কক্সবাজারের আবু তাহেরের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ

শাহীন মাহমুদ শাহীন মাহমুদ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৪:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০২০ 626 views
শেয়ার করুন
প্রবাসে থাকার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে মরিচ্যা হলদিয়া পালংয়ের পাগলির বিল এলাকার শফি ডিলারের পুত্র আবু তাহেরের(৪০) বিরুদ্ধে।
 
অনেকটাই আন্তর্জাতিক মাফিয়া কিংদের মতো নিজ এলাকায় শক্তিশালী একটি চক্র গঠন করে বিদেশে সে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশে অবস্থান করার কারণে আবু তাহেরের মাদক পাচারের বিষয়টি স্থানীয় লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়।
 
প্রশাসনও ছিলো বেখবর। কিন্তু তার সাথে প্রবাসে অবস্থানকারী প্রতিবেশীদের নজরে তার এসব বিষয় ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে থাকে। স্বল্প বেতনে চাকরি করেও বেপরোয়া বিলাসী জীবন যাপন করতে থাকলে বিষয়টি তার প্রতিবেশীদের নজরে চলে আসে। এমনকি তার মুখের স্বীকারোক্তিতেই জানা যায় বেহিসাবি সম্পদ অর্জনের তালিকা কত দীর্ঘ।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- আবু তাহেরের পুরো পরিবার ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত। বিভিন্ন সময় তার পরিবারের লোকজন ইয়াবা পাচার করার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়। এবং মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পলাতকও রয়েছে অনেকেই। তাহেরের ভাইয়ের পুত্র কবির আহমেদ একসময় ভাড়ায় সিএনজি চালাতো। সে এখন দুটি ট্রাক এবং একটি সিএনজির মালিক বনেছে। এই কবির আহমেদই কিছুদিন পূর্বে আবু তাহেরের ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয় বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সে জেল খেটে জামিনে রয়েছে। তার আরেক ভাই মোস্তাকের ছেলে কামরুল ২০হাজার ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামে ধরা পড়েছিলো। বর্তমানে সে চট্টগ্রাম কারাগারে আছে। ওই একই ঘটনায় কামরুলের মাও অভিযুক্ত ছিলো। তবে বর্তমানে কামরুলের মা পলাতক রয়েছে বলে জানা যায়।
 
তাহেরের আরেক ভাই মাহোছনের পুত্র নুর কবির ওই একই ঘটনায় আসামী হিসেবে নথিভূক্ত ছিলো। সেও ২হাজার ইয়াবা নিয়ে ঢাকা থেকে আটক হয়। বর্তমানে সে ঢাকায় কারাবাস করছে। তাহেরের অপর আরেক ভাই কালু। তার পুত্র হাকিমও জড়িত তাহেরের মাদক পাচারকারী চক্রের সাথে। হাকিম বর্তমানে একটি মাদক পাচার মামলায় অভিযুক্ত হলে গা ঢাকা দিয়ে পলাতক রয়েছে।
 
এভাবেই পুরো পরিবারকে ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে আবু তাহের। অধিক অর্থ উপার্জনের লোভনীয় প্রলোভন সৃষ্টি করে নিজের পরিবারের লোকজনকে ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত করে নিরবে ব্যবসা করে যাচ্ছে সে। অন্যদিকে প্রবাসে থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারীর বাহিরে রয়ে গেছে এমন দুর্ধর্ষ মাদক কারবারী।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, তাহের আমাদের পাশের একটি হোটেলে বর্তমানে দুই হাজার রিয়ালে চাকরি করে। সে ১৫ বছর আগে এখানে এসেছিলো। তখন চাকরি করেছে মাত্র এক হাজার রিয়েলে। এরপরে পাঁচ বছর পর বেতন বেড়ে দেড় হাজার রিয়াল বেতনে কাজ করেছে আরও পাঁচ বছর। কিন্তু এতো অল্প উপার্জন নিয়ে সে বছরে ২/৩ বার দেশে যায়।
 
সৌদিতে এখানে যাদের নিজের ব্যবসা প্রতিষ্টান রয়েছে তারা পর্যন্ত পাঁচ বছরে একবার দেশে যেতে পারেন না। অনেক কষ্ট হয়ে যায়। একামা (ভিসা) নবায়ন করতেও হিমশিম খেতে হয়। সৌদিতে চাকরির টাকা সীমিত, এত টাকা বর্তমানে সৌদিতে নেই। আবু তাহের ইয়াবা ব্যবসা করে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ইয়াবা ব্যবসা করেই হয়েছে। প্রতিমাসে তার নামে কার্গোতে বিভিন্ন পার্সেলও আসে। এই পার্সেলগুলো নিয়ে তার সন্দেহজনক তৎপরতা চোখে পড়েছে।
 
প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা জানতে তাহেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে গা ঢাকা দেয়। শুধু তাই নয়- মাদকের টাকায় তার অর্জিত বিপুল সম্পদকে বৈধতায় রূপ দিতে ব্যাপকভাবে তোড়জোড় শুরু করেছে।