পৃথিবীটা সুস্থ্য হোক, ফিরে আসুক কর্মচাঞ্চল্যতা

প্রকাশিত: ১২:০৮ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২০ 567 views
শেয়ার করুন
পৃথিবীটা সুস্থ্য হোক। আবার কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে আসুক পৃথিবীর বুকে। আবার যান-বাহন চলুক। নৌকা চলুক। বিমান চলুক।
 
একটি বাসের জানলা দিয়ে পাঁচ টাকার একটি খিলিপান বেচতে চাকার সাথে তাল মিলিয়ে আবার দৌঁড়াক হতদরিদ্র পানের খিলি ফেরিক আলাউদ্দিনরা। আবার পাগলা বাজারের বাসস্ট্যান্ডে হাঁক ডাকা হোক ছয়হারা-আক্তাপাড়া, সুনামগঞ্জ-সিলেট বলে। পৃথিবীটা সুস্থ্য হোক। উদ্বেগ দূর হোক মানুষের মন থেকে। আবার মানুষে মানুষে হাত মিলাক, গলাগলি করুক, এক থালায় বসে খাবার ভাগ করে খাক্। আবার হোক কনসার্ট, গ্রাম্য ওরস, ইসলামিক মাহফিল, রাজনৈতিক সভা। আবার হোক অযাচিত মিছিল, আন্দোলন, দাবি আদায়ের জন্য সস্তা মানববন্ধন। আবার হেসে উঠুক বিদ্যাপীঠগুলো উচ্ছ্বল তরুণ তরুণীদের খলখলানিতে। আবার দুই বেনিওয়ালা স্কুল ছাত্রীরা এক সম্ভাবনা নিয়ে হাটুক দল বেধে। নেভি ব্লু প্যান্ট আর শাদা শার্ট পড়ে আবার ভবিষ্যৎ কান্ডারি হয়ে গড়ে উঠা ছাত্ররা নতুন সম্ভাবনা নিয়ে দুনিয়াকে দেখাক বিজয় চিহ্ন।
 
শিক্ষকরা বগলে বই, হাতে চক-ডাস্টার নিয়ে ক্লাসের দিকে হাটুক। আবার এসেম্বলিতে বেজে উঠুক ‘আমার সোনার বাংলা…’ ফৎ ফৎ করে ফকফকা নীল আকাশে উড়ুক লাল সবুজের পতাকা। পৃথিবীটা সুস্থ্য হয়ে উঠুক। সুস্থ্য হোক মানুষের মন। ভালো হয়ে উঠুক বখে যাওয়া সমাজ। রাজনীতি হয়ে উঠুক মানুষের জন্য।
 
হাসপাতালগেুলো হোক স্রষ্টার পরে ভরসার জায়গা। নেতারা হয়ে উঠুক আসল নেতা। ভ্যাঁপসামি বাদ দিয়ে ঝরঝড়া মেজাজে হয়ে উঠুক আমলারা। কাঁদুক না পৃথিবী। কাঁদুক না বন। শহরগুলো মৃত্যুপুরী হওয়া থেকে রক্ষা পাক্। গ্রাম থাকুক গ্রামের মতো। মানুষ কথা শুনুক আরেক মানুষের। মঙ্গলখানা হোক বিশ্ব। তছনছ হওয়া থেকে রক্ষা পাক্ তাবৎ দুনিয়া।
 
পৃথিবীটা সুস্থ্য হয়ে উঠুক। এখন একটা সুযোগ হয়েছে পৃথিবী সুস্থ্য হয়ে উঠার। থমকে আছে সব কিছু অনেক দিন ধরে। মুখিয়ে আছে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ নতুন করে জীবন শুরু করবার আশায়। সুস্থ্য হয়ে উঠবার একটি মোক্ষম সময় এখন; সময় শুদ্রে যাওয়ার। আবার নতুন করে তৈরি হোক পৃথিবী। হোক্ মানুষের বাস যোগ্য এক নান্দনিক দুনিয়া। সবকিছুই শুরু হোক প্রথম থেকে। মৃত্যু তো চরম বাস্তব বিষয়। এটাকে খুব সাদরে গ্রহণ করা শিখতে হবে। আমার ভাগ্যে যা ঘটবার তা ঘটবেই। তাই মৃত্যুর ভয়ে না থেকে সুন্দর পৃথিবী তৈরিতে নিজেকে কাজে লাগাতে হবে। উপভোগ করতে হবে নিজের জীবনকে। থাকতে হবে আনন্দে।
 
উপরের অংশটুকু বাস্তব হোক এটাই আমার চাওয়া। আমি এই রোগা পৃথিবীর একজন সদস্য। যদিও সদস্য হওয়ার জন্য যেসব উপসরগ আমার থাকার কথা এর কোনো কিছুই আমার নেই তবু আমি এই অসুস্থ্য পৃথিবীর একজন দুর্ভাগা সদস্য। আমি এজগতকে দেখছি। বিশ্বাস করুন, আমি দায়ীত্ব নিয়ে বলছি- এ দুনিয়া একদম বিশ্রী একটা দুনিয়া। যেহেতু আমার কোনো উপসরগ নেই তবু এ সমাজ আমাকে একদম সহজ করে নিচ্ছে না। নেওয়ার কথাও নয়। সমাজের প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই, থাকার কথাও নয়। আমার কোনো কিছু না থাকার পরেও আমার যে দর্শন যারা এই রোগা দুনিয়ার মধ্যে গভীর ভাবে ঢুকেছেন, চলে গেছেন তারা কীভাবে দেখেছেন? প্রশ্ন হচ্ছে- পৃথিবীটার এতো অসুখ হলো কীভাবে? আমাদের দেশটা কী তাহলে এ রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে? আপাতত উত্তরে আমি বলবো- হ্যাঁ। বাংলাদেশ করোনা ভাইরাসের উর্বর ভূমিতে পরিণত হবে। আর পৃথিবীটার এতো অসুখ হলো কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তরেও আমি আমি বলবো আমরাই ছড়িয়েছি এ অসুখ।
 
ইতালি থেকে বাংলাদেশে আমরাই নিয়ে এসেছি আমাদের দেশে। আমার দেখা মতো এ দুনিয়া একদম ভালো না। কোনো উপসর্গ না থাকলেও কিছু মানুষ তোমাকে ‘পাপীষ্ট’ হিসেবেই দেখবে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এরকমটা হওয়ার কথা ছিলো না। তবু হচ্ছে, হোক্। এরকম হয়েও যদি পৃথিবীটা চলে যায় ভালো হওয়ার জায়গায়, তাও খুশি থাকবো। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবো। আমি আশা করি আমার এই চাওয়ার সাথে সকলেরই চাওয়া এক। এমনটা চাইতে হলে নিজেদের আগে প্রস্তুত করতে হবে। সচেতন হতে হবে। নিজেরা সচেতন হওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নাই। রোগা দুনিয়ায় প্রবেশ করা যে কী রকমের ঝামেলার বা শঙ্কার তা যদি একবার প্রবেশ করেন তাহলেই বুঝা সম্ভব। তাই বলি কী, অবস্থার আরো অবনতি হওয়ার আগেই আমরা যদি শুদ্রে যাই তাহলে বাঁচা সম্ভব। আর এই যাত্রায় বেঁচে গিয়ে একটি সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে আত্মনিয়োগ করা এখন সময়ের জোর দাবি। পৃথিবীটা সুস্থ্য হয়ে উঠুক।
 
আমি খুব ভালো আছি। সুস্থ্য আছি। দিব্যি খাচ্ছি-দাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি আর কবিতা লিখছি। খবরের কাগজের জন্য ছোট ছোট নিউজও লিখছি। গল্পও লিখছি। হোম আইসোলেশনের দিনলিপি লিখছি। ফেসবুক নামক অ্যাপটি দেখে দেখে বাকী সময় কাটাচ্ছি। হুমায়ূন আহমকে পড়ছি। আজিজুল হক, জুল ভার্ন, প্রেমেন্দ্র মিত্রকে আবার পড়ছি। সময় যাচ্ছে। অসংখ্য শুভাকাঙ্খীর ফোন কলের রিপ্লাই দিচ্ছি। তারা ফল পাঠাচ্ছেন- রিসিভ করছি। তাদরে নিয়ে আবার দু’কলম ফেসবুকের পাতায় লিখছি। এভাবে আমার রাতদিন যাচ্ছে। খুব খারাপ যাচ্ছে না, কারণ আমি ভালো আছি। সুস্থ্য আছি। কোনো উপসর্গ নাই।
 
আমার চেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে আমার স্ত্রীর। ডাক্তাররা ওষুধ দেওয়ার চেয়ে কিছু নিয়ম মানার কথা বলেছেন আর মসলা মিশিয়ে চা খাওয়া, ভাঁপ নেওয়া, গর্গল করা ইত্যাদি ক্ষণে ক্ষণে প্রস্তুত করে দিতে তার খুব রকমের কষ্ট হচ্ছে। খুব রকমের না হলেও আমার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে এটা আমি বুঝতে পারছি। দূরত্ব মেনে চলছি পরিবারের সকলের থেকে। হোম আইসোলেশেনের এটাও একটি কষ্টের বিষয়। তবু ভালো আছি। আম্মাকে, আব্বাকে, ভাইবোনকে দূর থেকে হলেও দেখতে পারছি, তাদের কথা শুনতে পাচ্ছি। এটাই বেশ। তবে এটা সত্য যে, করোনা দুনিয়াটা একদমই ভালো না।
 
আরো সচেতন থাকতে হবে। স্যাম্পুল জমা দেওয়ার আজ ৭ দিন। রিপোর্ট প্রকাশের ৪ দিন। কোনো সমস্যা নেই। আশা করি ভালো হয়ে উঠবো তারাতারি। আগামী সপ্তাহের শনিবার বা সোমবার আবার স্যাম্পুল জমা দেবো। আশা করছি সে রিপোর্টেই ভালো হয়ে উঠার খবর আসবে। সে আশাবাদী আমি। আমার জন্য দোয়া করবেন।
 
_______________________
লেখকঃ ইয়াকুব শাহরিয়ার
শিক্ষক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী