শরীয়তের আলোকে বান্দার হক

প্রকাশিত: ১:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০২০ 652 views
শেয়ার করুন

হক (অধিকার) সাধারণত দুই ধরণের। এক- হক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক। দুই- হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক। আল্লাহর হক বলতে আমরা ইমান, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত ইত্যাদি ইবাদতকে বুঝি। বান্দার হক বলতে বান্দার সঙ্গে সম্পৃক্ত হকগুলোকে বুঝি। এ রকম বহু হক রয়েছে। যেমন পারস্পরিক টাকা-পয়সার লেনদেন, টাকা-পয়সার আমানত, কথার আমানত, পারস্পরিক ইজ্জত-সম্মান রক্ষাসহ আরও অনেক কিছু।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বান্দার হক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। এ সম্পর্কে ইসলামী শরিয়তের বিধান হলো- যে পর্যন্ত এক বান্দা অন্য বান্দার হক (যার হক সে নষ্ট করেছে) যথাযথভাবে আদায় না করবে বা বান্দার থেকে ক্ষমা চেয়ে না নেবে সে পর্যন্ত আল্লাহও তাকে ক্ষমা করবেন না। একজন মানুষের কাছে অন্য মানুষের টাকা-পয়সা থেকে নিয়ে তার ইজ্জত-আব্রুসহ সবকিছুই আমনত। তা রক্ষা করা প্রত্যেক মানুষ বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। কারও নামে মিথ্যা রটানো, কিংবা কারও ইজ্জত-আব্রু নষ্ট করে তাকে কষ্ট দেওয়ার দ্বারা মূলত তার হক নষ্ট করা হয়। চলুন দেখি এ সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহ কী বলে?
আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাৎ করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ সূরা আহজাব, আয়াত ৫৭, ৫৮। তৎকালীন যুগে মুনাফিকরা বিভিন্নভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুমিন মুসলমানদের কষ্ট দিয়ে তাদের হক নষ্ট করত। আলোচ্য আয়াত দুটিতে আল্লাহ রসুল ও মুমিন নারী-পুরুষদের কষ্ট দিতে নিষেধ করেছেন। যারা এই হুকুমকে মানবে তারা সফলকাম হবে, আর যারা মানবে না তাদের জন্য ইহ ও পরকালে মহাশাস্তি রয়েছে।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মুসলমান তো সে যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকবে।’ অর্থাৎ কোনো মুসলমান তার হাতের ব্যবহার ও জবানের ভাষা দ্বারা কাউকে কষ্ট দিতে পারে না। শুধু মানুষ কেন? কোনো প্রাণীকেও বিনা অপরাধে কষ্ট দেওয়ার বিধান ইসলামে নেই।
আমরা হাদিসের নির্ভরযোগ্য কিতাব মুসলিমের ২৫৮১ ও তিরমিজির ২৪১৮ নম্বর হাদিসে দেখতে পাই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন অনেক নামাজ, রোজা ও জাকাতের নেকি নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু এর সঙ্গে সে এমন অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারও মাল (অবৈধভাবে) ভক্ষণ করেছে, কারও রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর অমুক অমুক (অত্যাচারিত) ব্যক্তিকে তার নেকিগুলো দেওয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকি অন্যদের দাবি পূরণ করার আগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার ওপর চাপানো হবে। অতঃপর (অন্যদের পাপের বোঝার কারণে) তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। কাউকে কষ্ট দেওয়া, কারও ইজ্জত-আব্রু ও হক নষ্ট করা কত বড় অপরাধ!
আসুন! আমরা সবাই এই রহমত ও বরকতময় মাসে এখন থেকে পূূর্ণ সতর্ক হই, পূূর্ণ খেয়াল রাখি যাতে আমার কথার দ্বারা অন্য কেউ কষ্ট না পায়, আর যদি কখনো কাউকে কষ্ট দিয়েই ফেলি তাহলে তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিই। । আল্লাহ আমাদের সবাইকে আলোচ্য আয়াত ও হাদিসসমূহের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন।

লেখক: দুবাই প্রবাসি।