প্রবাসিকে মারধর করা সেই কর্মচারী বরখাস্ত

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ১১:৩০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২৫ 58 views
শেয়ার করুন

 

বিমানবন্দরে প্রবাসিকে শারিরিক নির্যাতনকারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আইনে প্রক্রিয়ায় তাকে শাস্তি দেয়া হবে। আগামিতেও এমন যেন না হয় তার জন্য সরকার আন্তরিক। শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ: এনআরবি অ্যান্ড ইউ এন পিসকিপারস লিডিং দ্য ওয়ে’ শীর্ষক ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজের উদ্বোধন ও ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বায়ান্ন পরিচালক লন্ডন প্রবাসি আবুল হোসেনের বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় আবুল হোসেন লন্ডন প্রবাসিদের নো ভিসা ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানান। এছাড়া পরিবার নিয়ে আরা লন্ডনে বাস করেন তাদের পুরো পরিবার এক সাথে দেশে যেতে প্যাকেজ করে বিমানভাড়া কমাবার দাবী জানান।

এনআরবি চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, লন্ডনের (এলবিটিএইচ) স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ, ব্যাংকার এসোসিয়েশন সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, সাবেক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী ফোর্স কমান্ডার মে. জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর (অব.), রেমিট্যান্স বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যাংকার মো. আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে কয়েকটি বড় রাজনৈতিক দল আছে। তারা হলো- পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল, কারণ পৃথিবীর কোনও রাজনৈতিক দলের এতো শাখা, কর্মী নাই। আমাদের- বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াত, ক্ষেত্র বিশেষে জাতীয় পার্টির সারা বিশ্বে শাখা আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে দুই দল, তিন দল প্রচণ্ড শত্রুভাবাপন্ন, একইরকম শত্রুভাবাপন্ন আমাদের প্রবাসীরা, যারা এসব দলের শাখাগুলোতে আছেন। বিদেশে এদের কর্মকাণ্ড দেশের ইমেজ নষ্ট করে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, এরকম কী পৃথিবীর কোনও দেশের ক্ষেত্রে আপনারা দেখেছেন? কেউ একজন দেশ থেকে যায় আর তাকে ডিম ছোড়ার জন্য বা তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়ার জন্য বিরাট সংখ্যক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে? ইস্যুভিত্তিক না, স্রেফ ব্যক্তি এবং দলভিত্তিক যে প্রতিক্রিয়া হয়, এটা বিরাট ক্ষতি করছে আমাদের ইমেজের ক্ষেত্রে, আমাদের ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে।’

ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কোথাও গেলে সেখানে দুয়োধ্বনি দেয়ার জন্য কেউ দাঁড়িয়ে থাকে না। আমাদের ক্ষেত্রে হয়। এটা চিরদিন হয়ে আসছে। এটা থেকে আমাদের বের হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ভারতীয়রা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, আমরা পাই না কেন? কারণ আমরা স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হই খুব কম। আমি যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলাম তখন দেখেছি, ঢাকা থেকে যখন অতিথি গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের লোকজন একসঙ্গে মিলে সংবর্ধনা দিয়েছে। এটা কিন্তু এক্সেপশনাল, পশ্চিমে কিন্তু আমি তা দেখিনি। আমি দেখেছি সব সময় দুই ভাগ হয়ে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যে এভাবে একসঙ্গে কিছু করার চেষ্টা, এটা আমাদের করতে হবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, সেদিকে তাকান। কত ভারতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে চলে আসছেন। আমাদের ক্ষেত্রে কতটুকু হয়, বরং পাকিস্তানে কিছুটা হচ্ছে। বাংলাদেশিরা টাওয়ার হেমলেটসে কিছু হয়েছে, যুক্তরাজ্যে কয়েকজন এমপি আছেন, এটা হলো বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের। ভারত তাদের ডায়াসপোরা তৈরি করেছে। সফটওয়্যার কোম্পানির প্রধান ভারতীয়, এগুলো হচ্ছে আসল রাস্তা ব্র্যান্ডিংয়ের। ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য আমাদের অবশ্যই ভালো কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এনআরবিদের ভূমিকা বিশ্বে ইতিবাচক, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচকও আছে। সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। একজন ট্যাক্সিচালকের গাড়িতে ভুল করে কেউ যদি বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেলে রেখে যায় এবং তিনি সেটা তার মালিককে খুঁজে বের করে ফেরত দেন, এই ঘটনায় কিন্তু ইমেজ অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু যখন দেখা যায়, ভুমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে যারা মারা যায় কিংবা উদ্ধার হয় তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ বাংলাদেশের, তখন ইমেজ নষ্ট হয়।

গত চার মাসে বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়া ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এমন তথ্য প্রচার করছে, যাতে মনে হচ্ছে সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে কচুকাটা করা হচ্ছে। ভারতীয়দের অপপ্রচার রুখতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, বিদেশে দূতাবাসগুলোতে প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়ার অনেক অভিযোগ সত্য। তবে সব না। এর বাইরেও বিমান বন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি করলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে সরকার।

লন্ডনের (এলবিটিএইচ) স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের অনেক প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। আমরা সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের বাংলাদেশিদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গরিব দুখি, মেহনতি মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় এদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালগুলোতে লেখা-পড়া করে, বিদেশে ডিগ্রি নিয়ে প্রবাসীরা বাংলাদেশের অবস্থানকে বিদেশের মাটিতে জানান দিচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশের প্রতি আমাদের রক্ত ঋণ রয়েছে। এই রক্ত ঋণ পরিশোধে অভিপ্রায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রত্যেটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এদেশের সন্তানেরা যখন গর্জে উঠেছে, আপনাদের সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসীরাও বিশ্বের শীর্ষ স্থানে গর্জে উঠেছে।
বাংলাদেশের যখন দু:খের খবর আপনাদের বুকে আঘাত করে, তখন আমাদেরও বুকে আঘাত করে। বাংলাদেশের পতাকা যখন মলিন হয়, তখন আমাদের অস্থিমজ্জা ধুমরে মুছরে উঠে। বাংলাদেশের কোনো সুখের খবরে প্রবাসে আনন্দে আমাদের বুক ভরে উঠে।

বর্তমানে আর্টিফিসিয়াল এন্টিলিজেন্ট (এআই), মেসিন লার্নিং, রোবটিক্স সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সেদিন বেশি দুরে নয়, যদি দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত থাকে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, এমআইটি, হার্ভাড, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, গুগল, টেসলা, অ্যাপল, ফেসসবুক ও মাইক্রসফটের মতো প্রতিষ্ঠান এই দেশের ঢাকা বা সিলেটে হবে ইনশাআল্লাহ। এজন্য আমাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসডরের ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, যেসব বড় বড় গ্রুপ ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে দেশে-বিদেশে বিনিয়োগ করেছে, সেই টাকা উদ্ধারেও আমরা বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। তাদের থেকে আমরা ভালো পরিমাণেই সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া যারা বিদেশে ১০০ কোটি, ২০০ কোটি টাকা নিয়ে গেছেন, তাদের টাকা উদ্ধারে বিদেশি লিগাল ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করা হবে, তারা উদ্ধার করে দিতে পারলে তাদেরকে ১০ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হবে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আর বলেন, ইদানিংকালে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। অ্যাগ্রিগেশন অব রেমিট্যান্স। আমরা দেখছি, কিছু সময় দুবাই থেকে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। সৌদি থেকে রেমিট্যান্স কম আসছে।

প্রবাসে যে পরিমাণ বাংলাদেশি রয়েছে, আমরা সেই পরিমাণে রেমিটেন্স এখনও পাচ্ছি না। আমাদের প্রবাসীরা গড়ে ৩০০ ডলার মাসে আয় করেন। যদিও ইন্দোনেশিয়ার প্রবাসীরা প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ ডলার আয় করেন। আমাদের প্রবাসীদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে শীর্ষ রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী হিসেবে ১০টি ব্যাংককে ক্রেস্ট দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক।