৬ দফা এবং একজন মনু মিয়া

প্রকাশিত: ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০২০ 513 views
শেয়ার করুন

সিলেটের বিয়ানীবাজারের মনু মিয়ার আত্মদানে স্মৃতি বিজড়িত ৭ জুন ছিল স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ এবং ৬ দফা তথা বাঙালির স্বাধিকারের পক্ষে প্রথম আত্মবিসর্জন। ৬ দফা থেকেই আসে ছাত্র সমাজের ১১ দফা, সত্তরের নির্বাচনী বিজয়। এরই ধারাবাহিকতায় মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম শহীদ সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার সন্তান ফখরুদ দৌলা খান ওরফে মনু মিয়া । ১৯৬৬ সালের এই দিনে স্বাধিকার আন্দোলনে ৬ দফার দাবীতে ঢাকাসহ সারা দেশে যখন হরতাল অবরোধ চলছিল তখন তখন সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক ছাত্র জনতা আন্দোলনে একাত্বতা করে রাস্তায় নেমে আসে। তৎকালীন শ্বৈর শাসক আইয়ুব খানের সরকার ছাত্র ,শ্রমিক ও জনতার এই গণঅভ্যুত্থান ঠেকাতে নির্বিচারে গুলি করে রাজপথে আন্দোলন রত সাধারণ জনগনের উপর, ঢাকাসহ সারা দেশ রক্তে রঞ্জিত হয়।
৭ জুন সকাল ১১টা। তেজগাঁও শিল্প এলাকার শ্রমিক কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে রাজপথে বেরিয়ে পড়ে। অবস্থান নেয় তেজগাঁও রেলস্টেশনের আউটার সিগনালের কাছে। অবরোধ করে রেল লাইন। পুলিশ প্রহরায়ও রেল চালানো ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ প্রতিবাদকারী শ্রমিক-জনতার উপর গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন ৩০ বছর বয়সী শ্রমিক মনু মিয়া।
সে দিন সারা দেশে অকালে ঝড়ে পড়ে ১১টি তাজা প্রাণ। তাদের মধ্যে অন্যতম শহীদ মনু মিয়া। জানা যায় মনু মিয়া ঢাকা তেজগাঁও শিল্প এলাকার সেভেন আপ কোম্পানীতে কাজ করতেন। তার লাশ নিয়ে দাফনে যাওয়ার সময়ও সরকারের পেটুয়া বাহিনী, পুলিশ, এপিআর এবং পাকসেনারা গুলি ছুড়ে।

সেদিনের শ্রমিকদের ডাকা সেই হরতাল চলাকালে মনু মিয়া ছাড়াও নাম না জানা আরো অনেকে শহীদ হন। কিন্তু মনু মিয়ার সে আত্মত্যাগ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মনু মিয়ার লাশ নিয়ে ছাত্র,শ্রমিক ও জনতা বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে,বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা দেশ।

শহীদ মনু মিয়াদের পুরোনো নিবাস বিয়ানী বাজারের বড়দেশ গ্রামে হলে ও বর্তমানে বিয়ানীবাজার উপজেলার পৌরসভাধীন নয়াগ্রামের অধিবাসী মৃত মনুহর আলী খানের ৬ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। অর্থাভাবের কারনে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি।

  • তিনি ২৩ বছর বয়সে জীবিকার উদ্দেশে রাজধানি ঢাকা শহরে পাড়ি দেন। সেখানে তিনি তেজগাঁও শিল্প এলাকার সেভেন আপ কোম্পানীর ড্রাইভার হিসেবে চাকরীতে যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকার রাজপথে শহীদ হন।

ক্ষণজন্মা এই বীর পুরুষের আত্মত্যাগ স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকার কথা থাকলেও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৯ বছরেও তার স্মরণে সরকার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে নি শুধু স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গঁবন্ধু সরকার মনু মিয়ার স্মরণে ঢাকার নাখাল পাড়ায় শহীদ মনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন, পরবর্তীতে আর কোন সরকার জাতীর এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের স্মৃতি রক্ষায় কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
এছাড়াও স্থানীয়ভাবে শহীদ মনু মিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে বিয়ানীবাজারের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের অর্থায়নে স্থাপনকৃত স্মৃতিসৌধ ২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
এ ব্যাপারে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা উচিত বলে আমরা মনে করি এবং এটি আমাদের গণতান্ত্র্রীক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের নিকট দাবী জানানো নয় আমি মনে করি এটি শহীদের আত্মার অধিকার আর অধিকার তো অবশ্যই আদায় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি । শহীদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানানো আমাদের নৈতিকতা ও কর্তব্য এটি সর্ব মহলে গ্রহণযোগ্য কথা এ ব্যাপারে কেহ দ্বি মত প্রকাশের কোন যুক্তি যুক্ত কারণ নেই তাহলে কেন হচ্ছে না ? কেন উদ্ধ্যুগী ভূমিকা নেয়া হচ্ছে না ? এসব প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে দেশবাসী সহ বিশেষ করে তাঁর জন্মস্থান বিয়ানী বাজারের মানুষের মনে তাই
সচেতন মহলের দাবী, বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের স্বাধিকার আন্দোলন ও ৬ দফা দাবী জানার জন্য পাঠ্য বইয়ে শহীদ মনু মিয়ার বীরত্ব তুলে ধরা হোক।

শহীদ মনু মিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য তাঁর স্মৃতি বিজড়িত তেজগাঁও শিল্প এলাকায় যে স্থানে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম শহীদ মনু মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেখানে তার স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দেশের এই বীর শহীদকে যথাযত মূল্যায়ন করা হোক আজকের দিনে আমাদের এইটুকু প্রত্যাশা ।