বন্যায় ভাসিয়েছে সব, শীতবস্ত্র নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রকাশিত: ১:২২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০২২ 285 views
শেয়ার করুন
ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ:
অগ্রাহায়ণ মাস প্রায় শেষ। শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দু’সপ্তাহ পরে দেশব্যাপী শুরু হবে কনকনে ঠান্ডা। এখনই সন্ধ্যা-রাত-সকাল পুরোটা সময় গ্রামাঞ্চল ঢেকে যায় ঘন কুয়াশায়। শীত যতই ঘনিয়ে আসছে গ্রামাঞ্চলের বিশেষ করে হাওর পাড়ের নিম্ন আয়ে মানুষের চিন্তা ততই বাড়ছে। ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় সময় পার করছেন বিগত ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতির সম্মুখিন হওয়া দরিদ্র মানুষগুলো। কারণ এসব মানুষের শীত নিবারণের প্রধান বস্ত্র গরম কাপড়, কম্বল কিংবা লেপ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। চেয়েচিত্তে সমাজের বিত্তবান কিংবা বিভিন্ন মানবিক সংগঠনের কাছ থেকে যেসব কম্বল বা লেপ সংগ্রহ করেছিলেন শীতের রাতে আরাম করে ঘুমানোর জন্য, সেসব গরম কাপড় আর নেই তাদের মাঝে। এতেই চিন্তা বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। যে হারে কাপড়, তুলার দাম আর শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে তাতে দাম বেড়েছে লেপ তোশকেরও। এজন্য গরম কাপড়ের চিন্তাটা আরো দ্বিগুন হয়ে দেখা দিচ্ছে তাদের মাঝে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বন্যায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস, পশ্চিম পাগলা, পূর্ব পাগলা, দরগাপাশা, পূর্ব বীরগাঁও, শিমুলবাক, পাথারিয়া ও পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার কারণে গ্রামগুলোর অগণিত মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়৷ নষ্ট হয়ে যায় বিছানাপত্র, পোশাক-পরিচ্ছেদ ও গরম কাপড়। বিত্তবান, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ তাদের এ ক্ষত পুষিয়ে নিতে পারলেও খেটে খাওয়া দিন মজুর নিম্ন আয়ের মানুষেরা এখনো এ বন্যার ক্ষতচিহ্ন বয়ে চলেছেন। ক্ষতি হওয়া অনেক বিষয় নিয়ে তাৎক্ষনিক চিন্তা করলেও  শীত বাড়ার সাথে সাথে তাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে গরম কাপড়ের সমস্যা। এটা নিয়ে খুব চিন্তিত তারা। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে উচ্চমূল্যের বাজারে সন্তানদের গরম কাপড় কিনে দেওয়া কিংবা রাতে আরাম করে ঘুমানোর জন্য এক-দু’টি লেপ কিংবা কম্বল কিনে আনা তাদের জন্য বিলাসীতা ছাড়া কিছুই নয়। এ সংকট সমাধানে তাদের দরকার সমাজের বিত্তবান ও মানবিক প্রবাসীদের সার্বিক সহযোগিতা। তা না হলে প্রচণ্ড শীতে জুবুথুবু হয়ে যাবে হাওর পাড়ের এসব দরিদ্র মানুষের জীবন।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় কামরূপদলং, আস্তমা, আসামপুর, রসুলপুর, নিদনপুর, বীরগাঁও খালপাড়, ইসলামপুর, কাদিপুর, সিচনীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে। যাদের বেশ ক’জন ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত। তারা জানান, নানাভাবে গত কয়েক বছরে সমাজের বিত্তবান ও প্রবাসী রেমিট্যান্স যুদ্ধাদের দেওয়া অর্থে কম্বল, লেপ, চাদর এমনকি স্যুয়েটারও পেয়েছিলেন। ভয়াবহ বন্যায় নিজের জান বাঁচানো যেখানে কষ্টসাধ্য ছিলো কাপড় বাঁচানোর কথা তখন চিন্তাও করা যায়নি। এসব জিনিসপত্র ঘরেই রেখে প্রয়োজনীয় উপাদান নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয়ে ছিলেন তারা। বন্যার পানিতে ডুবে অথবা চালের টিনের ফুটা দিয়ে পানি পড়ে বৃষ্টির পানিতে ভিজে বা ইঁদুরে কাটায় একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে শীত নিবারণের গরম কাপড়।
কামরূপদলং-এর ফেরা বিবি, আসামপুর শাফিয়া বেগম, কাদিপুরের রাজিয়া বেগম, রসুলপুরের সুফিয়া বেগম বলেন, আমাদের কম্বল-লেপ, চাদর ছিলো। বন্যার সময় নিজেদের পরিবার সামাল দেবো নাকি কাপড় সামলাবো। জীবন বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছি। সব কিছু পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব কাপর ভিজেনি সেসব কাপড় ইঁদুরে কেটেছে নষ্ট করেছে। শীতের কাপড়ের চিন্তায় এখন দিন কাটছে না। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান, আপনারা তো আরাম আয়েশে থাকবেন, আমাদের গরিবদের কথাও মাথায় রাখবেন।
মেসার্স মাহী ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী দুদু মিয়া বলেন, আমি ইতোমধ্যে ১শ ৫০টি পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। সব সময় তাদের পাশে আছি। প্রয়োজনে এবছর আরো মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করবো। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান, নিজ নিজ অবস্থান থেকে গরিবদের পাশে দাঁড়ান।
বিশিষ্ট হোমিও চিকিৎসক হাজি শাকিল মুরাদ আফজল বলেন, প্রতি বছরই আমাদের এলাকার মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকি। আশা করছি এ বছরও বিতরণ করবো ইনশাআল্লাহ। প্রবাসী ও বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান, নিজেরা মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং শীতার্ত মানুষের জন্য যারা অর্থ সংগ্রহ করেন তাদের মাধ্যমেও শীতার্তকে সহযোগিতা করতে পারেন।