালে যখন এসএসসি পরীক্ষা দেই তখন থেকেই ক্রিকেটটা ছেড়ে দেই। আর খেলা হয়নি। তবে সতীর্থরা খেলেছে। শাহীন রহমান ক্রিকেট ফুটবল দুইটাই সমানে খেলেছে। সে এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) তালিকাবদ্ধ রেফারি। অনেক সুনাম অর্জন করছে সে। এ বছর হাঁটুর ইঞ্জুরির কারণে মাঠের বাইরে আছে। আশা করছি আগামী বছরে আবার মাঠের মাঝে তার তেজালো বাঁশির সুর শুনতে পাবো। বাবলু এখনো ফুটবল-ক্রিকেট দুইটাই টুকটাক খেলে যাচ্ছে। আমাদের বন্ধু স্টাফে আর কেউ তেমনভাবে খেলে না। 
এবার ফিরি নব্বই দশকের ফুটবল এবং আজকের মূল আলোচনায়। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত এমনকি চাঁদনী রাত হলে সন্ধ্যার পর পর্যন্তও আমরা ফুটবল খেলেছি। খুব খেলেছি; কাঁদায় লুটোপুটি খেয়ে খেলেছি। আমরা পশ্চিম পাগলায় ফুটবলের উজ্জল সোনালী একটা যুগ দেখে দেখে বড় হয়েছি। নতুন বয়সের ছেলেরা যারা আমার এই নিবন্ধ পড়বেন তারা হয় তো সেসব কথা বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হবে। কিংবা অবাক হবেন। আমাদের বড় যারা আছেন বা সমবয়সীরা সেটা ভালো করেই মনে করতে পারবেন। বলছিলাম- পশ্চিম পাগলায় ফুটবলের উজ্জল সোনালী দিনের কথা। আমরা দেখেছি দুর্বার ক্রীড়া চক্রকে। দেখেছি পাগলার ফুটবল পাগল কয়েকজন অপারিজ খেলোয়ারকে। দেখেছি ফুটবলমাঠের বেশ কিছু প্রকৃত যোদ্ধাদের। সমস্ত পাগলা বাচাই করা একটি শক্তিশালী ফুটবল দল ছিলো দুর্বার ক্রীড়া চক্র। যেদিন মানুষজন জানতো যে, দুর্বারের খেলা সেদিন মাঠ, ঘাট, স্কুলের ছাদ, গাছ-গাছালি এমনকি সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক এক প্রকার বন্ধ থাকতো। লোকে লোকারণ্য থাকতো। পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বসার তো দূরের কথা দাঁড়ানোর জায়গাও থাকতো না। আমি, সাজুর, রায়হান, সাদ্দাম, বাবলু, শাহীন, দেলোয়ারসহ আরো যারা আছে তাদের জায়গা হতো স্কুল ভবনের পিচনে জারুল গাছে, স্কুলের ছাদে না হলে মাঠের পূর্ব প্রান্তের করচ গাছে। একবার সাজুর ঢাল ভেঙে মগ ডাল থেকে মাটিতে পড়েছিলো। খেলা যেদিন থাকতো সেদিন আড়াইটার দিতে গাছের ডালের দখল নিতাম। দর্শকে দর্শক দেখা ছাড়া খেলা দেখার উপায় থাকতো না।
বিশ্বাস হোক কিংবা না, আমরা পাগলার ফুটবলের এমনই এক স্বর্ণালী দিনে বেড়ে উঠেছি। ফুটবল নিয়ে গত কয়েক বছর আমি তেমন একটা কথা বলিও নি। খেলাটি এখন আর আগের মতো আমাকে টানে না। এর কারণ দুটি। এক. কমার্শিয়াল দুনিয়ায় খেলাধুলা থেকে অনেক দূরে আছি। পাগলায় তেমন আর ফুটবলটা হয় না। ছোটদের মুখে মুখে মাঝেমধ্যে দুর্বারের নাম শুনি কিন্তু সেই খেলা আর দর্শক এখন আর দেখি না। দুই. ফুটবলের প্রেম এখন ক্রিকেটে কনভার্ট হয়েছে। ইদানিং আমি ধন্যবাদ দিতে চাই পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নবাসীকে। আলাদা করে একটা ধন্যবাদ দিতে চাই বন্ধু শহিদ নূর আহমদকে। তারা মাদকের বিরুদ্ধে একটি চমৎকার সফল ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলো বীরগাঁও খালপাড়ের মাঠে। সেখানে ধারাভাষ্যকার হিসেবে ফাইনালম্যাচসহ ৪/৫টি ম্যাচে কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো। সেই সুবাদে খুব কাছ থেকে টুর্নামেন্টের অদ্যোপ্রান্ত দেখেছি। দেখেছি ফুটবলের প্রতি দর্শকদের কী অগাদ প্রেম আর ভালোবাসা। দেখেছি দর্শকদের গণনাহীন উপস্থিতি। ফুটবল নিয়ে পাগলামী দেখেছি। সেই থেকে আমার মনে আবারো গ্রামীণ ফুটবল নিয়ে নতুন একটি উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
আমার উত্তেজনায় আরেকটু পারদ ঢেলে দিয়েছে আজকে ফুটবল ম্যাচটি। গত বছর ছোটভাই-বড়ভাইদের সম্মিলনে একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলো দুর্বার ক্রীড়া চক্র ও ইউনিয়নের ফুটবল খেলোয়াররা। সঙ্গত কারণে যার ফাইনাল আটকে ছিলো একবছর। আজ সেই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা। অন্যান্য সব খেলার আয়োজনের মতো এ খেলায়ও মাইকিং-এ ভয়েস দিতে হয়েছে আমাকে। একটি স্ট্যাটাসও পোস্ট করেছি। অনেকে সাড়া দিচ্ছেন। বড়রা বলছেন দুর্বারের খেলা অনেক দেখেছি। অনেকে অনেক খেলোয়ারের নাম বলেন। বেশি বলেন বজলু ভাই ও আতিক ভাইয়ের কথা। তারা আসতে চাচ্ছেন দুর্বারের খেলা দেখতে। দুর্বারের সাথে খেলবে মুয়াজ্জিন একাদশ সুনামগঞ্জ। দুই দলই শক্ত করে দল গুছিয়েছে। প্রত্যেকেই জয়ের জন্য আজ বিকাল সাড়ে ৩টার সময় মাঠে নামবে। দু’দলের জন্য শুভ কামনা।
পাগলায় ফুটবলটা আগের জৌলুশ নিয়ে ফিরে আসুক। বর্তমান ইয়ো ইয়ো প্রজন্মের বিনোদনের মাধ্যম হোক ফুটবল এমনটাই প্রত্যাশা। সকলের মাঝে ফিরে আসুক সুস্থ বিনোদন।
    লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।