কামরান জনমানুষের ভালবাসা পাওয়া এক মানুষ

প্রকাশিত: ৩:১১ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০ 470 views
শেয়ার করুন

মানুষ বাঁচে কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নহে। এ কথাটি প্রমান করে পরপারে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কামরান ভাই। কামরান ভাই’র জন্ম ১৯৫৩ সালে আর মৃত্যু ২০২০ সালের ১৫ই জুন।

ছাত্রাবস্থায় অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে যখন এইচ.এস.সি পাশ করে তখন সিলেটের ছড়ারপাড়ের (মাছিমপুর) বাসিন্দারা তাকে সিলেট পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত করেন। ছড়ারপার বাসীকে সাথে নিয়ে সিলেট পৌরসভা বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার কাউন্সিলর চেয়ারম্যান, প্রশাসক, মেয়র ইত্যাদি বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

সিলেটের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তালিকায় তার নাম শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে কিন্তু অন্যায়ভাবে সিলেটের মানুষের সাথে ক্ষমতা দম্ভ দেখাতেন না। ক্ষমতা দেখাতেন ভালোবাসা দিয়ে কিভাবে সহজে আপন করে নেওয়া যায়।

সিলেট বাসী বুঝতে বাকী নেই কামরান ভাই যে কি পরিমান মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। অনেককে বলতে শুনেছি যখন যেখানে যে পরিবেশে উপস্থিত হতেন সে পরিবেশকে আপন করে নিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। সে গুনের কারণে কখনও তাকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের খাটি মানুষ; কখনও জাতীয়তাবাদী আওয়ামীলীগ; কখনও বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর উপদেষ্টা ইত্যাদি অনেকে অনেক ভাবেই মূল্যায়ন করতো।

  • তিনি দল মতের উর্ধে উঠে সবাইকে আপন করে নেওয়ার একজন যোগ্য কারিগর। তাকে সিলেটবাসী প্রত্যেকেই মনে করতো তাদের সকলের আত্মার আত্মীয় কামরান ভাই। তার গুনাবলী সৃতিচারন করতে গিয়ে মনে হয় যখন তিনি ধর্মীয় অনুষ্ঠান (ওয়াজ মাহফিল) এ উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতেন তখন মনে হতো ভালো একজন মৌলানা, যখন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নিতেন তখন মনে হতো প্রাজ্ঞ-রাজনীতিবিদ, যখন সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন তখন মনে হতো সমাজ বিশারদ, যখন গানের অনুষ্টানে উপস্থিত হতেন এবং রবিন্দ্রনাথ বা নজরুল গীতি বা আধুনিক গান পেশাদার শিল্পীদের ন্যায় গাইতেন তখন মনে হতো ভালো একজন গায়ক বা শিল্পী ইত্যাদি গুনাবলীর জন্য সবাই তাকে “সিলেট বাসীর অলরাউন্ডার” খ্যাতি দিয়েছেন।

কে বড় নেতা, কে ছোট নেতা, কে পাতি নেতা, কে তার প্রতিপক্ষ নেতা এসব নিয়ে ভাবতেন না। ভাবতেন সে তো আমি কামরান দায়িত্বশীল চেয়ারে বসার কারণেই তো আমার কাছে এসেছে।

সুতরায় যতটুকু সম্ভব বেচারার কাজটি করিয়ে দিতে পারলে এবং ব্যক্তিটি উপকৃত হলে হয়তো মারা যাওয়ার পরে এ ছোট্র উপকারটি আমার নাজাতের উসিলা হতে পারে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে কামরান ভাই’র ২/৩টি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম এবং মঞ্চের একই সারিতে বসেছিলাম। এই মাত্র পরিচয়। আমার একটি দরখাস্তে এম.পি বা মেয়র এ ধরনের জনপ্রতিনিধি একজনের সুপারিশ প্রয়োজন। আমার দৃষ্টিতে অল্প পরিচয়ের সূত্রে সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হলাম সাহস করে। উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে চেয়ার থেকে উঠে বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করে বললেন “আমান ভাই আপনি !”, বললেন কি সাহায্য করতে পারি ? কি আপ্যায়ন করতে পারি ? এসব দেখে হতভম্ব হলাম। মেয়র সাহেব এসব কি করছেন ? ভাবলাম এর নামই তো যোগ্য প্রতিনিধি। আস্তে আস্তে খাম বাহির করলাম এবং দরখাস্তটি না পড়ে দস্তখত এবং সিল মেরে বললেন, সুপারিশ আপনি যেভাবে ভাল হয় সেভাবে লিখবেন। আমার চাপাচাপিতে তিনি নিজ হাতে দরখাস্তে সুপারিশ লিখলেন। আমার কাজটি হয়ে গেল।

দরখাস্তে স্বাক্ষর করলেন আরেক সুজন ব্যক্তি, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত (এম.পি), তাহারা উভয়ই ঋণী করে ফেললেন। ইতিমধ্যে কামরান ভাই আজীবনের জন্য ঋণী করে পরপারে চলে গেলেন। সবাইকে তো চলে যেতে হবে। এটাই তো সৃষ্টিকর্তার বিধান। কিন্তু এসব গুনাবলী সম্পূর্ণ মানুষের কীর্তি যুগে যুগে লালন এবং পালন করলে সৃষ্টি যেমনি উপকৃত হবে। এসব গুনের অধিকারীরা নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাত বাসী করবেন বলে আমার বিশ্বাস এবং দোয়া করি আল্লাহ যেন গনমানুষের নেতা কামরান ভাইকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন । “আমিন” ।

গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর বলেছিলেন “বিজয়ে গৌরভ, পরাজয়ে কোন গøানি নেই, প্রতিদন্ধিতা থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিহিংসা থাকা উচিত নহে”। সিলেট বাসী আমাকে কতকিছু দিল। সব সময় যে আমি মেয়র থাকতে হবে সেটা কিন্তু ঠিক নহে। জনগণ সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছে। পরাজয়টাকে হাসিমুখে গ্রহণ করলেন এবং পূর্বের ন্যায় জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন আমৃত্যু। জনগণের পক্ষে, জনগণের অধিকার বাস্তবায়নে সোচ্ছার থাকার চেষ্টা করেছেন। গণমানুষের কামরান ভাই জনতার কামরান ভাই, কর্মিবান্ধব কামরান ভাই’র কাছ থেকে বর্তমান প্রজন্মের হাইব্রিড নেতারা কি শিক্ষা নিতে পারেন না ? না পারবেন না, কারন তারা তো হাইব্রিড । তাদের তো কোন নেতাকর্মীর প্রয়োজন নেই, কিছু রিক্রটেড দালাল হলেই তো চলে।

একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, সাবেক মেয়র কামরান ভাই সাহেবের মৃত্যুতে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অনেকটা বাকরুদ্ধ, শোক জানানোর ভাষা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। কেননা তারা উভয়ই তো তৃণমূলের রাজনীতি থেকে রাজপথের সকল অন্যায়ের বিপক্ষে আন্দোলনের সহ যাত্রী। যদিও তারা রাজনীতির আদর্শে দুই মেরুর রাজনীতিবিদ।

আধ্যাতিক রাজধানী সিলেট যে সম্প্রীতির রাজনীতিতে বিশ্বাসী তাদের অতীত পথচলা স্মরন করিয়ে দেয় বর্তমান প্রজন্ম যেন সে সম্প্রীতির ধারা অব্যাহত রাখে। কেননা কামরান ভাই প্রয়াত হয়ে গেছেন। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। “আমিন”

_________________________________________

লেখক: এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন, সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও কলামিষ্ট।