মদনপুর-দিরাই সড়ক: দশটি বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে আঞ্চলিক সড়কে ঢালাই!

◾মারাত্মক দূর্ঘটনার শঙ্কা চলাচলকারীর◾ দ্রুত খুঁটি অপসারণের জোর দাবি◾জুনের মধ্যে সরানো হবে খুঁটি: সওজ-পিডিবি।

প্রকাশিত: ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২৪ 71 views
শেয়ার করুন

দিরাই রাস্তার মুখ (মদনপুর) থেকে দিরাই পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। এ রাস্তাটির প্রয়োজনীয় অংশ সংস্কার করা হচ্ছে। কাঠইর, বৌগলারখাড়া ও দরগাপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে ৩টি আরসিসি সেতু। নোয়াখালী, গণিগঞ্জ, পাথারিয়া ও দিরাই বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাজারগুলোর সড়কে আরসিসি ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। মদনপুর থেকে দিরাই পর্যন্ত ৩টি সেতু, রাস্তার সংস্কার ও ৪টি বাজারের আরসিসি ঢালাইসহ সামগ্রিক কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের কাজ এখনো চলমান। বাজারগুলোতে নির্মাণাধীন রাস্তার প্রশস্ত ১০.৩ মিটার বা ৩৪ ফুট। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন জামালগঞ্জ, শান্তিগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ।

এ পথ ধরেই বাইপাস সড়ক তৈরি করা হচ্ছে আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং উপজেলা হয়ে হবিগঞ্জ পর্যন্ত। নির্মাণাধীন গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলাধীন নোয়াখালী বাজার এলাকায় ভয়ঙ্কর এক দৃশ্যের দেখা মিলেছে। বাজারের মূল সড়কে চলছে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ। সড়কের মধ্যে ১০টি বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই ইতোমধ্যে সিংহভাগ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন এ পথে চলাচলকারী যানবাহন চালক, পথচারী, বাজারের ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সমিতির লোকেরা। তারা মনে করছেন, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তার মাঝে রেখে দেওয়ার এসব বৈদ্যুতিক খুঁটির কারণে যে কোনো বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও সুনামগঞ্জ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে খুঁটি অপসারণ প্রক্রিয়া চলমান। জুন মাসের মধ্যেই খুঁটিগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার বিকালে নোয়াখালী বাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দিরাই-মদনপুর সড়কের নোয়াখালী বাজার অংশের আনুমানিক ১শ’ মিটারের মধ্যে চলছে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ। বেশিরভাগ অংশে ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলেও দক্ষিণ দিকে রড বাঁধাইয়ের কাজ চলছে। সড়কের ১০ জায়গায় সড়কের ভিতরে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। খুঁটিগুলো সড়কের ৩-৫ ফুট ভিতরে হবে। বিপজ্জন এসব খুঁটির ভিত্তির অংশটুকু খালি রাখা হয়েছে। এক ইট উঁচু করে গর্তের এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেখা যায়, নোয়াখালি বাজারের দক্ষিণ দিকে ভাই ভাই অটো রাইস মিলের সামনে একসাথে ২টি ভয়ঙ্করভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এরমধ্যে একটি ভেঙে পড়েছে। খুঁটির ভিতরে থাকার রডের সাথে ঝুলে আছে। মোজাম্মেল অটো রাইস মিলের সামনে রাস্তার মধ্যে আছে আরও ২টি খুঁটি, মেসার্স পূর্ণিমা ট্রেডার্সের সামনে ১টি, কৃষি ব্যাংকের বিপরীতে ১টি, পোল্ট্রি মোরগের দোকানের সামনে ১টি, মেসার্স দুর্জয় ফার্মেসির সামনে ১টি, নিরঞ্জন হেয়ার স্টাইলের সামনে ১টি ও রিমাদ টেলিকমের সামনে ১টি খুঁটি রাস্তার মাঝেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। যেগুলো খুবই বিপজ্জনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নোয়াখালী বাজারে নিয়মিত টমটম চালান নাজমুল ইসলাম এবং দিরাই রাস্তায় দীর্ঘ ১৪/১৫ বছর ধরে বাস চালান নাহিদ এন্ড মুন্নি স্পেসাল সার্ভিসের চালক নজরুল ইসলাম। তারা দু’জনই বলেন, খুঁটিগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি একটি ব্যস্ততম সড়ক৷ রাতে দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। যে কোনো সময় খুঁটির ধাক্কা লেগে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ যত দ্রুত সম্ভব খুঁটিগুলো সরিয়ে নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

নোয়াখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রোকনুজ্জামান রুকন ও সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আহমদ বলেন, অবশ্যই খুঁটিগুলো খুবই বিপজ্জনক। কিছুদিন আগে পিডিবির একটি টিম এসেছিলো। তারা দেখে গিয়েছে৷ আমাদের বলেছে দ্রুত খুঁটিগুলো সরিয়ে নেবে। আমাদের দাবি, বিপজ্জনক খুঁটিগুলো যেনো তাড়াতাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়।

সুনামগঞ্জ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু নয়মান বলেন, খুঁটিগুলো দ্রুত সরানো উচিত। কিন্তু টাকা না দিলে আমরা কিভাবে সরাবো৷ আগে টাকা পাই, তারপর টেন্ডার করবো। আজ (বুধবার) একটি চেক পাওয়ার কথা। অনেকদিন ধরেই আমরা সওজকে বলে আসছি৷ তারা অর্থ ছাড় দিলেই আমরা টেন্ডার আহ্বান করবো৷ চেষ্টা করবো জুন মাসের মধ্যেই সরিয়ে নেওয়ার।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ)’র নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, খুঁটি সরানো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। রাস্তা ঢালাইয়ের সময় এত সময় আমাদের হাতে ছিলো না। যদি সময় নিতাম তাহলে ওয়ার্ক ওর্ডারের সময় চলে যেতো। এজন্য খুঁটি রেখেই ঢালাই দিয়েছি৷ তবে খুঁটির নিচের অংশ খালি রেখেছি৷ খুঁটি তোলার পর আবার ঢালাই দিয়ে ভড়াট করে দেওয়া হবে। খুঁটিগুলো সরানোর জন্য পিডিবিকে বলেছি৷ তারা ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এধরণের খুঁটি সরাতে হলে একটু সময় লাগে। তারা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো সরায়। আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, জুন মাসের মধ্যে খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হবে।