প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রকাশ্যে বিভক্ত বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ
শাহীন আলম হৃদয় শাহীন আলম হৃদয়
বিশেষ সংবাদদাতা
প্রতিষ্ঠার পর থেকে শত ঝড়-ঝঞ্জাটের মধ্যেও মূল নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ থাকা সিলেটের বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ আজ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে প্রকাশ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সংগঠনের উপজেলা শাখার সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন পৃথক দুটি বলয় আজ দুপুরে পৃথক পৃথক ভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করেছে। সদ্য শেষ হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে দলের মধ্যে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটল সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে। দলকে দ্বিখন্ডিত করায় উভয় পক্ষ একে অপরকে দায়ী করে প্রকাশ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলয়কে বর্তমান সময়ের মোস্তাক চক্র বলে অভিহিত করে আলোচনা সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ সভাপতি।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে প্রাঙ্গনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে দলের নিজ অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে পুষ্প শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন সিলেট জেলা পরিষদ সদস্য, পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খসরুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জুবের আহমদ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর হোসেন রুনু, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আতিকুর রহমান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মুছব্বির, সহ দপ্তর সম্পাদক জহিরুল হক রাজু, সদস্য লুৎফুর রহমান ফয়ছল, সদস্য কাওছার আহমদ, সদস্য জয়নুল ইসলাম রফিক, সদস্য বেলাল আহমদ সহ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মিছিলসহকারে এসে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্প শ্রদ্ধা অর্পন শেষে দলের কার্যালয়ে আলোচনা সভা করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ দিপুর পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহমদ হোসেন বাবুল, সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন, সহসভাপতি ছালেহ আহমদ বাবুল, সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ হোসেন খান, দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমদ, সদস্য আছার উদ্দিন, সদস্য কামাল হোসেন, সদস্য মঞ্জুর আলম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবাদ আহমদ, চারখাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, শেওলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, মাথিউরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন, মোল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরুল ইসলামসহ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান বলেন, ৭৫ সালেও আওয়ামী লীগের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অনুসারী এবং যড়যন্ত্রকারী মোস্তাক চক্র ছিল। তখন মোস্তাক চক্র দেশে এবং দলে বিভাজন তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। আজও বঙ্গবন্ধুর অনুসারী এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দোসর ষড়যন্ত্রকারীরা আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে। তারা নানাভাবে আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। আজকে বিয়ানীবাজারেও আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে আওয়ামী লীগের ভিতরে আরেকটি আওয়ামী লীগের সৃষ্টি হচ্ছে। (তিনি সেক্রেটারীকে ইঙ্গিত করে বলেন) এই আওয়ামী লীগের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা কাদের সন্তান? কোথায় থেকে এসেছে?
সভায় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল অন্যান্য নেতারা বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগের এই বিভক্তির জন্য সেক্রেটারীকে দায়ী করে বলেন, সেক্রেটারী দলের দায়িত্বশীলদের সাথে যোগাযোগ না করে নিজ অনুসারীদের নিয়ে পৃথক ভাবে ফুল দিয়ে চলে গেলেন। এর মধ্য দিয়ে বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগকে তিনি প্রকাশ্যে দ্বিখন্ডিত করেছেন। তিনি চলেন ঢাকা থেকে আসা অদৃশ্য শক্তির ম্যাসেজে, ঢাকা থেকে যেভাবে ম্যাসেজ আসে তিনি তা মাইকিং করে প্রচার করেন। এখন সময় এসেছে ঢাকার অদৃশ্য নির্দেশ মুক্ত, রাজাকার মুক্ত বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ গড়ার।
সাধারন সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আওয়াল তাঁর বিরুদ্ধে দলকে বিভক্ত করার অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, কেউ যদি মনগড়া মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে উদর পিন্ডি বদুর গাড়ে চাপিয়ে দিতে চায়, তা তো আমি মেনে নিতে পারি না। উনারা পরিকল্পিত ভাবে আজকের এই অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। যা কখনো আমার কাম্য নয়। আমি চাই দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে সুসংগঠিত হয়ে পরিচালিত হউক। এজন্য যৌক্তিক ভাবে আমার যতটুকু ছাড় দেয়া সম্ভব আমি তা করতে প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন নির্বাচনের পর থেকে সভাপতি আমার ফোনকল রিসিভ করেন না। আমি বারবার কল দেই কোন রেসপন্স পাই না, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য আমি সভাপতিকে বারবার ফোনকল দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে সহসভাপতি আহমদ হোসেন বাবুল ভাইসহ সভাপতির দলীয় ঘনিষ্টজনদের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি বলেছি। উনারা বলেছেন সভাপতির সাথে যোগাযোগ করে জানাচ্ছেন, কিন্তু পরবর্তীতে আর কেউ কিছু জানান নাই। তাই আজ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তা পালন করতে হবে, এজন্য দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে আমি গিয়েছি, যারা উপস্থিত ছিলেন তাদেরকে নিয়ে কর্মসূচী পালন করে এসেছি।
বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগের এই প্রকাশ্য বিভক্তিতে দলের ত্যাগী তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করেছে। অনেকে এই বিভক্তির জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার অনমনীয় খায়েশকে দায়ী করছেন।
উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নিবাচনে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। তন্মধ্যে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। নির্বাচনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান দলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আবুল কাশেম পল্লব ফের বিজয়ী হন। সাধারন সম্পাদক মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল প্রতিদ্বন্ধিতায় থেকে ৩য় স্থান অর্জন করলেও সভাপতি আতাউর রহমান খানের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। নির্বাচন কালীন সময় থেকে সৃষ্ট বিভক্তি প্রথম বারের মতো বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগকে প্রকাশ্যে বিভিক্ত করল।