সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কষ্টকথা

প্রকাশিত: ১২:৩৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২০ 821 views
শেয়ার করুন
হাওর হচ্ছে সাগর সদৃশ জলরাশির বিস্তৃত প্রান্তর। প্রচলিত অর্থে হাওর হলো বন্যা প্রতিরোধের জন্য নদী তীরবর্তী অবস্থানে নির্মিত মাটির বাঁধের মধ্যে গোলাকার নিম্নভূমি বা জলের আধার। হাওরের কথা বলতে গেলে অফুরন্ত জলরাশির সাগরের কথা আপনার মনে ভেসে উঠবে। শব্দ গঠনের ইতিহাস ও বাংলা ভাষার অভিধানে বলা হয় সাগর শব্দের অপভ্রুংশ হলো হাওর। মানুষের ভাষা প্রতিনিয়ত বদলে যায় খেয়ালে-বেখেয়ালে।
কালের বিবর্তনের ছুটে চলায় সাগর থেকে সায়র এবং সায়র থেকে হাওর শব্দের উৎপত্তি। বাংলাদেশ নদীমার্তৃক দেশ।বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ স্রষ্টার অপরূপ সৃষ্টি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জেলা শহর সুনামগঞ্জে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী আর হাওর-বাওর।ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে হাওরাঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১। পাহাড় নিকটবর্তী অঞ্চল – যেমন সিলেট, মৌলভীবাজারের হাওর।
২। প্লাবণ ভূমির হাওর- যেমন নেত্রকোনা,কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওর।
৩। গভীর পানিতে নিমজ্জিত হাওর- যেমন সুনামগঞ্জ,হবিগঞ্জ,নেত্রকোনার হাওর। কিশোরগঞ্জ, ইটনা,মিঠামইন, অষ্ট্রগ্রাম ও নিকলী উপজেলার সবগুলো হাওর গভীর পানিতে নিমজ্জিত হাওরের অন্তর্ভুক্ত।
সুনামগঞ্জের নামের সাথে যেমন সুনাম লেগে আছে তেমনি তার ভৌগোলিক সুনাম। হাওর অঞ্চলে সবুজ শস্য-শ্যামলা অপরুপ সুনামগঞ্জকে ডাকা হয় হাওরের মা নামে। সুনামগঞ্জ জেলার মোট হাওরের সংখ্যা ১৩৩টি। এসব হাওরের মধ্যে অন্যতম টাংগুয়ার হাওর,শনির হাওর,দেখার হাওর, মাটিয়ান হাওর।  হাওরাঞ্চলের মানুষের জনজীবন কত যে কঠিন তা নিজ চোখে না দেখলে কখনোই অনুভব করার কথা নয় । বর্ষা মৌসুমে হাওর ভরে যায় অথৈ জলরাশিতে।ভোরের আকাশে রোদের সোনালী আলো, দুপুরবেলা মাথার উপর তপ্ত আকাশ আর লিলুয়া বাতাস। গোধূলী বেলার রক্তিম আভার লুকোচুরি খেলা এবং পূর্ণিমা রাত্রিতে হাওরে শুরু হয় উৎসব জল জ্যোৎস্নার।  হাওরের গ্রামগুলো যেন একেকটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ভালোবাসার বন্ধন মিশে থাকে জলের বুকে হিজল-করচের শ্যামল মায়ার শীতল ছায়ায়। পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় পাহাড় ছোঁয়া কাশফুলের মতো শুভ্র মেঘমালা জল জোছনায় মাখামাখি করে হাওরের স্বচ্ছ জলরাশির বুকে।  যে সৌন্দর্যে মুগ্ধতায় আপনি ডুবে যাবেন অতি সহজেই। এই হল সুনামগঞ্জের হাওরের রূপ লাবণ্যের নন্দিত কথা । মুদ্রার এপিঠ- ওপিঠ যেমন থাকে ঠিক তেমনি রয়েছে এই হাওর অঞ্চলের জীবন-সংগ্রামের অবর্ণনীয় কষ্টকথা,কষ্টগাঁথা।
প্রকৃতির অসীম অপরূপ সৌন্দর্যের আড়ালে মিশে আছে মানুষের বেঁচে থাকার দুঃসাধ্য জীবন। বছরের পুরো ছয়টি মাস জলবন্দি থাকে তবুও ইস্পাত কঠিন মনোবলে লড়ে চলে নিদারুণ বেঁচে থাকার এক জীবন যুদ্ধে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়, অভাব-অনটন লেগেই থাকে হাওর অঞ্চলের মানুষদের প্রতিদিনকার জীবনে। শত সমস্যা, প্রতিকূলতা পিছনে ফেলে  এগিয়ে ছেলে জীবন সংগ্রামে। পড়ালেখার জন্য  হাওর বেষ্টিত এই অঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অসম যুদ্ধে নামে। বর্ণনাতীত কষ্ট আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ছুটে যায় বিদ্যা অর্জনে, জ্ঞানের স্বাদ আস্বাদনে। যখন বর্ষায় মেঘনার ঢল নামে তখন হাওর অঞ্চলের সিংহভাগ বিদ্যালয় অথৈ জলরাশিতে তলিয়ে যায়। জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো একাকী ভেসে থাকে হাওরের অথৈ জলরাশির মাঝে। জল-জোছনার সৌন্দর্য যেমন মানুষকে মুগ্ধ করে তাহলে অবশ্যই প্রকৃতির রূপ নিষ্ঠুরতা ভাবাবে যদি মনের মাঝে থাকে ভাবনা বিশেষ চিন্তা।  মুদ্রার যেমন এপিঠ ওপিঠ আছে ঠিক তেমনি প্রকৃতির ক্ষেত্রেও কখনো সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ আবার কখনো বিধ্বংসী ভয়ংকর। বর্ষাকালে যখন হাওরগুলো পরিপূর্ণতা লাভ করে তখন ফুলে উঠে হাওরের জলরাশি।
এসব স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগের জন্য নৌকাই একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। নৌকায় যখন যাত্রী হবেন তখন আপনার মনে হবে গান “আমায় ভাসাইলিরে অকুল দরিয়ার বুঝি কুল নাই কিনার নাই”। মৌসুমী বন্যা কিংবা বর্ষার ঢল নামলে জলে মগ্ন হয়ে থাকে হাওরগুলো। এই জলমগ্নতার সময়ে হাওর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা যাওয়া আসা করে বিদ্যালয়ে । হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে নৌকায় করে ছুটে যায় জ্ঞানার্জনের আলোকময়তার পথে অথৈ জলরাশির বুক চিড়ে।বিদ্যা অর্জনের লক্ষ্যে বর্ষাকালে এ অঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায়। চারিদিকে উত্তাল টেউ  আর বৈরী হাওয়ায় দীর্ঘ জলপথ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের খোঁজে বিদ্যালয়ে আসে হাওর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। হাওরাঞ্চলের রূপ লাবণ্যে যেমন মুগ্ধ হয় মানুষ তেমনি এর ভয়াবহতায় মানুষের জীবন হয়ে ওঠে বিধ্বস্ত ও ভীতিগ্রস্থ। জ্ঞান অর্জনের মহান পথে হাওর বাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থীরা শত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আসা-যাওয়া করে তারাই এর প্রকৃত কষ্ট জানে এবং এর মর্ম বুঝে। হাওর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে চাইলেও অনেক সময় তা করতে পারে না কেননা ইচ্ছার সাথে প্রকৃতির বিরুদ্ধে সবাই সামাল দিতে পারেনা।
হাওরে পূর্ণিমা রাতে জোছনার আলো বিলানো চাঁদের পাশে থাকা তারকারাজির মতোই প্রাথমিক স্তরেই ঝরে যায় অনেক শিক্ষার্থী। প্রতিকূল পথ, আবহাওয়া,  অভাব-অনটন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসসহ নানাবিধ কারণে পড়ালেখায় রফা টানে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাবাগান হতে অঙ্কুরে ঝরে যায় ভবিষ্যতের পুষ্প বৃক্ষ বিহঙ্গরা। অভাব অনটনের জন্য সাময়িক লাভের আশায় উপার্জনের জন্য অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের বিভিন্ন পেশায় যুক্ত করে দেন। অভাব যখন দরজায় দাঁড়ায় তখন শিক্ষা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায় এইসব অভাবী মানুষদের জীবনে। হাওর অঞ্চলের অভিভাবকগণ তুলনামূলক কম সচেতন মানে সহজ সরল। যার ফলে অনেকটা অজ্ঞাতসারে শিশুদের মাছ ধরার কাজে, পাথর শ্রমিক, ঘর বাড়ির বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করার মাধ্যমে এদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেন। একদিকে প্রকৃতির বৈরী হাওয়া অন্যদিকে পরিবারের অভাব অনটনের নির্মম ছোঁয়া।  হাওর অঞ্চল জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপ। জনবিচ্ছিন্ন পশ্চাদপদ অঞ্চল হওয়ায় এখানে শিক্ষক সংকট প্রবল গুণগত মানসম্মত বাস্তবতা ভিত্তিক প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষা প্রদানে অন্তরায়।
শহরের শিক্ষকরা হাওরের বিদ্যালয়গুলোতে পড়াতে খুব একটা আগ্রহবোধ করেন না । কেউ তদবির কিংবা অন্য কোন উপায় বের করে চলে আসেন হাওর ছেড়ে শহরের বুকে। যার ফলে হাওরাঞ্চলে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট প্রকট রূপ লাভ করে।  শিক্ষক স্বল্পতার প্রভাবে নিদারুণভাবে বিঘ্নিত হয় শ্রেণি পাঠদান। হাওরাঞ্চলে কেন শিক্ষকরা থাকেন না তা খতিয়ে দেখা দরকার। যখন এর প্রকৃত কারণ জানা যাবে তখন এর সমাধানও নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।  বহুমুখী সংকট আর সমস্যায় জর্জরিত সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের শিক্ষাকার্যক্রম। ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ অঞ্চলের শিক্ষার মান উন্নয়নে স্থানীয় শিক্ষাবিদরা বিভিন্ন পরামর্শ পরিকল্পনা দিয়েছেন । এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদরা হাওর অঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা নীতিমালা দাবি জানানো হচ্ছে সুদীর্ঘকাল ধরে। আশার বদলে বরং হতাশার মেঘ ভেসে বেড়ায় হাওরের আকাশে । যুগ যুগ ধরে উচ্চারিত প্রাণের দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিদ্যালয় সম্পর্কিত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় জেলায় ১৪৬৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ১৬৬ গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য উপজেলা পর্যায়ে ৬১ জন সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও ৩৭ জনের পদ শূন্য।  প্রায় ৬০০ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩৯৩টি। ১২৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সুনামগঞ্জ জেলায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে যথাসময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারেন না শিক্ষকগণ।
উল্লেখ্য প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষক হলেন নারী । এ অঞ্চলে সবার চলাচল বরাবর কঠিন আর হাওরাঞ্চলে নারীদের চলাচল কত কঠিন তা বলে বুঝানোর কিছু নেই। বর্ষার সীমাহীন জলরাশিতে ডুবে যায় সব সড়ক, সব গ্রাম। সেই সময় যোগাযোগের একমাত্র বাহন নৌকা। ঝড় বাদল কিংবা প্রতিকূল বৈরী আবহাওয়ায় অনেক সময় নৌকা ডুবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে ঐ মৌসুম। লাল সবুজের বাংলাদেশের বিশাল জায়গাজুড়ে স্বতন্ত্র সংগ্রামী জীবন যাপনের লড়াকু মানুষের আধুনিক উন্নত জীবন যাপনের সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত জনবিচ্ছিন্ন জনপদের নাম হল সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল।
বর্ষা মৌসুমে ভরে যায় রাশি রাশি জলে আর শীতের কুয়াশায় শিশিরবিন্দু যখন নরম দূর্বাঘাসে থাকে তখন জল শুকিয়ে সবুজ গালিচার রূপধারণ করে। উন্নত নাগরিক জীবনযাপন ও সুবিধাবঞ্চিত হাওরাঞ্চলের মানুষজন পিছিয়ে আছে শিক্ষায়। বর্তমানে আমাদের দেশের শিক্ষার ৭১% আর হাওর অঞ্চলের হার মাত্র ২০ থেকে ২৪ শতাংশ। আমরা সবাই জানি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতি বা রাষ্ট্রের উন্নয়ন অসম্ভব। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে আমরা সাফল্যের ছোয়া পেয়েছি। MDGতে আটটি লক্ষ্য অর্জনে  মোট ৩৩ টি উপসূচকগুলোর মধ্যে পুরোপুরি অর্জিত হয় ১৩টি।
MDG এর পর এখন আমাদের আরেক চ্যালেঞ্জ বা নতুন সম্ভাবনা হলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। এটি হলো ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত এক গুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রা ২০১৬ সাল হতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এর মেয়াদকাল এতে মোট ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ১৬৯ টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এসডিজি এর অন্তর্ভুক্ত জন্যও হতে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আমাদের। আমাদের লাল সবুজের এই বাংলাদেশ এমডিজি অর্জন করেছে আমাদের রাষ্ট্রীয় কর্মক্ষমতা আর দক্ষতার প্রভাবে। ২০৩০ সালের ভেতর এসডিজি তথা টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । এসডিজি অর্জনে অবশ্যই হাওরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি প্রদান করতে  শিক্ষার নীতি নির্ধারক কর্তৃপক্ষকে। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে জন্ম হয়েছিল আমাদের জন্মভূমির। সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কষ্টগাঁথার পরিবর্তন হবেই সবার একান্ত প্রচেষ্টায় আর সেই প্রচেষ্টার ফল স্বরূপ বাংলাদেশ অর্জন করবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। ঘুঁচে যাবে আছে যত অমানিশা যত অন্ধকার, হাওরের বুকে জমে ওঠবে সোনালি রুপালি আলোর নব প্রাণের নব সম্ভাবনার মেলা।