চিঠি লেখার অভ্যাসই ভুলতে বসেছে মানুষ

নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক

বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ১০:১০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২০ 545 views
শেয়ার করুন
  • আনোয়ার আলদীন

 

কালের বিবর্তনে নিত্যই বদলাচ্ছে অনেক কিছু। পুরোনো রীতি, ব্যবস্থা, জীবনাচার অধিকার নিচ্ছে আধুনিকতা-হাইটেক। এমন এক সময় ছিল যখন যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। সে যেন এক আদ্দি রূপকথা। যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ‘টরেটক্কা’ টেলিগ্রাম আর চিঠি। তারও আগে পায়রার পায়ে চিঠি বেঁধে খবর পাঠানো হতো। কাগজে লিখে খামে পুরে চিঠি পাঠানোর পর অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরাত না। চিঠি লেখার জন্য ছিল পোস্টকার্ড ও বিভিন্ন রং-বেরঙের প্যাড। তারপর ফেলা হতো ডাক বাক্সে।

এখন শহর কিংবা মফস্সলে ডাক বাক্সগুলোর কদাচিৎ দেখা মিলে। মফস্সলে বড় কোন বটগাছে সেঁটে থাকা কিংবা শহরে রাস্তার পাশে সটান দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ সমান লাল রঙের ডাকবাক্সগুলো কার্যত এখন অচল। সেই পোস্টম্যানও নেই, নেই চিঠিও। কেউ এখন চিঠি লিখে না। চিঠি লেখার অভ্যাসই মানুষ ভুলতে বসেছে।

ডাকব্যবস্থা যখন হারিয়ে যেতে বসেছে সেই সময়ে আজ শুক্রবার পালিত হবে বিশ্ব ডাক দিবস। ১৯৮৪ সালে জার্মানির হামবুর্গে অনুষ্ঠিত ইউনিভার্সাল ডাক ইউনিয়নের ১৯তম অধিবেশনে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবসের নাম পরিবর্তন করে ‘বিশ্ব ডাক দিবস’ রাখা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ডাক দিবস। ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তির চরম উত্কর্ষের যুগে স্মার্টফোন আর হরেক রকম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সামনে সেই কাগজের চিঠি প্রায় হারিয়ে গেছে।

ডাক বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, দেড় দশকে ডাক বিভাগে চিঠি বিলির সংখ্যা কমেছে ২০ কোটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পত্র আদান-প্রদানের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩১০টি। এক বছর পার হতেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পত্র আদান-প্রদানের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪ কোটি ১৭ লাখ ৮১ হাজার ১১৫টিতে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ সংখ্যা ১৩ লাখে পৌঁছেছে। ফলে সব মিলিয়ে চিঠির সংখ্যা এভাবে ক্রমাগত কমতে শুরু করেছে। সরকারি চিঠি পাঠানোর ক্ষেত্রে নিয়ম থাকলেও বেসরকারি খাত থেকে চিঠি বিলিই হয় না।

একটা সময় ডাকপিয়নের কদর ছিল যথেষ্ট। বিশেষ করে প্রেমের চিঠি বিলি করার ঘটনা এখনো অনেকের স্মৃতিতে অমলিন। চিঠির অপেক্ষায় বিরহ কাতর হতেন অনেকে—চিঠি কেন আসে না আর দেরি সয় না ভুলেছো কি তুমি আমারে…। অনেক ডাকপিয়ন প্রণয়ঘটিত অনেক বিয়ের নীরব সাক্ষী। পিঠে চিঠির বস্তা নিয়ে ঝুনঝুন ঘণ্টা বাজিয়ে রাতের আঁধারে রানার ছুটত দূরের পথে। সেই চিত্র পাওয়া যায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কবিতায়—রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে/রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে, রানার চলেছে, রানার! রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার। দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার। সেই রানার সেই চিঠি, সেই ডাক বিভাগ সব এখন ডিজিটাল যুগের ধাক্কায় অতীতের পথে।