পটিয়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তত ৫৫ হাজার পশু

কাউছার আলম কাউছার আলম

পটিয়া, দক্ষিণ চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ৮:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২০ 663 views
শেয়ার করুন
পটিয়ায় আসন্ন কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ৫৫ হাজার গবাদি পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে খামারিদের কাছে।
 
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের মাঠ পর্যায়ের জরিপে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের কারণে বহু প্রবাসী এবার দেশে আসতে পারছেন না। ফলে চাহিদা খুব বেশি হবে না। চাহিদা যতটুকু হবে তা স্থানীয় গবাদি পশুই পূরণ করবে বলে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় মনে করছেন ।
 
খামারি হাসান বলেন, আমার মোট গরু ২৩টি। এর মাঝে ১৭টি দেশি গরু এবার কোরবানির জন্য রেখেছি। তবে বর্তমানে করোনার সময়ে কিছুটা চিন্তার মধ্যে আছি ভালো দাম পাবো কি না। ১৭টা গরু যদি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় না বিক্রি করতে পারি তাহলে খরচ উঠে আসবে না।
 
তিনি আরো বলেন, আমি শখের বসে দেশি গরু পালনে আগ্রহী হই। মূলত লক্ষ্য ছিল গরুর খাঁটি দুধ। পরে ভেবে দেখলাম দুধের গরুর পাশাপাশি দেশি জাতের গরু বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে লালনপালনের মাধ্যমে কোরবানি উপযোগী করে যদি বিক্রি করা যায় তবে হয়তো কিছুটা লাভ হতে পারে। সেই থেকেই প্রতি বছর কিছু গরু বিক্রি করে আসছি।
 
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জপু চক্রবর্তী জানান, যতগুলো আমরা তালিকায় উল্লেখ করেছি এর মিনিমাম তিন থেকে চারগুণ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারির সংখ্যা এ তালিকার বাইরে রয়ে গেছেন। অর্থাৎ যে সকল ক্ষুদ্র খামারি পরিবারিকভাবে গরু-ছাগল পালন করেন। কোরবানির পশুর মধ্যে রয়েছে- দেশি এবং শংকর জাতের গরু। আর ছাগলের মধ্যে রয়েছে দেশি ব্ল্যাক-বেঙ্গল জাতের ছাগল।
 
অনেক খামারি আমাদের বলে রেখেছেন- কোনো ক্রেতা গরু কিনতে আগ্রহী হলে যেন আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেই। সে লক্ষ্যেও আমরা কাজ করছি। ফলে গরুর ক্রেতারা খামারিদের কাছে থেকে অগ্রিম গরু কিনতে পারছেন। এতে করে করোনার সংক্রমণের স্বাস্থ্যবিধির দিকটিও রক্ষা পাচ্ছে বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদের এ কর্মকর্তা। তবে তিনি আশংকা করছেন এবার করোনার কারণে কোরবানি দাতার সংখ্যাও কমতে পারে।
 
কোরবানিকে কেন্দ্র করে আমরা খামারিদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেছি। যাতে তারা আমাদের আধুনিক পদ্ধতির পরিচর্যা অনুসরণ করে গবাদিপশু বিক্রয়ে ন্যায্য মুনাফা লাভ করতে পারেন। এ জন্য আমারা উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে চলেছে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জপু চক্রবর্তীর।
 
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদকে ঘিরে পটিয়ায় ৫৫ হাজারেরও বেশি উপযোগী গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া মজুত আছে। এই ৫৫ হাজার পশুর মাঝে রয়েছে গরু মোটাতাজাকরণ খামার, ছাগলের খামারসহ অসংখ্য প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারি। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারি মানে যারা মাত্র ২/১টা গরু শখ করে লালনপালন করেন এবং কোরবানির ঈদসহ সুবিধাজনক সময়ে ভালো দামে বিক্রি করেন।
 
তাদের মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ২৩,৩৪৪টি, বলদ ৯২১৯টি, মহিষ ৩৫৩৫টি, ছাগল ৭৫৫১টি, ভেড়া ৩৯০৭টি ও গাভী ৪২১৬টি।
 
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে করোনার কারণে পটিয়া উপজেলায় বেশির ভাগ প্রবাসীরা আসছেন না। সে হিসেবে চাহিদাও কিছু কম হবে এবার। এছাড়াও প্রতি বছরের মতো ট্রাকবোঝাই করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে গরু আসবে। ফলে উপজেলায় কোরবানি পশুর কোনো অসুবিধা হবে না। বরাবরের মতো এবারও কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর যোগান বেশি রয়েছে বলে জানা যায় ।
 
এদিকে কোরবানির জন্য লালন-পালন করা গবাদি পশু নিয়ে দু:শ্চিন্তায় পটিয়ার খামারিরা। ঘনিয়ে আসছে ঈদুল আজহা। মুসলিম র্ধমাম্বলীদের বড় উৎসব ঈদুল আজহা মূলত কোরবানীর ঈদ নামেই বেশি পরিচিত। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে পশু খামারিদের দু:চিন্তা ততই বাড়ছে। প্রতিবছর রোজার ঈদের পরপরই কুরবানীর জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা গবাদি পশু ক্রয় করে নিয়ে যান। তবে এবার চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টো। কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলেও করোনার কারণে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখনো কেউ যোগাযোগ করেনি এই খামারিদের সাথে। ফলে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা।
 
বেশ কয়েকটি খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় , মূলত কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে তারা সারবছর গরু, ছাগল লালন-পালনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে থাকেন। করোনার কারনে এবার পশু গুলো সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন। এবার করোনার কারনে কিছুতেই দু:চিন্তা মুক্ত হতে পারছেনা তারা।
 
জানা যায়, প্রতি বছর কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা। গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত থাকেন।কোরবানি ঈদে উপজেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে গবাদিপশু চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় রফতানি করেছে উপজেলার খামরিরা। দেশে গেল বছর ভারত থেকে কোরবানির হাটে পশু কম আমদানি করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা ভালো লাভও করেছিল।
 
তাই এ বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার খামারি ও কৃষকরা। তবে এ বছরও ভারতীয় গরু না আসলে বেশ লাভবান হবে এমনটাই আশা করছেন তারা। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও গবাদিপশু লালনপালনকারীরা ভালো দামের প্রত্যাশায় রয়েছেন।