মরীচিকার ধাঁধাঁয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জীবন

তোহুর আহমদ তোহুর আহমদ

লেখক ও শিক্ষক

প্রকাশিত: ৫:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২০ 816 views
শেয়ার করুন
করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে বন্দি বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন। করোনায় যেন বিদ্যালয়গুলো জন বিছিন্ন ধুঁ ধঁ মরুভূমির মাঝে পথহারা পথিকের মরিচীকার ধাঁধাঁয় পড়ে উষ্ণ বালুকাময় স্থানে ছায়াহীন ঘন ঘনে রোদে তৃষ্ণার্ত চাতকের ন্যায় অসহায়ত্বের তীব্র নিঃশ্বাস ফেলছে। সামনের দিকে থাকিয়ে ভেবে নেয় এই বুঝি তৃষ্ণার মাঝে নবদূত টলমলে পানি আবির্ভাব ঘটছে। কাছে গিয়ে মরুর চলনায় অনিশ্চিত গন্তব্যের ব্যাথায় হু হু করে কাঁদিয়ে তুলছে পথিকের হৃদয়। হেরে এতো পানি নয় এই বুঝি অবেলায় চলে এসেছে মোর জমদূত।
 
বাংলাদেশে প্রথম যখন করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয় তখন সেটাকে তেমনভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বহু নেতারা গায়ের জোড় দেখিয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে বহু রকমের তামাশার কথা বলে সমালোচনার পাত্র হয়ে নর্দমায় নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষার্থী উভয়টির মধ্যে বড় রকমের দুরুত্ব তৈরি হয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেমে এসেছে শোকের রেখা। এ যেন লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে খেলা করার মতো একটি ব্যপার হয়ে গেলো।
 
করোনা ভাইরাসের বন্ধের আগে শিক্ষার্থীদের যা পড়ানো হয়েছে এসব কিছু তারা ভুলে গিয়ে আস্তে আস্তে তারা অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি বর্তমান সময়ে যেভাবে বাড়ছে এরকম বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া আর স্বহস্থে নিজের সন্তান-সন্ততির জীবন বিপন্ন করার একই কথা।আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
 
দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখা অনেক জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ করোনা ভাইরাস তখনই আক্রমণ করে যখনই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গমন করা হয়। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞরা বিদ্যালয় খুলার পক্ষে কথা বলছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়গুলো খুলে দিলে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। দেশে বর্তমানে যে হারে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে টিক যেন জ্বল জ্বল করে আগুনে বারুদ পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য।
 
বাংলাদেশের বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণীকক্ষ এতোটা উন্নত নয় যেখানে শিক্ষার্থী দিনের সবটুকু সময় নিরাপদে কাটাতে পারবে। শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার ক্ষতি না হয় এমনভাবে তাদের কাছ থেকে পড়ালেখা আদায় করার সুন্দর একটি ব্যবস্থা করা যায় এ ব্যপারে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্তে পৌছাতে হবে।
 
ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন স্কুল-কলেজের প্রাণ। এই দুই স্থরে শিক্ষার্থীদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরীক্ষা রয়েছে। যা হলো এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষা। যারা এ দুটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবেন তারাই দেশের সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। ২০২০ সালের এস.এস.সি পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছে শিক্ষার্থীরা।অপরদিকে এইচ.এস.সি পরীক্ষা এপ্রিলে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখনো হচ্ছেনা করোনা ভাইরাসের কারণে। স্থগিত ঘোষণা হয়েছে দেশের সকল পরীক্ষা। এজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতির অনেক কম সময় পাবেন। সাধারণত শিক্ষার্থীরা এইচ.এস.সি পরীক্ষার পরে ফলাফল, ভর্তি প্রস্তুতি ও ভর্তি পরীক্ষা এসবের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রায় ছয় মাস সময় পান তারা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে তারা এতোটা সময় পাবেননা।এইচ.এস.সি পরীক্ষার পরে ভর্তি পরীক্ষার যতেষ্ট সময় না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এজন্য প্রতিটি এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থীর প্রতি একটি বিশেষ পরামর্শ থাকবে এখন থেকেই আপনারা ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতির সাথে সাথে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ইনশাআল্লাহ সফল হবেন।
 
করোনা ভাইরাসের বন্ধ ঘোষণার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছিলো। তাদের তিনটি পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তি পরীক্ষাগুলো করোনা ভাইরাসের কারণে স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ধরে নিতে পারেন তাদের জীবন থেকে মূল্যবান একটি বছর শেষ হয়ে গেছে। তাদের চাকরির বেলায় মারাত্নকভাবে প্রভাব ফেলবে এই একটি বছর।
 
মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল মার্চের ২৮ তারিখে কিন্তু স্থগিত হওয়া পরীক্ষা যে কখন হবে তা অনিশ্চিত। তারাও তাদের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে ফেলছে।
 
যেসব পোস্ট গ্রেজুয়েট ভাইদের বয়স ২৯ বছর। তার চাকরির জন্য হন্ন হয়ে ঘুরছিলেন। ২০২০ সালে তাদের বয়সসীমা ৩০ অতিক্রম করে তাদের জীবনে ধেঁয়ে আসছে তীব্র অন্ধকারের বেদনা।
 
পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের জীবনের ব্ল্যাক ইয়ার হলো ২০২০ সাল। এই সনে সকল স্থরের শিক্ষার্থীর জীবন থেকে একটি বছর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আকুল আবেদন থাকবে ২০২০ সালকে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনকে অর্থবহ করার জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যাতে সারাটি বছর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সময় হেলায় খেলায় সময় নষ্ট না হয়।