সুন্দর থেকো সুন্দরবন

জাহান রিমা জাহান রিমা

লেখিকা, আমেরিকা

প্রকাশিত: ১২:৫৮ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০২০ 519 views
শেয়ার করুন

ঘটনাটি নৃতাত্ত্বিক অমিতাভ ঘোষের দ্য হাঙ্গরি টাইড উপন্যাস কিংবা সালমান রুশদির বুকার পুরস্কার বিজয়ী উপন্যাস মিডনাইটস চিলড্রেন-এর কাহিনির অংশবিশেষের মতো। কয়েক দিন আগে ভেলেনসিয়া কলেজে আমার প্রেজেন্টেশনের বিষয়বস্তু ছিল; আমার দেশের বুকের জমিনে বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, বিশ্বের সব থেকে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন।
যার কারণে এবং বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে আমি গর্ব করে ক্লাসের বিরাট হলরুমে থাকা সহপাঠীদের উদ্দেশে বক্তৃতার মতো করে বলি, হোয়াট মেকস আ গ্রেট ভ্যাকেশন। সুন্দরবন আমার দেশের একখণ্ড সবুজ পোশাক। বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪ দশমিক ২ এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪ ভাগজুড়ে পরিহিত এই প্রাচুর্যের পোশাক। পারো যদি ভ্যাকেশন গ্রেটফুল করো, সেথায় গিয়ে!

মর্ত্যের এমন স্বর্গীয় সৌন্দর্যভূমি বোধ হয় পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আছে আমার দেশ বাংলাদেশ। আছে ভৌগোলিক গঠনের এই বদ্বীপের উপকূলজুড়ে। অসংখ্য জলধারা, জলতলে ছড়িয়ে থাকা মাটির দেয়াল, জালের মতো জড়িয়ে থাকা খাল, স্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী জলাভূমি, কাদা চর, প্রান্তীয় তৃণভূমি, সৈকত, মোহনা, খাড়ি, বালুতট, বালিয়াড়ি। তিন কোনা দ্বীপের সমন্বয়ে বৈচিত্র্যময়ভাবে গঠিত হয়েছে প্রকৃতির এই সুনিপুণ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।
আমাদের সুন্দরবনে আবাসস্থল ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রজাতির প্রাণীর। সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, শুশুক, কচ্ছপ, অজগর, গন্ডার, কুমির, মহিষসহ অসংখ্য বিরল প্রাণীর।

এখানেই প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া গোলপাতাগাছসহ ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদের (১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন-এর হিসাবমতে) স্বর্গভূমি! জালের মতো পরস্পরযুক্ত নৌপথে সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই সহজে নৌকা নিয়ে ভ্রমণ করার বিশাল সুযোগ যদি পাও, তবে ঘুরে এসো আমার দেশের সুন্দর বনভূমি সুন্দরবন। ওয়েলকাম তোমাদের।

সুন্দরবনকে নিয়ে সগর্বে যাবতীয় বর্ণনা যখন বলছিলাম, তখন ক্লাসজুড়ে যে করতালি দেখেছি তার আবেশ বেশ সুখকর। দেখেছি মার্কিন, স্প্যানিশ, হাইতি, রাশিয়াসহ অনেক দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের চোখে। সুন্দরবনকে একটিবার দেখে আসার তীব্র ইচ্ছা। আমি তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই প্রকৃতি-সৃষ্ট রূপবতী এই বনভূমির সঙ্গে। সুন্দরবনের সঙ্গে, আমার প্রিয় দেশের সঙ্গে।

প্রিয় দেশ, বিদেশের মাটিতে স্বদেশকে নিয়ে গর্ব করার এই গৌরবময় বনাঞ্চল ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয়, খেয়াল রেখো খুব। রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার চুক্তির ফলে যেন বিনষ্ট না হয় মনোলোভা সৌন্দর্যের এই বনভূমি; সেই প্রচেষ্টার সচেষ্টতা যেন থাকে সরকার, সাধারণ মানুষসহ সবার।

দেশের বনজ সম্পদের একক এবং বৃহত্তম উৎস এই বনভূমি বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প যেমন সমুন্নত রাখছে, তেমনি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের এই লীলাভূমির জলভেজা বিশুদ্ধ বাতাসের গল্প যেন দূরদেশ, বহু দেশ বহু কাল পেরিয়েও যেন প্রাণোচ্ছ্বাসে গর্ব করে বলতে পারে স্বদেশে-বিদেশে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। ভালো থেকো, সবুজ থেকো ভ্রমণকে উপভোগ করার প্রণোদনা দেওয়া প্রাণের সুন্দরবন।

  • মাসুমা আক্তার জাহান রিমা: ভেলেনসিয়া কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র