লন্ডনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ইউকের বিশ বছরপূর্তি উদযাপন

প্রকাশিত: ১:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২২ 246 views
শেয়ার করুন

গত রবিবার ১৯ জুন ২০২২ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ইউকের বিশ বছরপূর্তির দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন উদযাপিত হলো পূর্ব লন্ডনের রিচ মিক্স সেন্টারে। কেন্দ্রের পরবর্তী প্রজন্ম ‘উত্তরাধিকার’ সদস্যদের আন্তরিক এবং মনোমুগ্ধকর আপ্যায়ন দিয়ে শুরু হয় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দের আসন গ্রহণ।

অনুষ্ঠান শুরু করেন খাদিজা রহমান ও ফাহমিদা বেগম টি. এস. এলিয়টের ‘দ্য লাভ সং অব জে আলফ্রেড প্রুফ্রক’ কাব্যাংশের পাঠ দিয়ে।

আলোকিত মানুষ হবার ও গড়ার লক্ষ্যে যেন সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এমন উদ্দীপনায় সমবেত কণ্ঠে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ‘থিম সং’ ‘আলো আমার আলো ওগো আলো ভূবন ভরা’ গানটি পরিবেশনার পর ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’র সুর-মূর্চ্ছনায় বিশিষ্টজনদের সাথে নিয়ে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করেন বিএসকে, ইউকে-র প্রথম সভাপতি এবং বর্তমান উপদেষ্টা কবি শামীম আজাদ। বিলেতে গত বিশ বছর যাবত কমিউনিটিতে বিশ্বসাহিত্যের নানানমুখী চর্চার দীর্ঘ সময়ে পথ চলার সঙ্গী হয়ে থাকবার জন্য তিনি উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

সদ্য প্রয়াত শ্রদ্ধেয় আব্দুল গাফফার চৌধুরী স্মরণে তাঁর অমর কবিতা ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেন মোস্তফা জামান চৌধুরী নিপুণ ও আরফুমান চৌধুরী। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা-জ্ঞাপনপূর্বক বক্তব্য রাখেন কবি শামীম আজাদ।

এরপর গত বিশ বছরে বিএসকে, ইউকে-র উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের উপর স্লাইড শো প্রদর্শন করা হয়। এ পর্যায়ে বুলবুল হাসান বিএসকে, ইউকে-র বর্তমান সভাপতি এস এম জাকির হোসেন -এর সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে বিএসকে, ইউকে কীভাবে ঢাকা বিএসকে-র কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় রক্ষা করে আলোকিত মানুষ গড়ার মূল লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে চলছে, সেসব বিষয়ে আলোকপাত করেন। কেন্দ্র, ইউকে-র সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘চলিষ্ণু’ ই-বুক পাবলিকেশন নিয়ে যেভাবে কাজ করে চলছে, বুলবুল হাসান তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপও প্রদর্শিত হয়।

পরবর্তী প্রজন্ম ‘উত্তরাধিকার’ প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে আদনীন তারান্নুম সারথী কেন্দ্রের কাজের সাথে তাদের প্রজন্মের সম্পৃক্ততার ইতিবাচক অনুভূতি তুলে ধরে এবং ভবিষ্যতে বাংলা ক্লাসিক সাহিত্য-নির্ভর কাজের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

বিশ বছরপূর্তি উদযাপনে বিএসকে, ইউকে বাংলার নব জাগরণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে—এমনসব সাহিত্যকর্মের উপস্থাপনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে । মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘মেঘনাদ বধ’ মহাকাব্যে যে অংশ মেঘনাদ হত্যার চিত্র তুলে ধরে, সেই অংশ থেকে পাঠ করেন জহুরুল ইসলাম রাসেল, সাদেক আহমাদ চৌধুরী সাদী, ফাহমিদা বেগম, খাদিজা রহমান, সৈয়দা সায়মা আহমেদ, অনিন্দিতা তাহসিন ও আমাল নাওয়ার। চরিত্র-নির্ভর মুখোশ পরিধান করে ভিন্নধর্মী এ পাঠ দর্শকদের বিশেষ দৃষ্টি কাড়ে।

এ দিনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য এবং মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত উপন্যাস ‘শকুন্তলা’ অবলম্বনে নাটক ‘শকুন্তলা’। করোনার অতিমারিরূপ যখন বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছিলো, সে সময় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ইউকে-র নেতৃত্বে বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাসরত কেন্দ্রের সদস্যবৃন্দের অংশগ্রহণে নির্মিত হয় নাটকটি। এর অভিনব দিকটি উল্লেখ না করলেই নয়। অভিনয় শিল্পীবৃন্দের নিজ নিজ মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও-ক্লিপস সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন নাটকটির পরিচালক সৈয়দা সায়মা আহমেদ। ’শকুন্তলা’র নাট্যরূপ দিয়েছেন অমিতা চক্রবর্তী (বাংলাদেশ), আলমগীর শাহরিয়ার (বাংলাদেশ), আরফুমান চৌধুরী (যুক্তরাজ্য), সৈয়দা সায়মা আহমেদ (যুক্তরাজ্য)। পাঠ ও অভিনয়ে অংশ নেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় (বাংলাদেশ), মৃদুল আহমেদ (যুক্তরাষ্ট্র), ফারজাহান রহমান শাওন (যুক্তরাষ্ট্র), মনিজা রহমান (যুক্তরাষ্ট্র), শাহনীলা রহমান (কুয়েত), ফাহমিদা বেগম (যুক্তরাজ্য), আরফুমান চৌধুরী (যুক্তরাজ্য), সাদেক আহমাদ চৌধুরী সাদী (যুক্তরাজ্য), খাদিজা রহমান (যুক্তরাজ্য), মোস্তফা জামান চৌধুরী নিপুণ (যুক্তরাজ্য), শোয়েব চমক (যুক্তরাজ্য) ও শিশু শিল্পী সারিনা জেইবা (যুক্তরাজ্য)। নাটকের সঙ্গীতে কণ্ঠ দেন মেরিনা আহমেদ (যুক্তরাষ্ট্র), শরীফ আতিক-উজ-জামান (বাংলাদেশ), ইমতিয়াজ আহমেদ (যুক্তরাজ্য), সাবিহা নাজনীন কাকলী (বাংলাদেশ), তাসলিমা পারভীন (যুক্তরাজ্য), শান্তা চৌধুরী যুক্তরাজ্য), কওসার জান্নাত (যুক্তরাজ্য), সাদেক আহমাদ চৌধুরী সাদী (যুক্তরাজ্য), আরফুমান চৌধুরী (যুক্তরাজ্য), সারিনা জেইবা (যুক্তরাজ্য) এবং রামিরা হাসান (যুক্তরাজ্য)।

সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে যুক্ত হন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি বিএসকে, ইউকে-র বিশ বছরপূর্তি উদযাপনের প্রতি শুভকামনা জানান। তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথমদিনের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন কবি শামীম আজাদ।