আওয়ামী অনুভুতির মানুষরা ধীরে ধীরে বিলিন হয়ে যাচ্ছেন এখন শেখ হাসিনার পাশে আলোর মানুষ 

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামরা আর আসবেন কি? বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে এত দুরে যেত হলো কেন?

প্রকাশিত: ২:২১ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০২০ 366 views
শেয়ার করুন
(৩)তৃতীয় এবং শেষ অংশ গত সংখ্যার  পর——
আমরা Amnesty International এর সেক্রেটারি-জেনারেল Ian Martin এর অফিসে যাওয়ার পর যথারীতি মিঃ মার্টিনের সেক্রেটারী এলিজাবেথ নিসান স্বাগত জানিয়ে আমাদের বসার জায়গা দেখিয়ে দিলেন, আগে থেকে আমাদের নাম দেয়া ছিল। কুশল বিনিময় এবং চা চক্রের পর আলোচনার শুরুতে মিঃ মার্টিন জানতে চাইলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কোন ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বললেন আমি বাংলাতে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এবং দুভাষী হিসাবে আমাদের মধ্য থেকে আতাউর রহমান খানের নাম বলতেই এলিজাবেথ নিসান বললেন আমি বাংলা জানি। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বাংলাদেশে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের মনবতা বিরোধী কর্মকান্ড রাজনৈতিক নেতা কর্মী হত্যা খুন থেকে শুরু করে লুটপাট সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন দেশের রাজনৈতিক ইসু আওয়ামীলীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনারা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে আমরা সবাই বসে আছি এবং এলিজাবেথ নিসান সব কিছু খুটিনাটি বিষয় নোট করছেন আর মিঃ মার্টিনকে Translate into english করে বুঝাচ্ছেন। Amnesty International এর ফাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী’র বলতে গেলে জীবন বৃত্তান্ত সবই আছে তা আমরা জানতামনা। আলোচনার শেষ পর্য্যায়ে হঠাৎ Mr Martin এর টেবিলের উপর থেকে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ইংল্যন্ডের সম্বভত Daily guardian বা Times এর একটি কপি এবং মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রথম পাতার একটি নিউজ এবং ছবি বের করে দেখালেন। ছবিতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ১৯৭১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জন সভায় একজন লোককে বেনেট দিয়ে খুছিয়ে হত্যা করার ছবি।
.
  • ইংল্যন্ডের Daily News papers এবং মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের এই ইংরেজি দৈনিকের ছবি দেখিয়ে Mr Martin বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে তখন টাইগার সিদ্দিকী নামে সম্বোধন করে বললেন-Mr Tiger siddique-Amnesty International do not support any kind of killing, why you are killing in 18 december1971 public meeting in dhaka paltan.What is your own explanation. আমরা সবাই অবাক! কিন্তু সেদিন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যখন তার কারন বর্ননা করেছিলেন এবং এর জবাবও তিনি দিয়েছিলেন তাতে Amnesty International সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রেকর্ড করা ভুল তথ্য নতিভুক্ত থাকা বিষয়টি তাঁর উত্তরের পর খু্‌বই সম্মানের সাথে দাড়িয়ে Mr Martin বলেছিলেন খুব ভাল হয়েছে আমরা আসল বিষয়টি আজ আপনার মুখ থেকে শুনতে পেরে খুশি হলাম এবং সঠিক তথ্য লিপিবন্ধ হবে। কেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট নেননি এবং পাসপোর্ট ছাড়া ইংল্যান্ডে ভ্রমন করলেন এবং সব শেষে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা সেখানকার সুবিধা অসুবিধার কথা বিবেচনা করে Amnesty International এর সেক্রেটারি-জেনারেল Ian Martin বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে ইউনাইটেড ন্যাশনের একটি পাসপোর্ট ইসু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আপনি কি আপনার কোন রাজনৈতিক কর্মী বা সহযোদ্ধা কাউকে আপনার সাথে চান, আমরা ইউ এন এর তরফ থেকে আপনার সম্মানে দু’টি পাসপোর্ট ইসু করার সুপারিস করতে পারি। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আমার দিকে ইশারা করে বলে ছিলেন আমি আমার এই সহকর্মীকে সাথে চাইবো।আপনার যখন যে কোন দেশে যাইতে প্রয়োজন হবে সব কিছুর ব্যবস্থা Amnesty International করবে।
.
ইয়ান মর্টিনের প্রশ্নে জবাব এখানে লিখতে গেলে অনেক লম্বা হযে যাবে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর লেখা স্বাধীনতা ৭১ নামক বইয়ে ইয়ান মর্টিনের জবাব লিখা আছে যা তিনি সেদিন বলেছিলেন। আগে থেকেই বৃটেইনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের কিছু সুবিধা ভোগ করেছি যা সৈয়দ আশরাফ ছাড়া কেউ জানতেন না কাউকে বলিও নাই, ইউনাইটেড ন্যাশনের পাসপোর্ট বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আমার নাম যখন বলেছিলেন অতি উৎসাহী হয়ে বিষয়টি আমার আত্মীয় একজন লোককে খুশি হয়ে বলে ছিলাম তার পর অনেক ইতিহাস। প্রতিহিংসুক এই লোকটিই ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ যখন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী দেশে ফিরেছিলেন তার ২দিন পর ১৮ই ডিসেম্বর এবং আমার ঠিক করা বিয়ের ১২ দিন আগে পুলিশকে জানিয়ে দিয়ে আমাকে ইমিগ্রেশন ফোন করে জানিয়ে ধরিয়ে দেয়, কারন সে জানতো বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যতদিন দেশে যাবেন না আমাকে দেশে পাঠাতে পারবেনা। যার সাথে আমার বিয়ে (আমার সহধর্মিনী)ঠিক হয়েছিলো তিনি দেশে চলে আসলেন এবং আমার বিয়ে দেশে গিয়ে করি। এ আরেক ইতিহাস যাই হোক এইসব বলা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র নির্দেশ পালন করেছি তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বজ্র বলে ডাকতেন আপন ভাইদের চেয়ে বেশী ভালোবাসতেন এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও নিজের বোনের চেয়েও বেশী মনে করেন, আমার প্রশ্ন কি এমন ঘটনা ঘটলো যে রাজনৈতিক ভাবে এত দুরে চলে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার ক্ষেত্র যারা তৈরি করেছিলেন জাসদের হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন আর স্বৈরাচারী এরশাদ এরা জননেত্রীর আপন হয়ে গেল আর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বঙ্গবন্ধু হত্যার একমাত্র সক্রিয় প্রতিবাদকারী অতি আপন জন আজ দুরে। আমার মনে হচ্ছে ভাইবোনদের মধ্যে আসলে কিছুই হয়নি হয়তোবা সামান্য অভিমান থাকতে পারে তবে আসল বিষয়টি হচ্ছে পল্টনে জননেত্রী বলেছিলেন কাদেরকে ছাড়া আমি জনসভার মঞ্চে উঠবোনা।সেদিন থেকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদিরা গভীর ষড়যন্ত্র করেছিল তারা বুঝেছিল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা একত্রে থাকলে তারা রাজনীতি করে লাভবান হতে পারবেনা, তাই সুযোগে ডিভাইড এন্ড রোল পলিসি করে ভাই বোনের মধ্যে মিথ্যা দুরত্ব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা।
.
আজ আওয়ামীলীগে এবং শেখ হাসিনার পাশে একজন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নেই কিন্তু একজন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর এই সময়ে থেকেও নেই কেন? আওয়ামীলীগে কি এমন কোন নেতা নাই যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী জাতির শ্রেষ্ট সন্তান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম আর হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ভাইবোনকে দুজনকে একই প্লাট ফরমে নিয়ে আসতে?রাজনীতিতে কত বড় বড় ভুল বুঝাবুঝি অবসান হয়েছে। সুবিধাবাদিরা দেশ এবং জাতির মধ্যে বিবেদ সৃষ্টি করেছে, প্রগতিশীল রাজনীতির বিদায় ঘন্টা দেখে আজ বড় বড় মিস করছি- একই প্লাট ফর্মে থাকা ভাইবোনকে।অন্ততঃ এই ভাই বোনের স্নেহ ভালবাসার মধ্যে কোন খাদ ছিল না বিশ্বাস করি এখনও নেই, তার পর কেন আপন হয়েও দুরে? বঙ্গবন্ধু যখন টাঙ্গাইল জেলার গভর্নর নিয়োগ করেন তখন টাঙ্গাইলের বড় বড় নেতারা একত্র হয়ে ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকীকে গভর্নর না করার জন্য,বঙ্গবন্ধু কাদের সিদ্দিকীকে আগে থেকেই পাশের রুমে এনে বসায়ে রেখেছিলেন নেত্রীবৃন্দের সব কথা শুনার জন্য, একসময় নেত্রীবৃন্দের জন্য শেখ হাসিনা এবং কাদের সিদ্দিকী যখন চা নিয়ে আসলেন টাঙ্গাইলের নেতারা কাদের সিদ্দিকীকে দেখে অবাক! বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসা করলেন কাদের তুমি এসেছো ভাল হয়েছে, বঙ্গবন্ধু নেত্রীবৃন্দের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন আপনারা কি মনে করেন যদি কাদের কে টাঙ্গাইলের গভর্নর করি আপনাদে কোন আপত্তি আছে থাকলে সামনা সামনি বলেন! সবাই তখন একবাক্যে বলেছিলেন খুব ভাল হবে অতচ এর আগে সবাই বিরুদ্ধে বলেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ভালো করে জানেন কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর এত বিশ্বস্ত ছিলেন টাঙ্গাইলের অস্ত্র জমার আগে কত নিগেটিভ কথা বঙ্গবন্ধুর কাছে বলা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শুনেননি,৭৫এ তিনিই একমাত্র পিতা হত্যার সক্রিয় প্রতিবাদ যুদ্ধ করেছিলেন। আজ এমন কি ঘটেছে তা আমরা জানিনা তবে এটা বলতে পারি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আপনার এবং এই দেশের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা, হয়তো মান অভিমান আছে। আপনাদের ভাইবোনের এ বন্ধন অটুট থাকুক সুখে দুঃখে এটা কামনা করি পরিশেষে আপনাদের এই জীবনের প্লাটিনাম বয়সে এসে -মোহাম্মদ রফির গানের সাথে সুর মিলায়ে বলি-“ভাই বেহেন কা পেয়ার রহেগা যবতক হে সংসার।” জীবদ্দশায় আপনাদের ভাইবোনকে দুরে থাকতে দেখে মধ্যখানে আমরা বড় কষ্ট পাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
.
লেখক : লন্ডন প্রবাসী রাজনীতিক সাংবাদিক। ইমেইল chanchal_math@yahoo.co.uk