দক্ষিণ চট্টগ্রামে পেয়ারার বাম্পার ফলন
হিমাগারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার পেয়ারা
কাউছার আলম কাউছার আলম
পটিয়া, দক্ষিণ চট্টগ্রাম
পটিয়ার পেয়ারা, পতেঙ্গার তরমুজ, লাইল্যার হাটের বাকরখানি। এ নিয়ে চট্টগ্রামের শিল্পীদের অনেক জনপ্রিয় গান রয়েছে। এ গান গুলো সকলের মন ছুঁয়ে গেলেও বর্তমানে বিপরীত। কেননা তখনকার সময়ের সাথে বর্তমানের বাস্তবতা বিরাট ফারাক। পটিয়ার পাহাড় জুড়ে শুধু পেয়ারা আর পেয়ারা। এ পেয়ারার কদর দেশ ও বিদেশে রয়েছে।
প্রতিদিন শত শত টন পেয়ারা উৎপাদন করার পরে ও আরো তিন ভাগের দুই ভাগ পেয়ারা বাগানেই নষ্ট হচ্ছে শুধুমাত্র হিমাগারের অভাবে।এ নিয়ে স্হানীয় পেযারা চাষিদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে পটিয়ায় এবার পেয়ারার বাম্পার ফলন হলে ও তা সংরক্ষণের জন্য কোন ধরনের হিমাগার না থাকায় বাগানেই বেশিরভাগ পেয়ারা নষ্ট হচ্ছে। যদি উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের পেয়ারা গুলো সংরক্ষণ বা এ পেয়ারা গুলোকে প্রতিপাদ্য করে জুস ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা যায় তাহলে এ অন্ঞলের পেয়ারার কদর যেমন বাড়বে তেমনি পেয়ারা চাষিদের ভাগ্য ও পরিবর্তন হয়ে যাবে। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে বিদেশে পেয়ারার জুস রপ্তানির অবারিত সম্ভাবনাকে কাজে না লাগানোর ফলে এ সম্ভাবনাময় শিল্পটি দিনে দিনে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
জানা যায়, পটিয়ার উৎপাদিত পেয়ারা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ। কেলিশহরের কাজী পেয়ারা ও কান্ঞননগরের পেয়ারা এখন পুরোধমে বাজারে। এই পেয়ারা একটানা পাওয়া যাবে অক্টোবরের শেষে পর্যন্ত।
পেয়ারা চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার পটিয়ার পেয়ারার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে টানা বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়া না ঘটলে তারা অনেক লাভবান হবে। কেলিশহর, পটিয়া রেল স্টেশন, কমল মুন্সির হাট ও রৌশন হাটের পেয়ারার বাজার ঘুরে দেখা যায়, লাল সালু কাপড়ে মোড়ানো ও কাঁদে করে ভাড়ে ভাড়ে পেয়ারার পসরা সাজিয়েবসে আছে বিক্রেতারা। আর সেই লাল সালু কাপড়ের মোড়ানো ব্যাগের পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায়। এভাবে শেষ পর্যন্ত বাজার থাকলে চাষিরা লাভবান হবে বলে জানান।
তবে ভয় তাদের প্রাকৃতিক বৃষ্টি। তারা অারো জানান, যারা আগাম লাখ লাখ টাকা দাদন নিয়ে বাগান কিনেছে তাদের মাঝে সবসময় ভয় বিরাজমান। কখন কি হবে। গহীন অরণ্য থেকে পেয়ারা বাজার পর্যন্ত আনতে প্রতি ভারে শ্রমিকদের ধোলাই খরচ দিতে হয় ১০০-১৫০ টাকা। তাই এবার পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আমরা বেশ লাভবান হবো বলে আশা করছি। এসময় তারা আরো জানান, সরকারি ভাবে এ এলাকার উৎপাদিত পেয়ারা সংরক্ষনের জন্য হিমাগার থাকলে আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্হার দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যেতো।পুরো বছর জুড়ে আমরা তা সংরক্ষন করে বাজারে বিক্রি করতে পারতাম।
পেয়ারা চাষিদের সাথে কথা বলে অারো জানা যায়, দেশে দু’জাতের পেয়ারা রয়েছে।একটি কাজি পেয়ার অন্যটি কান্ঞননগরীর পেয়ারা। কাজি পেয়ারা আকারে বড় হলে ও স্বাদ একটু কম, আর কান্ঞন নগরীর পেয়ারা সাইজে ছোট হলেও স্বাদ এবং পুষ্টিতে ভরপুর। চট্টগ্রামের পটিয়া ও কান্ঞন নগরের পেয়ারার মূল উৎপাদনস্হল।
পটিয়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পটিয়ার গহীন অরণ্যে ২-৩শত পেয়ারার বাগান গড়ে উঠেছে।তাছাড়া পাশ্ববর্তী চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। এখানকার চাষিরা পেয়ারা চাষ করে অনেকেই গুছিয়েছেন বেকারত্বের অভিশাপ। পেয়ারার পাইকারি ব্যাবসায়ী কামাল উদ্দিন জানান, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে ও রয়েছে পটিয়ার পেয়ারার কদর।মধ্য প্রাচ্যের দেশ সৌদিআরব,আরব আমিরাত সহ আরো কয়েকটি দেশে পেয়ারা রপ্তানি করছেন।
অপর দিকে পেয়ারা চাষিদের বেশ কিছু সমস্যা ও রয়েছে বলে জানান। তার মধ্যে পেয়ারা বিক্রির জন্য কোন নিদ্রিষ্ট স্থান নেই। নেই পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য সুব্যাবস্হা। এছাড়াও পেয়ারা চাষিরা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নামমাত্র মুল্যে আগাম সুবিধাভোগিদের মাঝে পেয়ারা বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে। এমতাবস্থায় পটিয়ার পেয়ারা চাষিরা সরকারি- বেসরকারি পর্যাপ্ত সুবিধা পেলে পাল্টে দিতে পারে অর্থনীতির চাকা।
তারা আরো জানান, এ জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠ নীতিমালা ও তার বাস্তবায়ন। পেয়ারা চাষিদের সহজশর্তে ঝণ প্রদান, পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্হাপন। এছাড়াও সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিলে এখানে উৎপাদিত পেয়ারাকে ঘিরে গড়ে তোলা যায় জুস ইন্ডাস্ট্রি বা ফুড প্রসেসিং জোন। এতে করে কর্ম সংস্হান সৃষ্টির পাশাপাশি পেয়ারার জুস, জ্যালি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং পটিয়ার পেয়ারা চাষের অবারিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে এমনটায় মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
