করোনা ভাইরাসের বলির শিকার প্রাইভেট স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা

তোহুর আহমদ তোহুর আহমদ

লেখক ও শিক্ষক

প্রকাশিত: ১:২৫ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০২০ 1,056 views
শেয়ার করুন
করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসে বাংলাদেশ। এ যেন ধ্বংস স্তুপে দাঁড়িয়ে সর্বহারা স্বজনের হাউ-মাউ করে ঢুকরে ঢুকরে কেঁদে চোখের পানি দিয়ে বাংলার জমিন বিধৌত করার মর্মান্তিক এক দৃশ্য। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলার প্রতিটি মানুষ একটা দিন পার করে নতুন দিনের সূর্য দেখে ভেবে নেয় আজকের দিন জানি করোনায় কোন কালিমা লেপন করে মোর জীবন মানচিত্রে। প্রতিদিন প্রাণের কাঁচা শুন্য করে কেঁড়ে নিচ্ছে অতি আদরের ছেলে-মেয়ে,পরম শান্তির পরশমণি বাবা-মা কিংবা যাদের আদরে সিক্ত হয়ে বেড়ে উঠি এমন মহাস্থান ভাই-বোনকে। কি হতে কি হয়ে গেলো বাংলাদেশের। চোখের পানি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে বর্ণনা করতে গেলে।
 
কথা ছিল ‘২১ সাল পর্যন্ত দেশের সবাই মুজিব শতবর্ষের উদযাপনে আনন্দে হবো উদ্বেলিত। ভারতরাজ অতিথির আসন অলংকৃত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দৃঢ়তার প্রমাণ দেখাবেন। কিন্তু প্রকৃতিই যেন তার অদৃশ্য ক্ষমতা দিয়ে মুহুর্তেই বলির ফাটা বানিয়ে নিল বাংলাদেশকে। দেশের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজেকে সুরক্ষার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
 
শিক্ষা, সংস্কৃতি, উপাসনা, ভ্রমণেচ্ছা, জমিয়ে আড্ডা কিংবা মসজিদে নামাজ এসব যেন মরণাস্ত্র হয়ে গেছে। শুধু একটি মাত্র ভাইরাসের কারণে, যাকে খালি চোখে দেখাই যায় না।
 
করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে নেমে এসেছে তীব্র শোকের অন্ধকার অমাবস্যা। শিক্ষার্থী হারাচ্ছে তাদের জীবন থেকে একটি বছর। শিক্ষক হারাচ্ছে মহামূল্যবান জীবন। সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাচ্ছেন তাদের বেতনের পাশাপাশি সরকারি প্রনোদনা। অপরদিকে প্রাইভেট স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা না পাচ্ছেন স্বল্প টাকার ভেতন, না পাচ্ছেন টিউশনি করে উপার্জিত ক্ষুধা মেটানো খোরাক। তাদেরকে সরকার প্রনোদনাও দিচ্ছেননা। এই প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বর্তমান অবস্থা এমন হয়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পূর্বে পেটের ক্ষুধার সংক্রমণেই মারা যাবে তারা।
 
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, অনুগ্রহপূর্বক প্রাইভেট স্কুল-কলেজের শিক্ষক- শিক্ষিকাদের অন্তত এমন একটা ব্যবস্থা করেন যাতে তারা ক্ষুধার সংক্রমণে তাদের ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে কোথাও হাত পাততে না হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি অবগত আছেন যে, দেশের সরকারি বিদ্যালয়গুলোর চেয়ে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন পড়াশুনায় অনেক এগিয়ে আছে। এসব প্রাইভেট স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা A+ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় অতিক্রম করে বড় বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জজ, ব্যারিস্টার কিংবা এম.পি-মন্ত্রী হন। এগুলো হলো এই শিক্ষক-শিক্ষিকার ঘাম জড়িয়ে পাওয়া অনুসৃত ফল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে হেলায় ফেলে রাখবেন না। এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আত্না নারাজ হলে করোনার তীব্রতা হয়তবা বাড়তেও পারে। প্রাইভেট বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনেক কষ্টে আছেন। দয়া করে তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করুন। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করবেন।
 
বাংলাদেশের সংস্কৃতির উপরও করোনা ভাইরাস বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বাঙ্গালী সংস্কৃতির সার্বজনীন উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, বিভিন্ন ধরনের পূজা পার্বন। বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পরে কখনো স্বাধীনতা দিবস ঘরে বসে হয়নি উদযাপন। করোনা ভাইরাসের কারণে বাঙালিরা ছিল লকডাউনের কারণে গৃহবন্দী। এতে বাঙালি জাতীয় জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। পহেলা বৈশাখের আনন্দ উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎস তাও এবছর হয়নি উদযাপন। এটা হলো বাঙালি সংস্কৃতিতে করোনা ভাইরাসের চরম আঘাত।
 
বাংলাদেশ একটি বৈচিত্র্যময় দেশ। এদেশের প্রকৃতিতে রয়েছে যেমনি বৈচিত্র্য তেমনি জাতিতেও। বাংলাদেশ হলো মুসলমান প্রধান দেশ। এদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, চাকমা, মারমা, গারো, মরং, তংচঙ্গা বসবাস করে। আলাদা আলাদা জাতি হলেও ধর্ম পালনের জন্য রয়েছে সবার নির্ধারিত উপাসনালয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এদেশের কোটি জনতার হৃদয়ের স্পন্দন উপাসনালয়ে গিয়ে উপাসনা থেকে বঞ্চিত হয়। এ আঘাত বাঙালিদের অনেক কষ্টের।