হবিগঞ্জে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট বিলম্বে আসায় বাড়ছে ঝুঁকি

নুর উদ্দিন সুমন নুর উদ্দিন সুমন

হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১:১৯ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০২০ 447 views
শেয়ার করুন

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গত ২১ এপ্রিল তাদের নমুনা দেন করোনা পরীক্ষার জন্য। শারীরিক কোন সমস্যা না থাকায় নমুনা দেয়ার পরও দিনরাত মাঠে ময়দানে কাজ করতে থাকেন জেলা প্রশাসক। এরই মাঝে ২৬ এপ্রিল রিপোর্ট আসে জেলা প্রশাসনের এডিএম, দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট ও নাজির করোনা আক্রান্ত। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যারা আক্রান্ত তাদের রিপোর্ট আসে প্রথম। নেগেটিভ রিপোর্ট পরে আসে। ফলে তিনি দিন রাত মাঠে ময়দানে কাজ করতে থাকেন। গত রবিবার সারাদিন চুনারুঘাট উপজেলায় দরিদ্রদের মাঝে ইফতার বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেন। পরদিন সোমবারও যখন বাহিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন তখন ১৩ দিন পর তিনি জানতে পারেন তার করোনা পজেটিভ। এই রিপোর্টে তিনি হতবাক হয়ে পড়েন। পরে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সোমবার পুনরায় নমুনা প্রেরণ করেন। ২৬ এপ্রিল করোনা পজেটিভ হওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম তার অন্যান্য সহকর্মীসহ সার্কিট হাউজে চলে যান আইসোলেশনে। কিন্তু বাসায় থাকা স্ত্রীকে নিয়ে তিনি হয়ে পড়েন উদ্বিগ্ন। শারীরিক কিছু সমস্যা থাকায় উৎকণ্ঠা বেড়ে যায় আরও বেশী। ২৭ এপ্রিল তারও নমুনা নেয়া হয় পরীক্ষার জন্য। প্রতিদিন ফলাফলের অপেক্ষার প্রহর গুনেন ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম। সোমবার তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রীর রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। হবিগঞ্জে করোনা পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে এভাবেই চলছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। আর ফলাফল আসতে বিলম্ব হওয়ায় ফলাফল নেগেটিভ মনে করেন অনেকেই। অবাধে চলছেন তারা। সরকারী সেবা দিতে গিয়ে হুমকিতে পড়েছেন অনেক কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্য এবং সহকর্মীরা। এতে করে বাড়ছে ঝুঁকি। সিলেটে ৪দিন পূর্বে ৭৮ জনের করোনা শনাক্তের রিপোর্ট আসলেও তা প্রকাশ করা হয় গত মঙ্গলবার দুপুরে।

মঙ্গলবার চুনারুঘাট থানার ওসিসহ ৫ পুলিশ সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তারা নমুনা দিয়েছিলেন ২৩ এপ্রিল। ৪দিন পূর্বেই তাদের রিপোর্ট সিলেটে চলে আসলেও সর্টিং সমস্যার জন্য আসতে বিলম্ব হয়েছে। ওই সময়ের মাঝে তারা পরিবারে সাথে মিশেছেন এবং সরকারী দায়িত্বও পালন করেছেন।

চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল জানান, স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে তিনি একত্রেই বসবাস করেন। এখন ফলাফল পেয়ে নিজের চেয়েও বেশী চিন্তা করছেন পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায় সাধারনত নেগেটিভ রিপোর্ট হলে আসতে বিলম্ব হয়। পজেটিভ রিপোর্ট হলে দ্রুত প্রেরণ করে। তাদের এই ধারনা মেনে নেয়ায় এখন শুধু ৫ পুলিশ সদস্যই নয়, একই সাথে থাকার অন্যান্য সদস্য এবং তাদের পরিবারও পড়েছে ঝুঁকিতে। হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এটি ল্যাবরেটরীর বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই। আমরা চাপ দিলে তারা বলছে মেশিনের ক্ষমতা এবং লোকবলের সমস্যার কথা। তিনি আরও বলেন, হবিগঞ্জের নমুনা সবচেয়ে বেশী প্রেরণ করা হয়। আমরা হবিগঞ্জে একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেছি। এখানে ল্যাব থাকলে এই সমস্যা হত না। এ ব্যাপারে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডাঃ আনিছুর রহমান জানান, আমরা সিলেট থেকে একটি লট ঢাকায় প্রেরণ করেছিলাম। তার ফলাফল আসতে বিলম্ব হয়েছিল। পরে রিপোর্টগুলোর কোড আন কোড করতে সমস্যা দেখায় বিলম্ব হয়।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের বিষয়ে তিনি জানান, হবিগঞ্জের মেইল ভূলে নারায়নগঞ্জ যাওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হয়। এখানে সম্ভবত নাম পরিবর্তনও ছিল। আমরা রিপোর্ট আরও দ্রুত প্রেরণের চেষ্টা করছি।