কাতারে প্রতারক চক্র নিয়ে চিন্তিত প্রবাসীরা, দূতাবাসের সতর্কতা

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১ 400 views
শেয়ার করুন

 

কাতারে সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে প্রতারক চক্র অভিনব স্টাইলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এই চক্রের ফাঁদে পড়ে কতজন প্রবাসী সর্বস্বান্ত হয়েছেন সেই ব্যাপারে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দিন দিন প্রতারণা বাড়তে থাকায় সম্প্রতি দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রবাসী ভাইবোনদেরকে সতর্ক থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কাতার দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, গত মাসে প্রতারক চক্র থেকে সাবধান থাকার অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া হয়। বলা হয়, ‘কাতারে প্রতারকচক্র বিশেষ সফটওয়ার ব্যবহার করে ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমনকি দূতাবাসের নামও ব্যবহার করা হচ্ছে। চক্রটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ফোনে আপনার ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চেয়ে থাকে। এই প্রতারকচক্র থেকে সবাইকে সাবধান থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো’।

দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর দেশটিতে থাকা প্রবাসীরা তাদের সাথে হোয়াটস অ্যাপ ও ইমুতে কিভাবে প্রতারণা করার চেষ্টা করা হয়েছে সেই বিষয়গুলো তারা দূতাবাসকে জানিয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ প্রতিকার চেয়েছেন।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নামের একজন বলেছেন, প্রতারণার বিষয়টি জানানোর জন্য অনেকদিন দূতাবাসকে মেইল দিয়েছি; কিন্তু কেউ রিপ্লে দেননি।
শরীফ জামান নামের এক প্রবাসী বলেছেন, ঘটনা সত্য। কিছুদিন আগে আমার রুম মেটের কাছে ফোনে বলা হয়, আপনার ব্যাংক কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ কথা বলে ব্যাংক কার্ডের তথ্য দিতে বলছে প্রতারক চক্র। যদিও আমার কার্ডের মেয়াদ আরো দুই বছর আছে বলে জানান তিনি। জহুরুল ইসলাম নামের অপর এক প্রবাসী বলেন, দু’দিন আগে আমাকেও প্রতারকরা কল করেছিল। আবু সাঈদ চৌধুরী লিপু বলছেন, প্রতারক চক্র আমাকে ও আমার ভাইকে দুই দিন আগে কল দিয়েছিল। কিন্তু সুযোগ পায়নি। আলাউদ্দিন নামের একজন প্রবাসী এ প্রসঙ্গে বলেন, চক্রের সদস্যরা আমাকে ফোন করে বলতাছে, আমি দোহা অ্যাম্বাসি থেকে বলছি। তখন আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছি, দোহা অ্যাম্বাসি থেকে ফোন করলে সেটি ইমুতে কেন ? এ কথা বলার সাথে সাথে প্রতারক লাইন কেটে দেয়। মুহিবুর রহমান নামের একজন প্রবাসী বলছেন, এই প্রতারক চক্রের অপরাধ এত বেড়ে গেছে যে, পাঁচ দিনে তিনবার কল এসেছে। তবে কেউ কেউ কাতারে প্রতারক চক্রের উৎপাত বাড়ার কথা জানানোর পাশাপাশি এ-ও বলছেন, অনেক বছর ধরে অন-অফিসিয়ালি ভিসা বন্ধ। দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য পাচ্ছি না। কেন ভিসা বন্ধ হয়ে আছে এবং কবে নাগাদ খুলবে এই ব্যাপারে কিছু বললে আরো ভালো লাগত বলে মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল বিকেলে এ ব্যাপারে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জসিম উদ্দিন এনডিসি এবং কাউন্সেলর (শ্রম) ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

গতকাল সন্ধ্যার আগে আল ইসলাম ওভারসিসের স্বত্বাধিকারী ও অভিবাসন বিশ্লেষক জয়নাল আবেদিন জাফর নয়া দিগন্তকে বলেন, কাতারে প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে এমন তথ্য আমি জানতে পারিনি। তবে দূতাবাসে যেসব কর্মকর্তা এখন দায়িত্বে আছেন তারা খুবই আন্তরিক। কিভাবে সমস্যা থেকে কর্মীদের উদ্ধার করবেন সেই চিন্তাভাবনাই তারা বেশি করেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রদূত এবং শ্রম কাউন্সেলর দু’জনেই ভালো মানুষ। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে কাতারে শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমরা অনেকেই ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার দেখা মতে এখন শুধু সৌদি আরব ছাড়া অন্যগুলো বন্ধই এক অর্থে। দুবাইয়ে ভিজিট ভিসায় যাওয়া অনেকে সমস্যার মধ্যে আছে। তবে বন্ধ থাকা অপর দেশ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার শুনছি আগামী মাসের দিকে খুলে দেয়ার একটা ঘোষণা আসতে পারে। যদি না খুলে তাহলে এই মার্কেট আর খোলার সম্ভবনা দেখছি না বলে হতাশা প্রকাশ করেন।