সিলেটের বিয়ানীবাজারে গৃহবধূর গলায় ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধার ।। হত্যা নাকি আত্মহত্যা…?
শাহীন আলম হৃদয় শাহীন আলম হৃদয়
বিশেষ সংবাদদাতা
সিলেটের বিয়ানীবাজারে এক নিঃসন্তান গৃহবধূর গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। নিহত ফাহমিদা আক্তার (২৩) উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খসির কইরবন্দ গ্রামের আবিদুর রহমানের স্ত্রী। সে উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামের জমির উদ্দিনের কন্যা। ১২ জুলাই বুধবার ভোরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত্রের জন্য সিলেটস্থ মর্গে প্রেরণ করেছে। নিহতের ভাইয়ের অভিযোগ বোন জামাই এবং তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের জন্য ফাহমিদাকে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। স্বামীর পরিবার বলছে সে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। এতেকরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ঘটনাটি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা?
জানা যায়, তিন বছর পূর্বে পরিবারের অমতে প্রেমিক আবিদুর রহমানকে বিয়ে করে ঘর বাঁধেন ফাহমিদা। পরে পিতার পরিবার মান অভিমান ভুলে মেনে নেয় তার স্বামীকে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সংসারে শুরু হয় পারিবারিক নানা অশান্তি। বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের দাবী ও সন্তান জন্ম দিতে না পারা নিয়ে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাধ হতো ফাহমিদার। এক পর্যায় বোনের সুখের কথা ভেবে বোন জামাই আবিদুর রহমানকে ভিসা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে নেয় ফাহমিদার প্রবাসী ভাই। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর প্রবাস থেকে বাড়ি ফিরে আসে আবিদুর। অতঃপর ফের শুরু হয় নানা প্রকার যৌতুকে দাবীতে নির্যাতন। নিহত ফাহমিদার প্রবাস ফেরত মেঝ ভাই জানান, ঘটনার রাত ১২.৩০ ঘটিকায় তার বোন ফাহমিদা ফোন করে জানায় তার স্বামী তাকে ফের মারধর করছে, হয়তো তাকে মেরেই ফেলবে। তারা যেন তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ভোর বেলা ফাহমিদার শাশুড়ি ফাহমিদার মাকে ফোন করে জানায় ফাহমিদা অসুস্থ হওয়ায় তাকে সিলেট হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। এ খবর শুনে তারা তাৎক্ষণিক ভাবে ফাহমিদার বাড়িতে এসে দেখেন দরজা খোলা শয়ন কক্ষে গলায় ফাঁস লাগানো পা মাটিতে ছুঁই ছুঁই অবস্থায় ফাহমিদরা লাশ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বোন জামাই স¤প্রতি ৫ লক্ষ টাকা দাবী করেছিল। আমরা কিছুদিনের মধ্যে তা দেওয়ার কথা দিয়েছি। কিন্তু নিষ্টুর বোন জামাই ও তার পারিবারের লোকজন আমার বোনটিকে মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন করে হত্যা করে লাশ ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। ঘটনাটির সুষ্ট তদন্ত্র সাপেক্ষে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান প্রশাসনের প্রতি।
এদিকে, নিহতের স্বামী আবিদুর রহমান পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে তাদের প্রায়ই ঝগড়া হওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, ঘটনার রাত ৩টার দিকে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে যান। এসময় ফাহমিদা শয়ন কক্ষের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয়। ঘন্টা খানেক পর তিনি ফিরে এসে ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে দেখেন গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ফাহমিদার ঝুলন্ত লাশ। এসময় শশুর বাড়ি ও থানায় খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক সুরতহাল শেষে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে ময়না তদন্ত্রের জন্য মরদেহ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে। নিহতের স্বামী আবিদুর রহমানকে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।


