মিড এজ ক্রাইসিস

ফারহানা ইন্দ্রা ফারহানা ইন্দ্রা

লেখক ও উদ্যোক্তা, ঢাকা

প্রকাশিত: ৩:২৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০২১ 939 views
শেয়ার করুন

 

আপনার আশেপাশে ৩৫/৪০+ মহিলা বা পুরুষদের অবজার্ভ করে দেখবেন এরা বেশিরভাগই অসুখী! চোখেমুখে বা কথাবার্তায় খুবই অসুখী। যত বয়স বাড়তে থাকে এই অসুখী থাকার হার ও পাল্লা দিয়ে বাড়ে। কিন্তু কেন? এই কেনর উত্তর অনেক ডীপ মানে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো ডীপ! কেন ডীপ বলছি? বা এতো ডীপ কেন? এদেশে মেয়েদের শেখানো হয় ‘উপযুক্ত বয়সে ‘ বিয়ে কর, বাচ্চা নেও লাইফ সেটল কর! ছেলেদের বলা হয় ক্যারিয়ার বানাও, মেয়ে পিছে ঘুরবে।

এখন কাহিনী প্যাচ খায় এই দুই দল যখন মুখোমুখি হয়। কিভাবে? যখন মেয়েদের উপযুক্ত বয়সে বিয়ে ‘দেয়া হয় ‘ তারা নিজেদের দিকে তাকানো ভুলে পতি এবং তার পরিবারের মনোরঞ্জন এ ব্যস্ত হয়। ফলাফল? ৩৫ হতে হতে খুব স্মার্ট মেয়েটিও পোতায়ে যায়, দুয়েকটা বাচ্চা থাকে, ডেলিভারি জনিত কারণে স্থুলতা খুবই কমন। এছাড়াও যদি ওয়ার্কিং উওম্যান হয় তার উপরে ‘ভালো বউ এবং মা ‘ হওয়ার এক্সট্রা প্রেসার থাকে।

যদি হাউজওয়াইফ হয় তখন থাকে ‘কিছুই কর না ‘, ফলে নিজেকে সারাক্ষণ প্রমাণ করতে হয় ওয়ার্কিং, নন ওয়ার্কিং দুই দলকেই।
দুই দলই নিজের দিকে তাকানো ভুলে যায় ‘অন্যের সুখের জন্য ‘! ওয়ার্কিং উওম্যান রা বাইরে বের হয় বলে মিনিমাম একটা মেইনটেইনিং করতে বাধ্য। কিন্তু দিনশেষে তারাও শোনে ‘ কি করলা সারাজীবন? ‘ আর হাউজওয়াইফ দের বলাই বাহুল্য! এইভাবে তাদের ‘ক্রাইসিস ‘ শুরু হয়। নিজের পারফেক্ট প্লেস তারা যেন খুজেঁই পান না। সাধারণত এ বয়সে বাচ্চারা বড় হয়ে নিজেদের আলাদা জগতে থাকে, মায়েরা হাজার চেষ্টা করেও সেখানকার নাগাল পান না। এদিকে পার্টনার যদি সাপোর্টিভ না হয় তখন রিয়েল ‘ক্রাইসিস ‘ শুরু!

খুবই অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য হাজবেন্ড, ওয়াইফ দুজনেরই সাধারণত সুগার, প্রেসার শুরু হয়। মানসিক প্রেসার ও একটা ইস্যু থাকে। যেহেতু ‘ভালো ‘ বউ বা জামাই হতেই হবে সেহেতু সাধারণত স্বামীর আচরণ থাকে লাইক ‘তুমি এ বাড়ির বউ সবার কেয়ার করবা। ‘ সেটা একসাথে থাক বা দুরেই থাক। আলাদা থাকা মানেই যে বউ অনেক সুখে থাকে মোটেই না! তেমন শ্বশুরকুল হলে একসাথে বা আলাদা থাকা তেমন ম্যাটার করেনা! 😉

তো এদিকে বউয়ের অবস্থা হয় আয়া টাইপের। ঘর সামলাও, বাচ্চা দেখ, জামাইয়ের রাতের সঙ্গী। এছাড়া নো ট্যা ফো! 🙃
ফলাফল হাজবেন্ড ওয়াইফ দুজনের চাহিদার সুবিশাল পার্থক্য! একজন মহিলা যার ১০/১৫-২০ বছর সময়, যৌবনের সবচেয়ে এক্সাইটিং সময় চলে গেছে শ্বশুরকুল এর ‘মন জয় ‘ করার যুদ্ধে ৪০ বছর বয়সে তার মানসিক অবস্থা ভালো হবেনা এটাই স্বাভাবিক না?
এই যুদ্ধে আবার ৯৯% মহিলাই হাল ছেড়ে দেন না বা নিজের মতো বাঁচার চেষ্টা করেন না। কারণ তারা ‘ভালো বউ ‘ তকমা পাওয়ার জন্য মরিয়া! 🙂

তারা ভাবতেই পারেন না ‘নিজের জীবন ‘ কেও গুরুত্ব দিতে হয়। এটা মোস্ট ইমপোর্ট্যান্ট থিং ইন লাইফ! এবার বলি হাজবেন্ড বা পতি পরমেশ্বর দের কথা। তারা মা কা লাডলা বেটা 😆 বউকে দুই টাকার চকলেট কিনে দিলেও মায়ের আড়ালে দেন, কারণ মা কে অসন্তুষ্ট করতে চান না! তা তারা প্রেম করেই বিয়ে করেন বা এরেঞ্জ ম্যারেজ। তারা বিরিয়ানির প্যাকেটের মতো সবার কাছে ভালো সাজতে যান। কারণ ‘বউ পাগলা, স্ত্রৈণ, বউয়ের গুলাম, ভেড়া ‘ এগুলো ট্যাগ গায়ে লাগাতে চান না! 🙂 নিজের অর্ধাঙ্গিনী, যার সাথে সবচেয়ে কাছের সম্পর্ক তাকে পাবলিকলি উপযুক্ত সন্মান দিতে জানেন না বা চান না পাছে লোকে কিছু বলে ভেবে।

মা কে দেখানোর বা সমাজের সামনে ‘বেডার মত বেডা ‘ ভাব নেয়ার জন্য হলেও স্ত্রীর উপযুক্ত সন্মান দেন না। বন্ধ দরজার আড়ালে গিয়ে স্ত্রীকে বলেন ‘তুমিই মানায়ে নেও। ‘দিনের পর দিন এইভাবে একই বিছানায় বাস করেও দুইজনের মানসিক, শারীরিক দুরত্ব আসে।
কারণ যে বয়সে স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে ঘুরে ফুচকা, চাইনিজ খাওয়ার কথা তখন মায়ের ‘ ভালো ছেলে ‘ হতে গিয়ে পুরুষেরা ছোট্ট ছোট্ট কোয়ালিটি টাইম এভয়েড করেন। তারা ভাবেন রাতের দুই মিনিটের সেক্স দিয়েই বউ গদগদ হয়ে ‘আসল পুরুষ ‘ পাইছি ভেবে বউ সারাদিন মনের সুখে আয়াগিরি করবে। সেটা একার সংসার হলেও প্রযোজ্য! 🙂

এইভাবে একসময় মহিলাদের মানসিক যে ইনার পিস থাকার কথা সেটা প্যারামিটারের মাইনাসে চলে যায়। নিজেদের প্রতি চরম উদাসীনতা দেখায়ে বাহ্যিকভাবে ‘ চার বাচ্চার মা ‘ ল্যুকে চলে যান। পুরুষদের বেলায় হয় কি তারা সারাদিন বাইরে থাকার সুযোগে অন্যান্য সব বয়সের মেয়েদের দেখেন আর ভাবেন ‘আমার বউ কেন এমন না? ‘স্ত্রীর চেয়েও নিজের নারী কলিগদের ‘যোগ্যতা ‘ বেশি ভাবতে থাকেন।স্ত্রীর সাথে তুলনা দিয়ে মানসিক চাপ দেন।

নিজের শারীরিক আনফিটনেস ও অবশ্যই দেখেন না! যেখানে নিজের জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় করে উপযুক্ত ক্যারিয়ার করলেন লাইফে ‘মেয়ে ‘ পাওয়ার জন্য, সেখানে নিজের ব্যাডাগিরি জাহির করার জন্য এই মেয়েটাকে নিজের জীবনে উপযুক্ত জায়গা দেন না।
ফলাফল এসে দাঁড়ায় ‘অসুখী যৌনজীবন ‘! স্ত্রীর দীর্ঘদিনের মানসিক অত্যাচারের ফলে ফ্রিজড হয়ে যাওয়া, সেক্স টাইমে ইনএক্টিভ থাকা, স্বতঃস্ফূর্ততা না আসা এগুলোর ফলে পতিদেব এর ভাষ্য হয় ‘আমার স্ত্রী পারেনা, আমার চাহিদা ফুলফিল হয়না! ‘ এদিক সেদিক নজর যাওয়া,কলিগ বা অন্য কারো সাথে জড়িয়ে যাওয়া স্বামী, স্ত্রী দুজনেরই ক্ষেত্রেই ঘটে।

সুস্থ জীবনে এদিক সেদিকে চলে যাওয়াকে কখনোই সাপোর্ট করিনা। নিজেদের নিয়ে সুখী হতে পারলে বেস্ট নাহলে সততার সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে দিন। এটা না পারলে জীবনের জটিলতা কখনোই কমবে না! 🙂 একটা হেলদি ‘সেক্স লাইফ ‘ বিবাহিত জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাম্পত্যজীবনের শুরু থেকে স্ত্রীকে তার সামাজিক পজিশন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য না করে ৪০ বছরে এসে তার কাছে গদগদ প্রেম কি আসমান থেকে বৃষ্টির পানির সাথে পড়বে? পড়বে না ডিয়ার ব্রাদার্স এন্ড সিস্টার্স! 🙂 এখন বলেন ‘সেক্স কি এতই গুরুত্বপূর্ণ? ‘ 🤔
জ্বি হ্যাঁ! একসাথে বসবাসকারী স্বামী, স্ত্রীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাহয় এদেশে কলিকাতা হারবালের এত চাহিদা কেন? 🥱🥱
বাচ্চাদের নিজের জীবন হবার পরে দুজনই দুজনের সাপোর্ট হয়। সেখানে একজন হতাশ মহিলা এবং পুরুষ কিভাবে সুখী হবেন?
দীর্ঘদিন যে স্ত্রীকে অপমান করেছেন বা আপনার বাপের বাড়ির সবাই অপমান করার সময় আপনি পাবলিকলি চুপ থেকেছেন, সেই স্ত্রীর কাছে আপনি কি সম্মানের আসন পাবেন? সম্ভব মনে করেন? 🙂

যেহেতু সময় থাকতে স্ত্রীকে তার উপযুক্ত সম্মান দিতে পারেন নাই ৩৫/৪০ এ এসে সব মিলিয়ে দুজনেই যে অসুখী চেহারা নিয়ে বেচেঁ থাকবেন এটা বুঝতে তো রকেট সাইন্স লাগার কথা না! স্ত্রীকে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কোয়ালিটি টাইম দিন। যখন ফুচকা, চাইনিজ খাবার বয়স তখন সেটাই করুন। ৪০ এ এসে ফুচকা হজম না হয়ে পেট খারাপ করবে, উল্টা বউ খেপে যাবে। তখন ডায়মন্ড গিফট করেও সুখি নাও হইতে পারেন। বউয়ের ভুঁড়ি দেখার সাথে সাথে নিজের ফিটনেসের দিকেও নজর দিন। বিয়ে করা বউকে আয়া ভাবা বন্ধ করুন। নিজের পরিবারকেও সেটা শেখান। মেয়েদের পরিবার মেয়েদের ‘বিবাহ ‘ তেই জীবনের সমাপ্তি শিক্ষা দেয়া বন্ধ করুন। মেয়ে বৈবাহিক জীবনে সাফার করলে তাকে সাপোর্ট দিন।

যেহেতু শ্বশুরবাড়ির লোক আপনার পরীক্ষা নিতেই থাকবে সেটায় ফেল করলেও হতাশ হবেন না। নিজেকে আলাদা করে সুখী রাখতে শিখুন। 💕 কাগজে সাইন করে বিয়েটাই কাজ শেষ না। একটা চমৎকার ফ্যামিলি লাইফ চাইলে দুজনের প্রতি দুজনের যত্ন, ভালোবাসা, সন্মান,হেলদি সেক্স লাইফ জরুরি।