ভিনদেশে সফরে এসে কেমন কাটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ৯:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২২ 650 views
শেয়ার করুন

দেশের ভিভিআইপিরা যখন বিদেশে যান তখন তাঁরা কিভাবে থাকেন, কিভাবে যাপন করেন তাদের সময়, তাঁদের খাবার দাবারের ব্যবস্থাইবা কেমন থাকে- তাঁদের জীবনের এসব খুঁটিনাটি জানার আগ্রহ থেকে এই লেখাটির প্রয়াস।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ মার্চ হতে ১২ মার্চ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। ইউএইর প্রধানমন্ত্রী, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম এঁর আমন্ত্রণে তিনি এ সফরে আসেন।
তাঁর এই সফরের সময় তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল,পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী,বাণিজ্য মন্ত্রী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ শতাধিক সদস্য এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাবৃন্দ ছিলেন।

এই সফরের সময় হোস্ট কান্ট্রি ইউ এ ই প্রধানমন্ত্রীর আবাস স্থল আবুধাবির উপকণ্ঠের শাংগ্রিলা হোটেলে প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট ছাড়াও আরো চারটি প্রিমিয়ার সুইট এর ব্যয় বহন করে। এই ভিভিআইপিদের খাবারের খরচও স্বাগতিক দেশ বহন করে।প্রধানমন্ত্রীর আমিরাত অবস্থানকালে তাঁর গাড়ীর চালক ছিলেন প্রশিক্ষিত ও চৌকস আরব মহিলা চালক।

প্রধানমন্ত্রীর সফরের এক সপ্তাহ বা তারও পূর্বে নিরাপত্তাকর্মীদের অগ্রবর্তী দল তিনি এসে কোথায় থাকবেন, কোথায় নামবেন, কোথায় কোথায় যাবেন সব রেকি করে নেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে থাকে আরেকটি নিরাপত্তা টিম।

আবুধাবির উপকন্ঠের সাংগ্রিলা হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল সুইটে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সার্বক্ষণিক বাটলার থাকেন। বাটলারের সাথে তিনি নিজেই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে মিতাহারী হলেও সব সময় চান তাঁর ঘরে পর্যাপ্ত খাবার থাকুক। কারণ রাষ্ট্রীয় সফরে সময় সফরের খুঁটিনাটি দিকনির্দেশনা ও পরামর্শের জন্য তার সফরসঙ্গী মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, পার্সোনাল স্টাফরা তাঁর কক্ষে গেলে তিনি তাঁদের আপ্যায়ন করতে পছন্দ করেন।আতিথেয়তায় তিনি খুবই পারঙ্গম বলে জানা যায়।কক্ষে তাঁর পছন্দের চা আর্লি গ্রে টি রাখা হলেও এবার প্রধানমন্ত্রী সাথে আনা ইস্পাহানি চা, বিস্কুট বেশী ব্যবহার করেছেন।তাঁর সুইটে সব রকমের বাদাম, কুকিজ ও চকলেট রাখা থাকে।
প্রধানমন্ত্রী কর্মব্যস্ততার ফাঁকে অবস্থানস্থল সাংগ্রিলা হোটেলের সুরক্ষিত বীচে তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পুত্র কন্যাদের সাথে সময় কাটান। প্রধান মন্ত্রীর প্রেসিডেনশিয়াল সুইটে থাকার ও বসার ঘরে ৫ জায়গায় কেবলা’র নির্দেশনা রাখার এবং কমপক্ষে দুই স্থানে দুইটি কোরআন শরীফ রাখার নির্দেশনা দেয়া ছিল। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করেন।


খুবই সাদামাটা আটপৌরে জীবন যাপন করেন তিনি সবসময়। তাঁর কন্যা পুতুল পাবলিক প্রোগ্রামে শাড়িতে থাকলেও অন্য সময়ে থ্রি পিস বা ক্যাজুয়াল স্যুট পরে থাকেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শাড়িতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। স্বাভাবিক সময়ে তিনি তাঁর সফরসঙ্গীদের কক্ষে যেয়ে ভালমন্দ খোঁজখবর নেন, সবাইকে ডেকে ফটোসেশন করেন কিন্তু এবার কোভিডের কারণে এসব একেবারেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে আসা সফর সঙ্গীদের মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, নার্স এবং একজন মহিলা চিকিৎসকও ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নাগালে যাওয়া প্রতিটি খাবার এর পরীক্ষা ছাড়াও তারা তাঁর স্বাস্থ্য সুরক্ষার খুঁটিনাটি দিক গুলো দেখেন।

আমিরাত সফরের সময়ে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সব সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকতে দেখা গেছে। তার একটি দৃষ্টান্ত হলো ১১ মার্চ আমিরাতে নাগরিক সংবর্ধনায় মুহুর্মুহু করতালি আর শ্লোগানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখার শেষদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবেশটাকে একটু হালকা করার জন্য দর্শকদের উদ্দেশে টিপ্পনী কাটতে যেয়ে বললেন,”আপনাদের কেউ আমায় এখানে মা ডাকলেন,কেউ হাসু বুবু বললেন,কিন্তু কেউ দাদী নানী ডাকলেন না।আমি তো এখন সে পর্যায়ে চলে গেছি।”

তাঁর কথায় পুরো হল জুড়ে হাসির হররা বয়েছিল সেদিন। আশেপাশের চেহারাগুলোয় চোখ বুলিয়ে মনে হয়েছিল সবাই যেন তাদের নেতৃকে এভাবেই হর্ষোৎফুল্ল দেখতে চান।