সিলেটে বেড়েছে চলাচল, উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন

প্রকাশিত: ১১:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২১ 412 views
শেয়ার করুন

সিলেট নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলায় স্বেচ্ছায় লকডাউন করে চলছে এমন অবস্থা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকায়ই কমবেশি জনসমাগম আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা মানছে না অনেকে। দূরত্বের বালাই নেই, কাঁধে কাঁধ রেখেই চলাফেরার পাশাপাশি ভেতরে আড্ডা ও খেলাধুলা 

 

সিলেটে বেড়েছে চলাচল, উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, কঠোর বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে সিলেটে বেড়ে চলছে মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি দিন দিন ভয়ংকর হচ্ছে। কিন্তু সিলেটের জনজীবনের চিত্র দেখে ভয়ংকর করোনা পরিস্থিতির কথা মনে হবে না।

 

কঠোর লকডাউনের তেমন প্রভাব চোখে পড়েনি সড়ক ও অলিগলিতে। শুধু অফিস-আদালত আর গণপরিবহন বন্ধ ছাড়া বাকি সব কিছু অন্য দিনের তুলনায় স্বাভাবিক। মার্কেট-শপিং মহল বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা দোকান কোঠা বন্ধ করে বাহিরে অবস্থান করে মালামাল বিক্রি করতে দেখা যায়। সেই সাথে সিলেটের মাছ ও কাঁচাবাজারে ছিল মানুষের ভিড়।

 

শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। শনিবার সকালে সিলেটের সড়কগুলোতে যানবাহন ও রিকশার সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে উঠে নগরীর আম্বরখানা, বন্দরবাজার, চোহাট্রা পয়েন্ট, কালিঘাট, মদিনা মার্কেট, টিলাগড়, শাহপরাণ গেইট, আখালিয়া, টুকেরবাজার, কুমারগাঁওসহ অধিকাংশ এলাকা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া নিধেষ থাকলেও ছোট-খাটো প্রয়োজনে বের হচ্ছেন অনেকে। এছাড়া সিলেটের পাড়া-মহল্লার অলিগলিগুলোতে ছিল জমাট আড্ডা আর কেনাবেচা। কাঁচাবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই কেনাকাটা করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের।

 

মানুষের মুখে মাস্ক একেবারেই কম ছিল। বিধিনিষেধের মাঝেই খোলা চায়ের স্টলগুলোতেও মানুষের আনাগোনা ছিল বেশ। সড়কের চেকপোস্টগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও চলাচল নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা ছিল কম। মাঝেমধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করতে দেখা গেছে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। এদিকে সকাল থেকে সিলেট নগরীর প্রবেশদ্বার দক্ষিণ সুরমা, কুমারগাঁও, বিমানবন্দর সড়ক, সুরমা গেইট, শেখঘাট পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট দেখা গেলেও তা ছিলো একেবারেই ঢিলেঢালা।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, শনিবার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সড়কে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি ছিলো বেশি। তবে বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হলে জরিমানা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সাথে যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। এছাড়া জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে কর্মস্থলে যেতে পারছেন।

 

জানা যায়, সর্বশেষ ১০ দিনেই সিলেটজুড়ে করোনাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৯ জন! গেল বছর মার্চে দেশে করোনা হানা দেওয়ার পর থেকে এতো কম সময়ে সিলেট অঞ্চলে এতো বেশি মৃত্যু হয়নি। এই ১০ দিনে নতুন করে করোনার সংক্রমণ হয়েছে ২ হাজার ৯৬০ জন মানুষের মধ্যে। একই সময়ে সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক কম, মাত্র ১ হাজার ৬০ জন।

 

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায় বলেন, কঠোর লকডাউনে সিসিকের অভিযান সবসময় অব্যাহত আছে। প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করা হচ্ছে। সেই সাথে সর্তক করে দেয়া হচ্ছে। নিজের জীবন রক্ষার জন্য সবার আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে। নিজেরা যদি সচেতন না হই তাহলে যতই জরিমানা দেই না কেন কোন কাজ হবে না। এজন্য সবাইকে সরকারের নির্দেশনা অনুসারে চলাচল করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

 

স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম শামীম বলেন, সরকার নির্দেশিত কঠোর লকডাউন অবশ্যই কঠোরভাবে মানতে হবে। একেবারে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরোলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।

 

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে মানুষ যদি নিজে থেকে সচেতন না হন তাহলে পুলিশের পক্ষে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবুও পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন চেকপোস্ট ও টহল পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে হলে আগে সচতেনতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। ছোট-বড় প্রতিটি গাড়িকেই চেকিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে যেতে দেওয়া হচ্ছে, অন্যথায় মামলা করা হচ্ছে।