পূর্ব শত্রুতার জেড়ে ভাটিপাড়ায় প্রতিপক্ষের আগ্রাসনে কোণঠাসা কয়েকটি পরিবার

◽ ধান কেটে নেওয়াসহ বাড়ি লুটের অভিযোগ, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া ইউপি সদস্য

প্রকাশিত: ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ, মে ৩, ২০২৩ 147 views
শেয়ার করুন
জমি সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে একাধিকবার ঝুট ঝামেলায় জড়িয়েছেন দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ধলকুতুব গ্রামের দুই অংশ। এক পক্ষে ধলকুতুব গ্রামের মুজিবুর রহমান গং এবং অপর পক্ষে একই গ্রামের ঢুলপশী অংশের ইউপি সদস্য রফিক আলী, সাইফুল ইসলামসহ ১৫-২০টি পরিবার। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, গ্রামের মুজিবুর রহমানসহ তার পক্ষের লোকদের সাথে মতানৈক্যের দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে বিষয়টি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এর জেরে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ তাদের পাড়ায় (ঢুলপশী গ্রামে) সঙ্ঘবদ্ধভাবে হামলা করে ধলকুতুব গ্রামের মুজিবুর রহমান গংরা। তাদের আগ্রাসী মনোভাবে আমরা কোনঠাসা।  হামলার পাল্টা হামলা না করায় কোনো রকমের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি তবে তাদের বাড়ি-ঘর লুটপাট করেছে বলে দাবি করেছেন তারা। যেভাবে এরা বার বার আক্রমণ-হামলা করছে এতে যে কোনো সময় হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভুগীরা। বিষয়টি দিরাই থানার পুলিশ প্রশাসন অবগত রয়েছেন এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলার নীতিনির্ধারকদের নিয়ে স্থায়ীভাবে চূড়ান্তভাবে বিষয়টি মিমাংসা করার। সংঘর্ষ এড়াতে গত দু’দিনে বেশ কয়েকবার টহল করেছেন দিরাই থানা পুলিশ,  এমনকি হামলার দিন (সোমবার)  মোতায়েন করা হয়েছিলো অতিরিক্ত পুলিশও।
সাইফুল ইসলাম, মকসুদ মিয়া, শফিক মিয়া, বাবুল মিয়া ও ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য রফিক আলীসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভুগী অভিযোগ করে বলেন, ধলকুতুব গ্রামের  ঢুলপশী পাড়ায় আমরা ২০-২৫টি নিরিহ পরিবার বসবাস করি। চাষাবাদ করেই আমরা জীবন যাপন করি। আমাদের গ্রামের মৃত কলমধর আলীর ছেলে মুজিবুর রহমান, শফিক আলী, মাসুক আলী ও ছইদুর রহমানসহ গ্রামের একাংশের সাথে দীর্ঘদিন আগে একটি বাদানুবাদ ছিলো। পরবর্তীতে এর মিমাংসাও হয়েছে। সেই জেরেই মুজিবুর রহমান গংরা আমাদেরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় তাদের অধস্তন করে রাখতে চায়। তারা তাদের প্রভাব দেখিয়ে আমাদের জমিতে থাকা পাকা ধান কেটে নিয়ে নিয়ে যায়। কথা বললে নির্যাতন করে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় শতাধিক লোক নিয়ে দেশিয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করছিলো। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে বাড়িতে থাকা ৬৪ বস্তা ধান, সেলাইর মেশিন, হাঁস, পোষাক-পরিচ্ছেদসহ অনেক জিনিসপত্র তারা লুটপাট করেছে। তাদের উদ্দেশ্য আমাদেরকে এলাকাচ্যুত করা। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য রফিক আলীর গ্রাম ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, বেশ কিছুদিন আগে (রমজান মাসে) তফুর আলী নামের এক আত্মীয়কে রাতের আঁধারে একা পেয়ে বেধরক মারধর করেছে। এতে তিনি বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মেম্বারকে মারার জন্য সুযোগ খুঁজছিলো তারা। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মেম্বার নিরাপদে সরে গেছেন। সরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খোঁদ রফিক আলী মেম্বার নিজে। তিনি বলেন, মুজিবুর রহমানরা মিলে আমাদেরকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে তাদের অধস্তন করে রাখতে চায়। তারা আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করে। আমার উপর হামলার পরিকল্পনা টের পেয়ে আমি নিরাপদে চলে এসেছি। এভাবে আর কতদিন পালিয়ে থাকবো। আমাদের পক্ষের শিশু-মহিলারাও তাদের কাছে নিরাপদ নয়। আপাতত আমরা ধলকুতুবের রাস্তা ব্যবহার না করে বিকল্প পথ ব্যবহার করে চলাফেরা করছি।
অভিযুক্ত মুজিবুর রহমান সোমবারের হামলার বিষয়টি স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বলেন, হামলার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। কম বয়সী কিছু যুবক উত্তেজিত হয়ে হামলা করেছে। এখানে আমার ভাইও থাকতে পারে। ছোট ছোট ছেলেরা ধান আনতে পারে বা জমি থেকে ধান কাটতে পারে। এজন্য আমি সবাইকে অনেক শাসিয়েছি। তফুর আলীকে কে বা কারা মেরেছে আমি জানি না পরে শুনেছি। তবে, মেম্বারের গোষ্ঠীর এরা আমাদেরকে এক সময় অনেক নির্যাতন করেছে। নির্বাচনের সময় আমার নিশ্চিত বিজয় চিনিয়ে নিয়েছে। মেম্বারের বুকে সৎ সাহস নেই। সারা জীবন বর্শি দিয়ে মাছ ধরে ভাত খেয়েছে। সে মেম্বার হয় কীভাবে? আগে আমাদের শক্তি কম ছিলো, এখন কিছুটা স্ট্রং হয়েছি। আমার জায়গা কেড়ে নিয়েছিলো। তাদের দ্বারা আমরা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। আর তাদরকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। এখন তাদের কিছু দমিয়ে রাখতে হবে। এরা গ্রামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিলো বলেই গ্রামবাসী মিলে এখন তাদের টাইট দিচ্ছে। এরা গ্রাম বাসীর কাছে ‘সারেন্ডার’ করলে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হবে।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুক্তাদির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই দুই গ্রুপের মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজমান। একপক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে এমনটা করছে। আমরা সবকিছু নজরদারিতে রাখছি। সোমবারে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমি খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করেছি। পুলিশের উপস্থিতে তারা ধানও কেটেছে। আজও (বুধবার) কাটছে। আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে। বড় ধরণের কোনো ঘটনা যেনো না ঘটে তাই পুলিশি নজরদারি বাড়িয়েছি। মামলা হলে বিধিমত ব্যবস্থা নেবো।