জমকালো আয়োজনে শেষ হলো দ্বিতীয় সার্বজনীন গোলাপগঞ্জ উৎসব

প্রকাশিত: ৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ 202 views
শেয়ার করুন

বৃটেনের বহুজাতিক সংস্কৃতির মাঝে বাংলাদেশিদের মূল শেঁকড় বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি-কৃষ্টিকে লালন আর ধারন করে ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল গোলাপগঞ্জবাসীদের প্রাণের উৎসব দ্বিতীয় সার্বজনীন গোলাপগঞ্জ উৎসব ২০২২।

দিনব্যাপী অনুষ্টানে হাজারো মানুষের আনাগোনায় একখণ্ড উৎসবে পরিনত হয়েছিলো গোলাপগঞ্জবাসীদের এই মিলনমেলা। লন্ডন ছাড়াও লুটন, বার্হিমংহাম, কেন্ট, আশফোর্ড, রেডিং, মানচেস্টারসহ বিবিন্ন শহর থেকে সকাল ১০টা সবাই জড়ো হতে থাকে ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্কের শহীদমিনারের সামনে।

এখানে বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে উদ্বোধনী ঘোষণা করেন উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আবু তাহের। এরপর পরই উদযাপন কমিটির সদস্যসহ প্রায় ৫০ টির মতো সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারে দুপুর সাড়ে ১২টায় র‍্যালী শুরু করে বাংলা টাউন হয়ে শেষ হয় উৎসবের মূল হল ব্রাডি আর্ট সেন্টারে।

দুপুরের খাবারের বিরতির পর বিকাল ৪টায় জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের ২য় পর্ব। জাতীয় সংগীতের পর পরই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব তমিজুর রহমান রঞ্জু।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা ও ইউনিয়ন ভিত্তিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কাউন্সিলরবৃন্দ, সাংবাদিক, সপরিবারে উপস্থিত হয়েছিলেন গোলাপগঞ্জের মুরব্বিয়ান, যুবক সহ বিপুল সংখ্যক গোলাপগঞ্জবাসী।

গোলাপগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র, বিয়ের গান, ধামাইল, পুঁতি, সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা, সিলেটি নাটক আর সিলেটি গান। উৎসবে কমিউনিটিতে অবদানের জন্য প্রথমবারের মতো গোলাপগঞ্জের গুণীজনদের মধ্যে ৫ জনকে মরণোত্তর সম্মাননা ও ৪ জনকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। মরণোত্তর সম্মাননা প্রাপ্ত গুণীজন হলেন তাসাদ্দুক আহমেদ, নেছার আলী, নবাব আলী, হাফিজ মজির উদ্দিন ও খন্দকার ফরিদ উদ্দিন এবং আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত গুণীজন জনাব সালেহ আহমদ খাঁন এমবিই, হাফিজ শামছুল হক, ইসহাক আলী ও আতাউর রহমান খান।

এছাড়াও ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সফলতার জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় তিন জনকে। সম্মানিত ব্যক্তিরা হলেন স্টক অন ট্রেন্ট এর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, শিক্ষানুরাগী ও ক্যাটারার্স আব্দুল মতিন, আকলু প্লাজার স্বত্বাধিকারী ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী আকলু গ্রুপের চেয়ারম্যান আকলু মিয়া, বারাকা পতেংগা পাওয়ার লিমিটেড চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোলাম রাব্বানী চৌধুরী। মরণোত্তর সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁদের পরিবারের সদস্যবৃন্দ। বাবার কৃতকর্মের স্বীকৃতি নিজ এলাকার পক্ষ থেকে পেয়ে গর্বিত সন্তানেরা। পাশাপাশি উৎসব কমিটি একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সব গুণীজনদের সম্মানিত করতে পেরে আনন্দিত।

প্রথমবারের মতো সার্বজনীন গোলাপগঞ্জ উৎসবের মাধ্যমে এ সম্মাননা প্রদান করায় তা সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এবং শুভেচ্ছা জানান টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।

তিনি বলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে গোলাপগঞ্জের গুণীজনদের গুরুত্ব অপরিসীম। গোলাপগঞ্জবাসীর ইতিহাস গৌরবের। সকলের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জ উৎসব এটা অন্যান্য উপজেলার মানুষের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ থেকে উৎসবে যোগ দিতে আসা দৈনিক শুভ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সারওয়ার হোসেন বলেন, আমি গর্বিত আমার নানাবাড়ি গোলাপগঞ্জে।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসী গোলাপগঞ্জবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম। আজ লন্ডনের এ উৎসব যেন একখণ্ড গোলাপগঞ্জে পরিনত হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এসময় মেয়র লুৎফুর রহমানকে আজীবন সম্মাননার উত্তরীয় পরিয়ে দেন আহ্বায়ক আবু তাহের ও সাংবাদিক আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল এবং সারওয়ার হোসেনকে সদস্য সচিব তমিজুর রহমান রঞ্জু ও কোষাধ্যক্ষ মাসুদ আহমেদ জোয়ারদার আজীবন সম্মাননা উত্তরীয় পরিয়ে দেন।

এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কেবিনেট মেম্বার ও সাবেক ডেপুটি মেয়র আ ম অহিদ আহমদ, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সপ্তাহিক দেশ এর সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, সাবেক প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক নবাব উদ্দিন, কবি ও সাহিত্যিক আহমেদ ময়েজসহ গোলাপগজ্ঞের বিনিন্ন পেশাজীবি ব্যক্তিবর্গ।

অনুস্টানে বিশেষ আকর্ষণ ছিল গোলাপগঞ্জ এর প্রতিটি গ্রাম নিয়ে জারীগান এবং সিলেটের জনপ্রিয় নাট্যকার ও অভিনেতা বেলাল আহমদ মুরাদ, এডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি, বিপ্লব এষ -এর পরিবেশনায় নাটিকা।

অনুস্টানের উপস্থাপনায় ছিলেন বৃটেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক ফারহান মাসুদ খান ও বিশিষ্ট আবৃতিকার মুনিরা পারভীন।

সিলেটি কবিতা পাঠ ও আবৃতি করেন জনপ্রিয় আবৃতিকার মুনিরা পারভীন, ছড়াকার দিলু নাসের, কবি মাসুক ইবনে আনিস, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কবি মুজিবুল হক মনি, শতরুপা ও সাহেরা খাতুন।

তরুণ বাশী বাদকের বাশির টানে মাতিয়ে রাখে সারা অনুস্টান। অনুস্টানের ফাকে ফাকে গান পরিবেশন করেন বিলেতের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী গৌরী চৌধুরী, আলাউর রাহমান, হাসি রানি, মিতা তাহের, শতরুপা দিলরুবা, মৃদুল ও মহিমা।

নিত্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন সনিয়া সুলতানা, নন্দিনি, প্রেরণা, রিয়া। এছাড়াও বিয়ের অনুষ্ঠান পর্বে ছিলেন ক্ষুদে শিল্পীরা। তবলা, অক্টোপেড, কিবোর্ড পরিচালনায় ছিলেন বিলেতের স্বুনামধন্য ব্যক্তিরা।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মানুষে জায়গা সংকুলাননা হওয়ায় অনেক গুলো পরিবার হলে ঢুকতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশকরে বলেন আগামীতে এ উৎসব যেন বৃহৎ পরিসরে পালন করা হয় যাতে সবাই সপরিবারে উপভোগ করতে পারেন। সবশেষে রাফেল ড্র এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়।