সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা করেই চলছে কাজকর্ম

তোহুর আহমদ তোহুর আহমদ

লেখক ও শিক্ষক

প্রকাশিত: ৬:২০ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২০ 1,303 views
শেয়ার করুন
বাংলাদেশে চলছে করোনা ভাইরাসের অদৃশ্য আগুনের দাবানল। এ আগুনের লেলিহান থাবায় পড়ে গ্রাম থেকে শহর, দিন মজুর থেকে সরকার কিংবা মসজিদ থেকে সংসদ সবই যেন তার দৌরাত্ম্যে দাস হয়ে গেছে। তারই সামনে আজ সারাবিশ্ব নতজানু হয়ে উন্মাদনার শ্রীহীন মুখোশ আত্নপ্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে। সে যেন মহা শক্তিধর নৃপতি। তারই ভয়ে কেউ যেতে চায়না কারো পাশে। হাতে হাত রাখতে চায়না অতি প্রিয় সুহৃদ। সবাইকে মনে হচ্ছে সতর্কতার উপর ডিগ্রী প্রদান করে দিবে মহামারী করোনা ভাইরাস।
 
সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা করে চলছে হাট-বাজার। করোনা ভাইরাস যদিও হাট-বাজার থেকে বেশি পরিমাণ প্রভাব বিস্থার করে তবুও বাংলাদেশীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজার খোলা রাখছেন। কারণ দৈনন্দিন জীবনে হাট-বাজার হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখান থেকে লোকজন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী অথবা জীবিকা নির্বাহের কেন্দ্রস্থল হিসেবে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। সেখান থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় মানুষে মানুষে বাড়ছে সামাজিক দূরত্ব। সবাই মাস্ক পড়ে ঘড় থেকে বের হওয়ার অভ্যাস তৈরি করে ফেলেছে নিজ থেকেই। বেশি বেশি হাত ধৌত করে সবাই পুরোপুরি না হলেও মুটামুটি পর্যায়ে একটি পরিবেশ নিজে থেকেই তৈরি করে নিচ্ছেন।
 
করোনা ভাইরাসের আগে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের একজন অন্যজনকে দেখা হওয়ার সাথে সাথেই সালাম হাত মিলিয়ে অথবা জড়িয়ে ধরে মুসাফার ব্যাপার লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু লোকজন যেই বুঝতে পারেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে মানুষ থেকে মানুষে, এটা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে আর মানুষ বৃদ্ধি পায় গাণিতিক হারে সেই থেকে তারা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সাময়িকভাবে এসব থেকে বিরত থাকার অভ্যাস তৈরি করে ফেলেছেন। এ যেন অর্থনীতিবিদ ম্যালথাসকে ভাবনায় ফেলে তার জনসংখ্যা তত্ত্বের কোথায় একটা ভুল আছে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মতো।
 
ম্যালথাসের সূত্রানুযায়ী জনসংখ্যা বাড়ে ১,২,৪,৮,১৬,৩২,৬৪…….. এরকম ধারাবাহিকতায় দ্বিগুণ ভিত্তিক। কিন্তু করোনা ভাইরাস যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চায় ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব ভুল। মানুষ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়না করোনা ভাইরাস বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে। আর ১,২,৪,৮,১৬,৩২,৬৪……. ধারাবাহিকতায় ছড়িয়ে পড়ে মানব সমাজকে মৃত্যুর হিমশীতল কালো ছায়ায় আচ্ছন্ন করে ফেলে করোনা ভাইরাস।
 
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো মসজিদ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পরও মুসল্লীরা মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় নিজে থেকেই একটু কমিয়ে নিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের আগে মানুষ যেরকম স্বতঃস্ফূর্তভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতেন এ পর্যায়ে এসে দেখা যাচ্ছে তার ব্যতিক্রম। যেসব মসজিদে প্রতি ওয়াক্তের নিয়মিত সালাতে মুসল্লী উপস্থিত হতেন কমপক্ষে ৪০-৪৫ জন। বর্তমানে পাওয়া যায় ৭-৮ জন। করোনা ভাইরাসের এ সময়ে মুসল্লীদের আত্নসচেতনতা সমাজ সেবার পর্যায়ে পড়ে। তাদের একটাই কামনা আল্লাহ যেন পৃথিবীকে আবারও স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসেন।
 
করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে সামাজিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। কারণ বিবাহ অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রীতিভোজের সময়টিতে করোনা ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশ্ব মহামারির এ পর্যায়ে এসে বিবাহ অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা সরকার থেকে। লোকজনও মেনে চলছেন এ আদেশ। বিবাহ করা থেকে বিরত আছেন বর্তমান অবস্থাতে।কারণ তারা চায় তাদের নিজেদের সুরক্ষা।
 
বর্তমানে দেশের সকল কায়িক শ্রমিকগণ তাদের নিজেরা বাহিরে কোথাও যাচ্ছেন না। কারণ কাজে গেলেই বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন মানুষের সাথে উঠা বসা করতে হবে। সেখান থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে বেশি। এজন্য বাস,ট্রাক,লেগুনা,মটর সাইকেল ও সি.এন.জি চালকগণ এসব বন্ধ রেখে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত রেখে চলছেন। যদিও ব্যপারটি অনেক বেশি পীড়াদায়ক।
 
পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবদার থাকবে, অবিলম্বে চালক ভাইদের জন্য করোনা মহামারী কালীন একটি ভাতার ব্যবস্থা করুন। কারণ তাদের পরিবার চালানোর টাকা আসে গাড়ি থেকে। দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের চলাচল বন্ধ হওয়ায় বৈধ লাইসেন্স ধারী সকল চালক ভাইদের অবস্থা নাজেহাল হয়ে পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আপনি তাদের প্রতি একটু মমতার দৃষ্টি রাখলে তারা তাদের পরিবার নিয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে ইনশাআল্লাহ।